Advertisement
E-Paper

পুলিশ সেজে বন্ধুদের সামনে অপহরণ ব্যবসায়ীকে

ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় এই শীতেও রাস্তায় তখন বেশ ভিড়। নিজের সোনার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ। এমন সময়ে একটি মারুতি ভ্যান এসে থামল তাঁর দোকানের সামনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৩১
সিসিটিভি-তে অপহরণের সেই দৃশ্য। (ইনসেটে) লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ। — নিজস্ব চিত্র

সিসিটিভি-তে অপহরণের সেই দৃশ্য। (ইনসেটে) লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ। — নিজস্ব চিত্র

রাত তখন সাড়ে ১০টা।

ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় এই শীতেও রাস্তায় তখন বেশ ভিড়। নিজের সোনার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ। এমন সময়ে একটি মারুতি ভ্যান এসে থামল তাঁর দোকানের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে এল তিন জন। যার মধ্যে এক জনের পরনে পুলিশের পোশাক।

গাড়ি থেকে নেমে তারা সোজা এগিয়ে গেল দোকান-মালিকের দিকে। কাউকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়ে তারা দোকান-মালিককে চেপে ধরে টেনে নিয়ে চলল গাড়ির কাছে। গাড়ির সামনে গিয়ে তাঁকে জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল তারা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফের গাড়ি থেকে নেমে সোনার দোকানের ওই মালিককে নিয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে গেল সামনে বড় রাস্তার দিকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা ভাবলেন, এটা পুলিশ ‘অপারেশন’। কিন্তু পরে জানা গেল, কোনও পুলিশি হানা নয়, পুলিশ সেজে অপহরণ করা হয়েছে ওই দোকান-মালিককে।

কোনও হিন্দি ছবির দৃশ্য নয়, তবে ক্যামেরা চলছিল। সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে শুক্রবার রাতে মধ্য হাওড়ার মঙ্গলাহাট এলাকার হাট লেনে ঘটা এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। পুলিশ জানায়, সিসিটিভি বসানো ছিল ওই জায়গায় একটি দোকানে। সিসি ক্যামেরার গোটা ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, অপহৃত ব্যবসায়ী লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ আদপে বিহারের গয়ার বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তিনি হাওড়ার রামেশ্বর মালিয়া লেনের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। হাট লেনে তাঁর একটি সোনার দোকান রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই রাতে যখন তিনি দোকান বন্ধ করার পরে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন, তখন একটি ভাড়া করা মারুতি ভ্যানে করে তিন যুবক এসে তাঁকে প্রায় জোর করে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু অপহরণ করা হচ্ছে দেখে ভয় পেয়ে মারুতি ভ্যানের চালক গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় ওই দুষ্কৃতীরা গাড়ি ছেড়ে হেঁটেই সামনে জিটি রোডের দিকে চলে যায়। এর পর থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত অপহৃতের আর খোঁজ মেলেনি।

এলাকার বাসিন্দা এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুরজ সিংহ বলেন, ‘‘লক্ষ্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভেবে প্রথমে আমরা কিছু বলিনি। পরে ঘটনাটা জানাজানি হলে পুলিশ আসে। তখন পরিষ্কার হয়ে যায় ওঁকে অপহরণই করা হয়েছে।’’

পুলিশ জানায়, রাতেই ওই দোকান-মালিকের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে সারা রাত হাওড়া স্টেশন-সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর করেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেশ রাই। এ দিকে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পারে, গয়ার এক প্রতিবেশীর সঙ্গে লক্ষ্মীনারায়ণের কেনা একটা ১৩ বিঘা জমি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গোলমাল চলছিল। ওই জমি কিনতে চেয়ে লক্ষ্মীনারায়ণকে চাপ দিচ্ছিল প্রতিবেশী অরবিন্দ দাস। অপহৃতের স্ত্রী ববিতা বলেন, ‘‘আমার স্বামী জমি না দিতে চাওয়ায় ওকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে চার মাস হাজত বাস করিয়েছিল অরবিন্দ। আজ কাউকে পুলিশ সাজিয়ে ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। কারণ ও হুমকি দিয়েছিল, যেমন করে হোক জমি রেজিস্ট্রির দলিলে সই করিয়ে নেবে।’’

পুলিশ জানায়, অপহরণকারীদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত অরবিন্দ নিজেই রয়েছে বলে লক্ষ্ণীনারায়ণের পরিবারের লোকজন চিহ্নিত করেছে। বাকি দু’জন অপহরণকারীর মধ্যে লম্বা এক ব্যক্তি পুলিশের পোশাক পরে ছিল এবং অন্য জন খানিকটা খুড়িয়ে চলছিল। তিন জনের খোঁজেই তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

পরিবারের লোকের কাছে এই ঘটনা জানার পরে রাতেই অরবিন্দের বাবা, সরকারি কর্মী মান্দিকা দাসকে এন্টালির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণে সাহায্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অপহরণের ঘটনাটি জমিজমা নিয়েই হয়েছে। অভিযুক্ত অরবিন্দকে ধরতে পুলিশের একটি দল বিহার গিয়েছে। আমরা অপহরণকারীদের অবস্থান জানতে পেরেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই অপহৃতকে উদ্ধার করা যাবে।’’

kidnap businessman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy