Advertisement
E-Paper

নোট নিয়ে দুর্ভোগ ডাকঘরেও

দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলল না শনিবারেও! বাতিল ৫০০ এবং ১০০ টাকা নোট বদলানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং এটিএমের মতোই এ দিন ডাকঘরে গিয়েও গলদঘর্ম হতে হল দুই জেলার অসংখ্য মানুষকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
মশাটের ডাকঘর। — দীপঙ্কর দে।

মশাটের ডাকঘর। — দীপঙ্কর দে।

দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলল না শনিবারেও!

বাতিল ৫০০ এবং ১০০ টাকা নোট বদলানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং এটিএমের মতোই এ দিন ডাকঘরে গিয়েও গলদঘর্ম হতে হল দুই জেলার অসংখ্য মানুষকে। কোথাও কোথাও মানুষ বাতিল নোট জমা দিতে বা বদলাতে পারলেও অনেককেই ফিরতে হল বিধ্বস্ত চেহারায়। কারণ, ডাকঘরে টাকা শেষ! গ্রাহকদের ক্ষোভ, ডাকঘরে বহু গরিব মানুষ টাকা রাখেন। সময়মতো টাকা না পেয়ে তাঁরা বিপাকে পড়ছেন। সংসার চালানো দায় হচ্ছে।

শনিবার বাতিল নোট বদলানোর তৃতীয় দিনে হুগলির আরামবাগ মহকুমার মুখ্য ডাকঘর ছাড়া বাকি ২০টি উপ-ডাকঘরের কোথাও থেকে টাকা দেওয়া হল না। দুপুর ১২ টা নাগাদ আরামবাগ ব্লক অফিস সংলগ্ন উপ-ডাকঘরে গিয়ে দেখা গেল, নাম এবং পরিচয়পত্র নথিভুক্ত করে সকলকে বলা হচ্ছে পরের দিন মাথাপিছু ২০০০ টাকা করে বদল করা হবে। মানুষের ক্ষোভের আঁচ পেলেই পোস্টমাস্টার চেয়ার ছেড়ে গ্রাহকদের সঙ্গে আন্তরিক হওয়ার চেষ্টা করছেন!

মহকুমা মুখ্য ডাকঘরের পোস্টমাস্টার কাজলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “যা চাইছি সেই অনুপাতে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। আর যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, প্রায় সবটাই ২০০০ টাকার নোট। তাই উপ-ডাকঘরগুলি অসুবিধায় পড়েছে। গ্রামের ওই সব ডাকঘরগুলিতে অধিকাংশ মানুষই ছোট অঙ্কের নোট চাইছেন। আমরা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ছোট নোট চেয়েছি। জেলার মুখ্য পোস্টমাস্টারকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’’

\

চুঁচুড়ায় বন্ধ ডাকঘরের এটিএম।— নিজস্ব চিত্র।

শুধু আরামবাগ নয়, গোটা জেলাতেই উপ-ডাকঘরগুলির একই চিত্র। জেলায় ৩৮টি উপ-ডাকঘর রয়েছে। এ ছাড়াও আছে মহকুমা ও জেলা ডাকঘর। জেলার মুখ্য পোস্টমাস্টার হারাধন দাস জানান, চাহিদা অনুযায়ী টাকা মিলছে না। বৃহস্পতিবার প্রথম দিন ২ কোটি টাকা চেয়ে তাঁরা মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। শুক্রবার টাকাই পাইনি। শনিবারের জন্য ন্যূনতম চাহিদা ছিল দেড় কোটি টাকা। পাওয়া গিয়েছে ৯০ লক্ষ টাকা।

ডাকঘর থেকে পাওয়া তথ্যেই স্পষ্ট, বাতিল নোট বদলের তৃতীয় দিনেও ডাকঘরের ভোগান্তি থেকেও মানুষের মুক্তি মেলেনি। পান্ডুয়া ব্লকের বিভিন্ন ডাকঘরে এ দিন ঢুঁ মেরে দেখা গেল, বাতিল নোট পাল্টে দেওয়া হচ্ছে না। তবে নিজেদের অ্যাকাউন্টে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার জমা দিয়েছেন অনেকে। পান্ডুয়ার জামগ্রামের বাসিন্দা বাণী নন্দী বলেন, ‘‘সংসার চালানোর টাকা নেই। ডাকঘরে টাকা তুলতে গিয়ে ফিরে এসেছি। কী করে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না।’’ মণ্ডলাই গ্রামের বাসিন্দা উৎপল নাথও বলেন, ‘‘ডাকঘর বলছে, টাকা এলে দেওয়া হবে। কিন্তু কবে, সেটা কেউ বলছেন না।’’

ডাকঘরে মেয়াদি আমানতের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও টাকা তুলতে পারছেন না চুঁচুড়ার রামমন্দিরের বাসিন্দা সুনীল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘সামনেই ভাগ্নির বিয়ে। কেনাকাটার জন্য টাকাটা জরুরি। কিন্তু ডাকঘর বলছে, টাকা নেই।’’

এ দিন ভিড় ছিল গ্রামীণ হাওড়ার উপ-ডাকঘরগুলিতেও। সেখানে যেমন টাকা জমা নেওয়া হয়েছে, তেমনই টাকা তুলতেও পেরেছেন গ্রাহকেরা। শুক্রবার থেকে বাগনান উপ-ডাকঘরে জমা পড়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। গ্রাহকেরা তুলতে পেরেছেন ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পুরনো নোটও জমা দিয়েছেন তাঁরা। গ্রাহক নন, এমন যাঁরা পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট এখানে বদল করতে এসেছিলেন, তাঁদের এখানে গ্রাহক করে নেওয়া হয়। তবে, বেশির ভাগ গ্রাহককেই দেওয়া হয়েছে ২০০০ টাকার নতুন নোট। একই চিত্র উলুবেড়িয়া উপ-ডাকঘরেরও। সাঁকরাইল উপ-ডাকঘরে অবশ্য গ্রাহকদের ১০০ টাকার নোট দেওয়া হয়েছে।

তবে, গ্রামীণ এলাকার শাখা ডাকঘরগুলিতে তেমন ভিড় ছিল না। অনেক শাখা ডাকঘরে আবার কত জন গ্রাহকের টাকা জমা নেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। যেমন, বাগনানের কল্যাণপুর শাখা ডাকঘর। এখানে ঘোষণামতো বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে মাত্র ১০ জন গ্রাহকের বাতিল নোট জমা নেওয়া হয়।

বিভিন্ন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ জানান, টাকার জোগান স্বাভাবিক হলেই পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে চলে আসবে। কিন্তু সেই দিন কবে আসবে, সেটাই প্রশ্ন গ্রাহকদের।

post office money ATM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy