পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুপ্তিপাড়াকে গড়ে তুলতে স্থানীয়দের আর্জি দীর্ঘদিনের। সেই প্রকল্পের রূপটান দিতে প্রশাসনের তৎপরতাও শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রীশ্রী বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ মঠ ও এস্টেটের জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে জট।
হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি, প্রকল্পটি কার্যকর করতে হলে বৃন্দাবনচন্দ্র মঠকে জমি দিতে হবে। কিন্তু মঠ কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, খাতায়-কলমে অনেক জমি ইতিমধ্যেই সরকার খাস করে নিয়েছে। শ্রীশ্রী বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ মঠ ও এস্টেটের প্রশাসক স্বামী গোবিন্দানন্দ পুরী দাবি করেন, ‘‘গুপ্তিপাড়াকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে আমরা অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমাদের কিছু জমি সরকারের কাছে রয়েছে। সেগুলি ফেরত পেলে তবেই প্রকল্পের ব্যাপারে হ্যাঁ-না বলা যাবে না।’’
জমি খাস করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মঠ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার তার শুনানি ছিল। শুনানির পরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর জানিয়ে দিয়েছে, মঠের জমি খাস করানোর পদ্ধতিতে সরকারের দিক থেকে কোনও ভুল ছিল না।
গঙ্গা এবং বেহুলা নদীর তীরে অবস্থিত জনপদ গুপ্তিপাড়া এক সময় সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পীঠস্থান ছিল। বাংলার প্রথম বারোয়ারি থেকে শুরু করে টেরাকোটার কাজ সমৃদ্ধ মন্দির, প্রাচীন রথযাত্রা— কী নেই এখানে! গুপ্তিপাড়াকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে বাম আমল থেকেই গ্রামবাসীরা রাজ্য সরকারের কাছে বহু আবেদন জমা করেছেন। এস্টেট কর্তৃপক্ষও আর্জি জানান। সম্প্রতি এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয় রাজ্য সরকার। মাস কয়েক আগে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও এখানকার পর্যটন কেন্দ্রের কথা শোনা গিয়েছিল।
গত ২৪ অগস্ট চুঁচুড়ায় জেলাশাসকের দফতরে জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বাণীপ্রসাদ দাস, বিডিও-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এই প্রকল্প নিয়ে বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এলাকায় পরিবেশ বান্ধব পার্ক হবে। পর্যটন এলাকার প্রবেশ-পথ চওড়া করা হবে। হবে তোরণ। গাড়ি পার্কিং, ফুড কোর্ট, অনুসন্ধান কেন্দ্র থাকবে। পুরো প্রকল্পটির কেন্দ্রস্থলে থাকবে বৃন্দাবনচন্দ্র মঠ। সেখানেই হবে অতিথিশালা। মঠের পিছন দিকের দিঘি সংস্কার করে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। থাকবে শৌচাগার, পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। যে রাস্তা দিয়ে রথ যায় সেটির সংস্কার করা হবে। লাগানো হবে পর্যাপ্ত আলো। দেশকালী মন্দিরে হবে আর্ট-গ্যালারি।
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রকল্পটি চালু হলে বিডিও-র নেতৃত্বাধীন কমিটি দেখভাল করবে। পর্যটকদের থেকে যা আয় হবে, তা দিয়েই কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলের খরচ-সহ অন্য খরচ মেটাতে হবে। কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসেব পরীক্ষা করাতে হবে। বিডিও সমিত সরকার বলেন, ‘‘জেলার আধিকারিকরা এলাকা ঘুরে দেখেছেন। জমি হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy