Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সব শাগরেদ ধরা পড়বে তো, প্রশ্ন

চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের সেই ‘ডন’, বছর পঁয়ত্রিশের টোটন বিশ্বাস ধরা পড়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। তবু স্বস্তিতে নেই স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, সকলেই তাকে ডরায়।

উদ্ধার: ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে এই সব আগ্নেয়াস্ত্র। ছবি: তাপস ঘোষ

উদ্ধার: ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে এই সব আগ্নেয়াস্ত্র। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

জিটি রোড থেকে রেললাইনের ধারে তার সুপুরি কারখানা পর্যন্ত বিস্তৃত গলি সিসিক্যামেরায় মোড়া ছিল এই সে দিনও। কারখানায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে চেয়ারে বসে পা দোলাতে দোলাতে সিসিটি‌ভি-তে চোখ রাখত সে। নতুন কেউ এলাকায় ঢুকলে তার সশস্ত্র শাগরেদরা আগাপাশতলা তল্লাশি চালিয়ে তবে প্রবেশের অনুমতি দিত।

চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের সেই ‘ডন’, বছর পঁয়ত্রিশের টোটন বিশ্বাস ধরা পড়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। তবু স্বস্তিতে নেই স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, সকলেই তাকে ডরায়। তার বহু শাগরেদ এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। ফলে, তাদের কাছে থাকা অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। টোটনের সেই শাগরেদরা যতদিন না ধরা পড়ছে, ততদিন নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না স্থানীয়রা।

রবীন্দ্রনগরের এক মহিলার কথায়, ‘‘টোটন স্থানীয় লোকেদের উপরে অত্যাচার করত না। কিন্তু ওর জন্য দুষ্কৃতীদের আনাগোনা লেগে থাকে। ওদের হাতে হাতে বন্দুক-পিস্তল। পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিক।’’ স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনগরে টোটনের সাম্রাজ্য চলে। দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। পুলিশ সবাইকে ধরুক। সব অস্ত্র উদ্ধার করুক। টোটন যাতে সহজে ছাড়া না পায়, তা নিশ্চিত করুক। ছাড়া পেলেই কিন্তু ফের দাদাগিরি শুরু হবে।’’

বিপুল অস্ত্র-সহ টোটনকে ধরার পরে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা অবশ্য স্বস্তিতে। তাঁরা মানছেন, টোটনকে ধরা তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ তাঁরা উতরোতে পেরেছেন। সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কথা মেনে নিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘‘আগেও গ্রেফতার হয়েছিল টোটন। পৌনে দু’বছর আগে জামিন পায়। তার পর থেকে লোকজনকে ভয় দেখিয়ে তোলাবাজি, ঠিকাদারি, বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম করছিল। টোটনের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সব পদক্ষেপই করা হবে। ওর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভীতি রয়েছে। সেই ভয়টাই আমরা কাটাতে চাইছি।’’

টোটন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ভাল ফুটবলার হিসেবে এলাকায় নাম ছিল। কিন্তু খেলা ছেড়ে সে দুষ্কৃতী দলে নাম লেখায় বাম জমানায়। রাজনৈতিক মহলের অনেকের দাবি, প্রাক্তন এক বাম সাংসদের হাত ধরে তার উত্থান। ওই শিক্ষক-নেতার সান্নিধ্যে শাসকদলের হয়ে ‘ভোট করানো’র দায়িত্ব ছিল তার। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হতেই টোটনও শিবির বদল করে। বর্তমান শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ে। বর্তমানে বাঁশবেড়িয়ার এক তৃণমূল নেত্রীর স্বামীর সঙ্গে তার ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে বলে শোনা যায়। চুঁচুড়ারই এক পরিবারের দুই বোনকে টোটন বিয়ে করে।

পুলিশ জানিয়েছে, টোটনের সুপুরি কারখানা ছোটখাটো একটি ফুটবল মাঠের সমান। তবে, সেই কারখানা নেহাতই দেখানোর জন্য। টোটন তোলাবাজিতে সিদ্ধহস্ত। খুন-খারাপিতে ওস্তাদ। তোলাবাজি, খুন, ডাকাতি, বেআইনি অস্ত্র রাখা-সহ বহু মামলায় সে অভিযুক্ত।

টোটনের সাম্রাজ্যে ‘অনধিকার প্রবেশ’-এর পরিণতি পুলিশ টের পেয়েছিল গত ১৩ জুলাই। ওই রাতে টোটন-সহ দুই সমাজবিরোধীকে ধরতে পুলিশ তার ডেরায় হানা দিলে দুষ্কৃতীরা গুলিতে জবাব দেয়। পরের দিন পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলে টোটনের দলবলের নেতৃত্বে কয়েকশো মানুষ পথে নামেন। অবরোধ, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপাদাপি, ট্রেনযাত্রীদের ভয় দেখানো, পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ— কিছুই বাদ থাকেনি। পুলিশ কমিশনার জানান, ওই ঘটনার পরে ড্রোন নিয়ে এলাকায় তল্লাশি চালানো হলেও দুষ্কৃতীদের ধরা যায়নি। কিছু সিসিক্যামেরা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

শনিবার রাতে অবশ্য টোটন এবং তার দুই শাগরেদ পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পারল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Don Chinsura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE