Advertisement
০৫ মে ২০২৪
সম্প্রীতির নজির আমতায়

মহরমের মিছিলের জন্য বন্ধ রাখা হল পুজোর মাইক

মহরম উপলক্ষে বেরিয়েছিল শোক মিছিল। সেদিন আবার দুর্গাপুজোর নবমী। শোকমিছিল যে পথে যাবে তাতে প্রথমেই পড়ে এলাকার অন্যতম প্রাচীন সর্বজনীন দুর্গাপুজো। মণ্ডপে তারস্বরে মাইকে বাজছে গান।

আমতার সিরাজবাটিতে মহরমের তাজিয়া। ছবি: সুব্রত জানা।

আমতার সিরাজবাটিতে মহরমের তাজিয়া। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
আমতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

মহরম উপলক্ষে বেরিয়েছিল শোক মিছিল। সেদিন আবার দুর্গাপুজোর নবমী। শোকমিছিল যে পথে যাবে তাতে প্রথমেই পড়ে এলাকার অন্যতম প্রাচীন সর্বজনীন দুর্গাপুজো। মণ্ডপে তারস্বরে মাইকে বাজছে গান। কিন্তু মহরমের মিছিল মণ্ডপের কাছে আসার আগেই মহরম কমিটির কাছ থেকে পুজো কমিটির কাছে বার্তা পৌঁছল ‘আমরা এসে গিয়েছি’। ফোন পেয়ে স্তব্ধ হল মাইক। পুজোমণ্ডপের সামনে দিয়ে নির্বিঘ্নেই গেল শোকমিছিল। মিছিলের লোকজন ধন্যবাদ দিলেন পুজো কমিটিকে। সাম্প্রদায়িকতাকে তুড়ি মেরে সম্প্রীতির মিলন মেলার নজির দেখা গেল হাওড়ার আমতায়।

মহরম উপলক্ষে সোমবার দেওড়া থেকে সৈয়দ শা আতেফ আলি আল কাদেরির অনুগামীরা একটি শোকমিছিল বের করেন। মিছিলে ছিলেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। দেওড়া থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে আমতা শহরে ঢোকার মুখেই শান্তিকানন ক্লাবের ৫১ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো। ঘড়িতে তখন বেলা আড়াইটা। শান্তিকানন ক্লাবের পুজো মণ্ডপ জমজমাট। মাইক বাজছে। কিন্তু মিছিল মণ্ডপের কাছে পৌঁছনোর ঠিক আগে সব মাইক বন্ধ হয়ে গেল। মিছিল উদ্যোক্তাদের তরফে সেখ একলাস আলি বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে শান্তিকানন পুজো কমিটির লোকদের কথা হয়েছিল, মণ্ডপের কাছে পৌঁছনোর আগে আমরা ফোন করে দেব। তারপরেই তাঁরা মাইক বন্ধ করে দেবেন। সেইমতো আমরা তাঁদের ফোন করি।’’

শান্তিকানন পুজো কমিটির সভাপতি তুষার কর সিংহ বলেন, ‘‘মিছিল মণ্ডপের কাছে আসার আগে আমাদের কাছে ফোন আসে। তারপরেই আমরা মাইক বন্ধ করি। কারণ মহাশোক মিছিলে নীরবতাই কাম্য।’’

প্রতি বছর এই মিছিল প্রায় চার কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে সিরাজবাটি মসজিদ তলা পর্যন্ত যায়। তার পরে ফের মিছিল ফিরে আসে দেওড়া গ্রামে। একলাস বলেন, ‘‘শহরের ভিতরে বেশ কয়েকটি পুজো হচ্ছে। আমাদের মিছিল যখন যাওয়ার কথা সেই সময়েই প্রতিটি মণ্ডপে সন্ধিপুজোর আয়োজন চলছে। ফলে আমরা আর মিছিল এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইনি। পরিক্রমার পথ সংক্ষিপ্ত করেই ফিরে আসি।’’

দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসব নিয়ে এই বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল থানা সমন্বয় কমিটির বৈঠকেই। এ বছর যেহেতু মহরম এবং পুজো গায়ে গায়ে তাই, মাসখানেক আগে আমতা থানায় ওই বৈঠকে দু’পক্ষই নিজেদের অনুষ্ঠানের আয়োজনে সংযমের অঙ্গীকার করেন। উভয়পক্ষই জানিয়ে দেয় পুজো ও মহরমকে কেন্দ্র করে কোনও অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসনকে সবরকম সহায়তা করা হবে। তুষারবাবু বলেন, ‘‘মহরম যাঁরা করেন তাঁদের অনেকের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। তাঁদের ধর্মাচরণে কোনও বাধা পড়ুক আমরা চাইনি। তাই মিছিল আসার সঙ্গে সঙ্গে সব মাইক বন্ধ করা হয়।’’ একলাসের কথায়, ‘‘দুর্গাপুজো একটা বড় উৎসব। তার উপর নবমীর সন্ধিপুজোর সময়ে আমাদের মিছিল করতে কোনও অসুবিধা হয়নি। পুজো কমিটির লোকজন সহযোগিতা করেছেন। পরিক্রমার পথ হয়তো সংক্ষেপ করতে হয়েছে। শান্তির চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।’’

সব কিছু নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ায় হাঁফ ছেড়েছে পুলিশ-প্রশাসনও। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, দশমীর পরের দিনে মহরমের তাজিয়া বেরিয়েছে। ফলে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু নবমীর দিনের মহাশোক মিছিল নিয়ে চিন্তা ছিল। কিন্তু দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক বোঝাপড়া পুলিশের সেই চিন্তা দূর করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

muharram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE