কাশেম কালিন্দর
আরপিএফের হাতে বেড়ধক মার খেয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠল পান্ডুয়ায়। এই নিয়ে বুধবার রাত থেকে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পান্ডুয়া স্টেশন চত্বরে। অশান্তি এড়াতে এলাকায় পৌঁছে যায় পুলিশ।
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পান্ডুয়ার সাতঘড়িয়া খারাজিপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ কাশেম কালিন্দরকে (৪৬) মঙ্গলবার বিকেলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পান্ডুয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্ধার করেন বাড়ির লোকজন। বুধবার বিকেলে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের মা মদিনা বিবি আরপিএফ কর্মী সত্যজিৎ চৌরাসিয়ার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আরপিএফ অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে। অভিযুক্ত ওই কর্মী মগরায় কর্মরত। ব্যান্ডেল থেকে বৈঁচি পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনে তাঁর ‘ডিউটি’ পড়ে। বৃহস্পতিবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে হাওড়া জিআরপি-র এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়নি।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি কাজি নাসিরুদ্দিন নামে ধনেখালির এক তৃণমূল নেতাকে থানার লকআপে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তিন জন পুলিশ কর্মী গ্রেফতার হয়। চুঁচুড়া আদালতে সেই মামলা চলছে।
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশেম লিলুয়ায় একটি লোহা কারখানায় কাজ করতেন। প্রায় দিনই পান্ডুয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঘুমোতেন। তাঁর পরিবারের দাবি, শরীর খারাপ থাকায় গত কয়েক দিন তিনি কাজে যাননি। মঙ্গলবার সকালে ডাউন চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে শেডের তলায় শুয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় তাঁকে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যেতে বলেন আরপিএফ কর্মীরা। কাশেম অস্বীকার করায় তাঁকে মারধর করা হয়। বিকেল তিনটে নাগাদ ফের আরপিএফ চৌকিতে নিয়ে গিয়ে ওই কনস্টেবল বেধড়ক মারধর করেন তাঁকে। তার পরে প্ল্যাটফর্মে এনে শুইয়ে দেওয়া হয়। সেখানে শুয়ে কাতরাতে থাকেন কাশেম। বিকেলে দিদি সাহানা বিবি কাশেমকে প্ল্যাটফর্মে ওই অবস্থায় দেখে বাড়ির লোকজনকে খবর দেন। তাঁকে উদ্ধার করে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই দিন তাঁর মৃত্যু হয়।
সেই খবর চাউর হতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরপিএফের অফিসাররা মৃতের বাড়ির লোকজনকে পান্ডুয়া স্টেশনে তাঁদের দফতরে ডেকে পাঠান। তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। গোলমালের আশঙ্কায় জেলার একাধিক থানার আইসি, ওসি-সহ পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় ওই স্টেশনে। জিআরপি এবং আরপিএফের অফিসাররাও আসেন। মগরার আরপিএফ ইনস্পেক্টর এস টিকাদার বলেন, ‘‘ওই যুবককে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। তিনি শোনেননি। তাই ওঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়। কেউ মারেননি।’’ আরপিএফের একাংশের অভিযোগ, ওই যুবক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। আরপিএফ যাই বলুক, লোকজনের অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্তে প্রতিদিনই গাঁজা-হেরোইনের আসর বসে। সে সবের দিকে জিআরপি বা আরপিএফের নজর নেই। অথচ নিরীহ ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করা হল। আরপিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। কিছু দিন আগে মহিলা কামরায় ওঠার ‘অপরাধে’ উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটর স্টেশনের মাঝে এক যুবককে চলন্ত ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এক মহিলা আরপিএফ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy