Advertisement
০৫ মে ২০২৪
নেই নজরদারি, বর্ষায় ভোগান্তির আশঙ্কা

প্লাস্টিকে মুখ ঢেকেছে নিকাশি নালা

উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের আশ্বাস, ‘‘প্লাস্টিক রুখতে অভিযান ফের শুরু হবে।’’ কিন্তু তা কবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শহরবাসীর। তবে, উত্তরপাড়ার এক পুরকর্তা মানছেন, ‘‘এখন দেশে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের লবি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।

স্তব্ধ: উত্তরপাড়া এলাকার একটি নালা ভরেছে প্লাস্টিকে। নিজস্ব চিত্র

স্তব্ধ: উত্তরপাড়া এলাকার একটি নালা ভরেছে প্লাস্টিকে। নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৩
Share: Save:

প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এক সময় পুরস্কার পেয়েছিল উত্তরপাড়া পুরসভা। শহরের নানা প্রান্তে এখনও চোখে পড়ে প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে হোর্ডিং। কিন্তু পুরসভার অভিযানের লাগাম আলগা হতেই শহরে ফের রমরমিয়ে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। আর সেই কারণে এই বর্ষায় ফের জলবন্দি হওয়ার আশঙ্কা করছেন শহরবাসীর একটা বড় অংশ। কারণ, নিকাশি নালার প্রধান শত্রু প্লাস্টিক। তার সঙ্গে রয়েছে শোলা-থার্মোকলের নানা জিনিসও।

উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের আশ্বাস, ‘‘প্লাস্টিক রুখতে অভিযান ফের শুরু হবে।’’ কিন্তু তা কবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শহরবাসীর। তবে, উত্তরপাড়ার এক পুরকর্তা মানছেন, ‘‘এখন দেশে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের লবি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। কেন্দ্র বা রাজ্যের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণের কোনও দিশা আপাতত নেই। তাই একমাত্র অস্ত্র মানুষের সচেতনতা বাড়ানো। মানুষ ব্যবহার না করলে উৎপাদন কম হবে।’’

তবে, শুধু উত্তরপাড়াই নয়, হুগলির গঙ্গা পাড়ের ১১টি পুর এলাকাতেই প্লাস্টিকের রমরমা বেড়েছে। হাট-বাজার, দোকান— সর্বত্র অবাধে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ। এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষের তেমন কোনও নজরদারি বা শাস্তির বিধান নেই বলে অভিযোগ। এমনকী, সরকারি অফিস, আদালত বা হাসপাতালেও প্লাস্টিকের ব্যবহারে লাগাম পরছে না। অনেকেই বলছেন, প্লাস্টিকের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে চলছে শোলা-থার্মোকলের থালা-বাটি-কাপের ব্যবহার। মূলত অনুষ্ঠান-বাড়িতে সেই সব ব্যবহারের পরে তা আবর্জনা হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। সেখান থেকে এসে জমছে নিকাশি নালায়।

প্লাস্টিকের এই বাড়বাড়ন্তে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রুখতে পর্ষদের ভূমিকা ইদানীং চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ। অথচ, পর্ষদের হাতে রয়েছে ‘রাজ্য প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা কমিটি’। ২০০৮ সালে বাম আমলে ওই কমিটি তৈরি করা হয়। রাজ্যের পরিবেশ দফতর সেই সময় প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জরিমানা চালু করে। জরিমানা থেকে প্রাপ্ত অর্থ পরিবেশ রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু তার পরে সেই কাজে গতি কমে যায় বলে অভিযোগ। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, ৪০ মাইক্রন ঘনত্বের নীচে কেউ প্লাস্টিক ব্যবহার করলে পুরসভার হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো আইন রয়েছে। জরিমানা চালু হলে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে।

মাছ-মাংস থেকে ফল-ফুল বা যে কোনও সাধারণ জিনিস কিনতে গেলেও দোকান থেকে পাতলা প্ল্যাস্টিক ক্যারিব্যাগ অনায়াসেই মিলে যায়। জিনিস নিয়ে বাড়ি ফেরার পরে সেই ক্যারিব্যাগ ফেলে দেওয়াই দস্তুর। এই ব্যবহারে লাগাম পরাবে কে, সেটাই প্রশ্ন। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক পরিবেশ সচেতন মানুষও।

উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মঞ্জুশ্রী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিগারেটের মতো অন্তত হাসপাতাল এবং সরকারি অফিসকে প্লাস্টিক বর্জিত এলাকা করা হোক। তা হলে ছোট অংশ হলেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে।’’ শেওড়াফুলির এক ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘প্রথমে জরুরি প্লাস্টিকের উৎসই রুখে দেওয়া। উৎপাদন বন্ধ হলে মানুষ কোথায় পাবেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Pollution Garbage Drainage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE