Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
বিজ্ঞপ্তিও ঝুলিয়েও প্রবেশে বাধা

নিজ ভূমেই পরবাসী হাওড়া সেচ দফতর

প্রায় পাঁচ বিঘা জমির উপরে বাংলো। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা চৌহদ্দি। লোহার গেট। পাঁচিলের গায়ে বড় বড় করে লেখা, ‘এই বাংলো সেচ দফতরের সম্পত্তি। দফতরের হাওড়া ডিভিশনের বিনা অনুমতিতে এর ভিতরে প্রবেশ আইনত দণ্ডনীয়’।

সঙ্কট: সেচ দফতরের এই বাংলো ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

সঙ্কট: সেচ দফতরের এই বাংলো ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

প্রায় পাঁচ বিঘা জমির উপরে বাংলো। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা চৌহদ্দি। লোহার গেট। পাঁচিলের গায়ে বড় বড় করে লেখা, ‘এই বাংলো সেচ দফতরের সম্পত্তি। দফতরের হাওড়া ডিভিশনের বিনা অনুমতিতে এর ভিতরে প্রবেশ আইনত দণ্ডনীয়’।

তবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বেআইনি অনুপ্রবেশ আটকাতে গিয়ে খোদ সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের লোকজনই ঢুকতে পারছেন না এখানে। বাংলোয় ঢোকা তো দূরের কথা, এখান থেকে বিতাড়িত হতে হয়ে‌ছে তাঁদের। বাধ্য হয়ে এখানকার নিরাপত্তারক্ষীকে অন্যত্র বহাল করেছে হাওড়া ডিভিশন। চুরির ভয়ে বাংলো থেকে জিনিসপত্রও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই চিত্র সেচ দফতরের পসপুর বাংলোর।

বাংলোটি সেচ দফতরের আমতা সাবডিভিশনের মালিকানাধীন হলেও, এটি তৈরি হয়েছে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার রসিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। দামোদরের পূর্বপাড়ে বাংলোটি করা হয়েছিল বাঁধ পর্যবেক্ষণের জন্য। বাংলোটি সুসজ্জিত। এখানে বাগানবাড়ি, পুকুর সবই আছে এখানে। সেচ দফতরের মতে সংস্কার করলে পর্যটকদের ভাড়া দিয়েও আয় হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভূতুড়ে আকার নিয়েছে পুরো এলাকা। পুকুর মজে গিয়েছে। পাঁচিল বা বাংলোর দেওয়াল রঙ করা হয়নি। গেটে তালা ঝুলছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংস্কার না করার ফলে এখানে রাতে সমাজবিরোধীদের আড্ডা বসে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কর্তাদের অভিযোগ, রসিদপুর এলাকার কিছু লোকজনের বাধায় বাংলোটি সংস্কার করা যাচ্ছে না। এমনকী বাংলো থেকে কর্মীদের বিতাড়িত করার মূলেও তারা। সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশন সূত্রে খবর, সমস্যার শুরু বছর দুই আগে। উদয়নরায়ণপুরে সেচ দফতরের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করতে আসার কথা ছিল সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে বাংলোটির সংস্কারে হাত দেয় সেচ দফতর। কিন্তু তা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে তারা। সেচ দফতরের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু বাসিন্দা কাজ করতে বাধা দেন। বাংলোর গাছচুরির অপবাদ দিয়ে সংস্কারের কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে। তাঁদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ নিয়ে গিয়ে ওই কর্মীদের মুক্ত করা হয়।

সেচমন্ত্রী ওই সময়ে উদয়নারায়ণপুরে এলেও, পসপুরে আসেননি। তিনি অন্যত্র বৈঠক সেরে ফিরে যান। কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে পসপুর বাংলোর ধারে কাছে আর ঘেঁষেনি সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশন। উল্টে, সেখান থেকে আসবাবপত্র, জেনারেটর সরিয়ে আনা হয় পেঁড়ো বাংলোতে। মান্দারিয়া খালের ধারে উদয়নারায়ণপুরের পেঁড়োতেও হাওড়া ডিভিশনের একটি বাংলো আছে। পসপুর থেকে নিরাপত্তা রক্ষীকে সরিয়ে এনে পেঁড়োয় বহাল করা হয়েছে। সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের এক কর্তা জানান, স্থানীয় মানুষ বাধা না দিলে বাংলোটিকে সুন্দর করে সাজানো যেত। সমস্যার কথা জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ককে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন ঘটনা মানা যায় না। ওই বাংলো থেকে যাতে সেচ দফতরের কর্মীরা বিনা বাধায় কাজ করতে পারেন সে ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bungalow Howrah Division Irrigation Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE