চরম বিস্ময়ে ডাক্তারের স্বগতোক্তি, ‘‘এখনও বেঁচে রয়েছে!’’ কিছুক্ষণ আগে রাস্তায় গাড়ির জ্যাম ছাড়াতে বিস্তর ঝামেলা হয়েছে বাচস্পতির। চিকিৎসকের কথায় তিরিক্ষি মেজাজে মুখ ভেংচে উঠলেন তিনি। ফাঁসির পরেও বেঁচে থাকা খুনের আসামি নিয়ে তিনি কী করবেন, তা নিয়ে তখন মহা সমস্যায় জেলার। এ নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি, যুক্তিতক্কো চলল বিস্তর।
সব মিটতে মিটতে প্রায় মাঝরাত। বড়বাবু এ বার হাঁক পাড়লেন, ‘‘যাদের নাইট ডিউটি আছে, দ্রুত চলে যাও।’’ শোনামাত্র গলদঘর্ম হয়ে সকলেই ছুটলেন ‘ডিউটি’তে।
মাসখানেক ধরে এ ভাবেই নাটকের মহড়া দিচ্ছেন রিষড়া থানার পুলিশকর্মীরা। কাজের ফাঁকে, ঘুম থেকে উঠে, নানা অভিযোগ সামলে থানায় ফিরে— সংলাপ মুখস্থ করার পালা চলছে। ওসি থেকে কনস্টেবল— সবার একই চেষ্টা, নাটক যেন জবরদস্ত হয়!
সারাদিনের ঝক্কি সামলে হঠাৎ নাটক করা কেন?
চন্দননগর কমিশনারেটের এক বছর পূর্তিতে বিভিন্ন থানা নানা কর্মসূচি নিয়েছে। মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ, খেলা, আঁকা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মাঝে নাটক অভিনয় করবেন রিষড়া থানার পুলিশকর্মীরা। নাটকের নাম— ‘একটি অবাস্তব গল্প’। শহরের বাঙ্গুর পার্ক এলাকার বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চলছে মহড়া। নির্দেশনায়— রিষড়ারই যুবক রূপম বসু।
কিন্তু পুলিশের মহড়া কি চাট্টিখানি কথা! সে দিন মহড়া সবে জমে উঠেছে। হঠাৎ এক অফিসারের মোবাইল বেজে উঠল। দু’টো ছেলের হাতে মার খেয়ে এক প্রৌঢ় নাকি মারা গিয়েছেন! অতঃপর যা হওয়ার তাই। সবাই ছুটলেন ঘটনাস্থলে। রিহার্সাল পণ্ড। শুধু কি তাই! কেউ হয়তো আসামি ধরতে গিয়েছেন। কেউ মোবাইল উদ্ধারে। তাঁদের ‘প্রক্সি’ দিতে হচ্ছে অন্যকে। রূপমের কথায়, ‘‘সবাইকে এক সঙ্গে পাওয়া সমস্যার। তবে সকলের চেষ্টা রয়েছে। রাত জেগেও রিহার্সালে চলে আসেন।’’
নাটকের সুবাদে অনেকেই ফিরছেন কৈশোরে। খুনসুটি, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে ঠোকাঠুকি চললেও সংলাপের সময় সবাই সিরিয়াস। সিভিক ভলান্টিয়ার দেবাশিস দাস, গৌতমকুমার দাস, সন্দীপ ঘোষরাও চেষ্টার কসুর করছেন না। নাটক নিয়ে আলোচনার জন্য ফেসবুক গ্রুপও খুলে ফেলেছেন ওসি প্রবীরবাবু। গ্রুপের নাম— ‘নট্ট কোম্পানি’।
কনস্টেবল অলককৃষ্ণ পাল নাটকে আসামির ভূমিকায়। বিষাদ-দৃশ্যে অভিনয়ের সময় তাঁর চোখে জল। বীরভূমের নানুরের এই বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘গ্রামে নাটক-থিয়েটার করেছি চুটিয়ে। সেই দিনগুলো মনে পড়ছে।’’ স্কুলে সরস্বতী পুজোয় নাটকে অভিনয়ের কথা শোনালেন সাব-ইনস্পেক্টর (নাটকে জেল সুপার) পুলক মণ্ডল। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদে। বর্ধমানের বাসিন্দা সাব ইনস্পেক্টর অতনু মাঝিও (নাটকে চিকিৎসকের ভূমিকায়) জানান, কিশোর বয়সে খান কতক নাটকে অভিনয়
করেছেন তিনিও।
কমিশনারেটের এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অম্লান ঘোষের কথায়, ‘‘কাজের চাপে পুলিশকর্মীদের সুকুমার বৃত্তি যেন হারিয়ে যায়, তার জন্যই এমন উদ্যোগ। ওঁরা যে ডিউটি সামলে অবসর সময়ে নাটক করছেন, এটা প্রশংসার।’’
আগামী বৃহস্পতিবার নাটক। তৈরি হচ্ছেন আইনরক্ষকরা।