Advertisement
E-Paper

সিঙ্গুর জুড়ে প্রশ্ন আর হা-হুতাশ

ফের একবার সিঙ্গুর থেকে শিল্প-চাকরির দাবি ওঠায় শুধু বেড়াবেড়ির ওই যুবক বা মণিমোহনই নন, তাঁদের মতো খেদ প্রকাশ করলেন আরও অনেকে। তাঁরা এক দশকেরও বেশি আগে গাড়ি কারখানা ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। নিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১৮
আদৌ কি শিল্প আসবে এ তল্লাটে?

আদৌ কি শিল্প আসবে এ তল্লাটে?

চাকরির দাবিতে বাম ছাত্র-যুবদের নবান্ন অভিমুখী মিছিল তখন সবে যাত্রা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সে দিকে তাকিয়েছিলেন সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ির মধ্য ত্রিশের এক যুবক। সিঙ্গুর বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন তিনি। মিছিল দেখে তাঁর প্রশ্ন, আর কি কিছু হবে? আদৌ কি শিল্প আসবে এ তল্লাটে? এখনও কাজ খুঁজছেন তিনি।

প্রায় তীরে এসে তরী ডোবার অবস্থায় পড়েছিলেন মণিমোহন বাঙাল। টাটা প্রকল্পে কাজের সুযোগ এসেছিল সাহানাপাড়ার ওই যুবকের। তখন সিঙ্গুরের গোপালনগর হাইস্কুল থেকে সদ্য মাধ্যমিক পাশ করেছেন তিনি। বেলুড় শিল্পমন্দিরে প্রশিক্ষণের পর সোজা জামশেদপুরে টাটাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যান মণিমোহন। তাঁর কথায়, ‘‘টাটারা গিয়ে সিঙ্গুরের মানুষের বিস্তর ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিটা এখানকার মানুষ সেই সময় বুঝল না। সবাই রাজনীতি করে গেল। তৎকালীন সরকার জমি-আন্দোলন রুখতে পারেনি কেন? তাদেরই ছাত্র-যুবরা এখন মিছিল করে কী করবেন? আমরা তো অনেক মিছিল-মিটিং দেখলাম।’’

ফের একবার সিঙ্গুর থেকে শিল্প-চাকরির দাবি ওঠায় শুধু বেড়াবেড়ির ওই যুবক বা মণিমোহনই নন, তাঁদের মতো খেদ প্রকাশ করলেন আরও অনেকে। তাঁরা এক দশকেরও বেশি আগে গাড়ি কারখানা ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। নিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও।

সাহানাপাড়ারই দীপঙ্কর বেরা আবার টাটাদের জামশেদপুর এবং পুণে—দুই কেন্দ্রেই প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ-পর্বে তিনি মাসে ১৭০০ টাকা বৃত্তি পেতেন। প্রশিক্ষণ শেষে সিঙ্গুর প্রকল্পে ন্যানো গাড়ির ‘হেডলাইট’ বিভাগে কয়েক মাস কাজও করেন। কিন্তু তখন জমি-আন্দোলন চলছে পুরোমাত্রায়। তাঁর কথায়, ‘‘তখন প্রতিদিন গোলমাল। ভয়ে ভয়ে কাজ করতাম। ভেবেছিলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চোখের সামনে পরিস্থিতি বদলে গেল। মনটাও অস্থির হয়ে গেল। যে দিন টাটারা চলে যাওয়ার কথা ঘোষণা করল, বাড়ি ফেরাই মুশকিল হয়ে যায়।’’

কাজ হারিয়ে দীপঙ্কর অন্য সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়মতো বেতন না-পেয়ে সেই কাজ ছেড়ে এখন চাষাবাদ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘নিজে সংসার করিনি। চালাব কী করে? টাটারা চলে যাওয়ায় এ রাজ্যের ছেলেদের বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।’’ এ দিন মিছিল দেখে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আর কোনও সংস্থা কি এখানে আসবে? তবুও যে দাবি উঠছে, এটা মন্দের ভাল। কাজ চাই এখানে। ’’

গোপালনগরের শিবশঙ্কর বাঙালের আক্ষেপ, ‘‘কোনও শিল্পপতি এখানে আসতে চাইছে না। কে নিজের ক্ষতি করবে? আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তাম। টাটারা বলে সব ছেড়ে প্রশিক্ষণে যাই। বাড়ির সামনে চাকরি করব ভেবেছিলাম।

কী যে হল মাঝখান থেকে! আমার ঘুরে দাঁড়াতে ১১ বছর পার হয়ে গেল। এখন একটা ছোট ওষুধের দোকান করেছি।’’ মিছিল-মিটিংয়ে আর কিছু হবে না বলে তিনিও মনে করছেন।

সিঙ্গুর জুড়ে এ দিন শুধু হা-হুতাশ শোনা গিয়েছে। আর উঠেছে প্রশ্ন।

Singur Industry Mamata Banerjee Tata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy