Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
নিখোঁজ দুই

থিমের টানে পঞ্চমীতেই ঢল

ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় আবহাওয়া দফতর থেকে আগেই মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছিল। সেই বার্তা পেয়ে ফিরতে শুরু করেছিল মাঝসমুদ্রে থাকা ট্রলারগুলি। কিন্তু তার পরেও প্রাণহানি এড়ানো গেল না।

উদ্ধার করা হচ্ছে মা গঙ্গা ট্রলারকে। ইনসেটে, নিখোঁজ মৎস্যজীবী গৌতম মণ্ডলের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার করা হচ্ছে মা গঙ্গা ট্রলারকে। ইনসেটে, নিখোঁজ মৎস্যজীবী গৌতম মণ্ডলের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

ছবিটা বদলে গেল সন্ধের পরেই!

পঞ্চমীর সকালে আকাশের মুখ ভার। সঙ্গে টিপ টিপ বৃষ্টি। উৎসবের শহরে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকাই! গোমড়া মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। সন্ধে নামতেই তাঁদের মুখে হাসি! বৃষ্টি ধরতেই রাস্তায় ঢল। জগদ্ধাত্রীর শহর চন্দননগরের রাজপথে জ্বলে উঠল আলোর তোরণ, মাইকে বেজে উঠল গান। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য এ দিনই পুলিশের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হল ‘পুজো গাইড ম্যাপ’-এর।

কোন পথে কোন মণ্ডপ— এ সবেরই তত্ত্ব-তালাশ মিলবে ওই গাইড ম্যাপে। তবু পথ চলতে চলতে গোন্দলপাড়া কাছারিঘাট পুজো কমিটির মণ্ডপে গেলে অনেকেই চমকে যেতে পারেন। ছোট ছোট নৌকার ভিড়ে এখানে গঙ্গার পাড় যেন এক মৎস্য-বন্দর! যেন মাছ ধরতে নেমে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে নৌকাগুলি! গঙ্গার সঙ্গেই থিমকে জুড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের তরফে সুব্রত রায়চৌধুরী বলেন, “গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজোই আমাদের থিমের প্রধান উপজীব্য। মানুষের ভাল লাগার জন্যই এত কিছু।”

শেষবেলার প্রস্তুতিতে আকাশ বাধ সাধলেও উদ্যোক্তারা পিছু হটেননি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করেছেন মণ্ডপের কাজ। মানকুণ্ডু নতুনপাড়ার পুজো ৪২ বছরে পা দিয়েছে। এখানে এ বারের চমক ‘হাঁসের দেশে’। বাঁশের শ’য়ে শ’য়ে গোলাকার চাকতি লোহার তারে আটকে তৈরি করা হয়েছে বড় বড় হাঁস। উদ্যোক্তাদের মধ্যে আশিস চক্রবর্তী বলেন, “এই থিমের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে একটা বার্তা দিতে চাইছি। তারা যেন সমাজের যা কিছু ভাল, তা গ্রহণ করে। অশুভ কিছুতে প্রভাবিত না হয়। হাঁস তো দুধ খেয়ে জল ফেলে দেয়!”

শুধু নতুনপাড়া নয়, দর্শনার্থী টানার জন্য এখানে বেশির ভাগ মণ্ডপই থিমের জোয়ারে ভাসছে। চার দশকের গোড়ায় দাঁড়িয়ে আদি মহাডাঙা সর্বজনীনের পুজো। যে ভাবে নানা প্রান্তে কৃষিজমি লুঠ হচ্ছে, প্রোমোটারের থাবা বলছে, সেই সমস্যাকেই থিমে তুলে এনেছে তারা। মা জগদ্ধাত্রী যেন পৃথিবীর খাদ্যসঙ্কট মোচনে এসেছেন! মণ্ডপে বিশাল হাঁড়ি। সেই হাঁড়ি ঘিরে ধান-সহ নানা খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার। মায়াবী আলোয় ঢেকেছে গোটা পুরো চত্বর!

পরিবেশ-বান্ধব পুজো চন্দননগরের ঐতিহ্য। মধ্য চন্দননগরের গঞ্জ শীতলাতলার পুজোর থিম, ‘বকের পাখায় আলোক লুকায়’। দূষণের ঠেলায় শহরাঞ্চল থেকে বক এখন পিছু হটতে শুরু। পুকুর বুজে যাচ্ছে। বাড়ছে কংক্রিটের জঙ্গল। এই বাস্তব পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই উদ্যোক্তারা অজস্র বক দিয়ে তাঁদের থিম সাজিয়েছেন। অম্বিকা অ্যাথলেটিকের পুজোর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে সুপুরির আকারের গোলাকার মাটি দিয়ে জীবজন্তুর অবয়ব। হরিদ্রাডাঙা সর্বজনীন ৫১ বছরে পা দিয়েছে। মণ্ডপের থিম, ‘ফুলের দেশে পরীর বেশে’। শোলা দিয়ে অসংখ্য রংবাহারি ফুল আর পরী তৈরি করে মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছেন শিল্পীরা। অতীতে উত্তরবঙ্গ সাক্ষী থেকেছে ভূমিকম্পের। কৃষ্ণপট্টি সর্বজনীন সেই প্রকৃতির ক্ষয়ক্ষতিকেই এ বার তুলে ধরেছে মণ্ডপসজ্জায়।

শহর জুড়ে এত থিমের পুজো দেখতে গিয়ে মানুষ যাতে রাস্তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে না ভোগেন, সেই কারণেই এ দিন চন্দননগর রবীন্দ্রভবনে পুজোর ‘গাইড ম্যাপ’-এর উদ্বোধন করেন হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চন্দননগর পুরসভার মেয়র রাম চক্রবর্তী এবং এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক অশোক সাউ। পুলিশ এ বার ছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই চন্দননগরের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও (সদর) এবং গৌরব লাল (শিল্পাঞ্চল) তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ উর্দিবাজার, চূনাগলি, খানসামাপাড়া এলাকার ছেলেদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পেরে ভাল লাগছে।”

শুধু ‘গাইড ম্যাপ’ প্রকাশ করাই নয়, উৎসবকে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে আরও কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। শিশুরা যাতে হারিয়ে না যায় বা অভিভাবকদের হাতছাড়া হয়ে গেলে তারা যাতে বিপদে না পড়ে, সে জন্য পরিচয়পত্র তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র থেকেই সেই পরিচয়পত্র মিলবে। তৈরি করা হয়েছে একটি ‘ফোন-গাইড’ও। তাতে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রীর জন্য তৈরি পুলিশের বিশেষ কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর-সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর মিলবে। এ বারই প্রথম সাংবাদিকদের জন্য পুলিশ পরিচয়পত্রও তৈরি করল।

আয়োজন সম্পূর্ণ। উৎসবে মেতেছে চন্দননগর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

panchami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE