খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে রেশন দোকানে অত চাল জোগানো যাবে কিনা, তা নিয়ে চলছিল জল্পনা। এ বার দেখা দিয়েছে নতুন চিন্তা। অত দোকান মিলবে কোথায়?
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর এই চিন্তা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। হাইকোর্ট বলেছে, খাদ্য সুরক্ষা আইনের নির্দেশ অনুসারেই নির্মাণ করতে হবে রেশন দোকান। কিন্তু আইনের নিয়ম মানলে এখনকার অধিকাংশ রেশন দোকান বাতিল হয়ে যাবে। সমস্যায় পড়েছে রেশন ডিলার এবং গ্রাহক, দুই পক্ষকেই।
নতুন আইন বলছে, দোকানের আয়তন হতে হবে ২০০ বর্গফুট। দোকান-সংলগ্ন গুদামঘরের মাপ হতে হবে ৪০০ বর্গফুট। সব মিলিয়ে রেশন দোকানের আয়তন হতে হবে ৬০০ বর্গফুট। রেশন ডিলারদের উদ্দেশে রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতর এই নির্দেশ জারি করে। যদিও এই নির্দেশ কলকাতার রেশন দোকানগুলির জন্য নয়। কলকাতা বাদে রাজ্যের সব জেলার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। ডিলারদের সংগঠন ‘এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে যায়। গত বৃহস্পতিবার মামলার রায়ে সরকারি নির্দেশকেই মান্যতা দিয়ে হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে, এ বিষয়ে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। তার তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি রেশন দোকান নির্দিষ্ট আয়তনে আনতে হবে।
এই রায়ের পর শুক্রবার ডিলাররা জানিয়েছেন, সরকারের কাছে তাঁরা আবেদন জানাবেন, দোকান থেকে অন্তত ১ কিলোমিটার দূরে যেন তাঁদের গুদাম তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। আর সময় দিতে হবে ছয় মাস। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দোকান ও গুদামের দূরত্বের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিলেও, ছয় মাস সময় দিতে রাজি নন। ‘‘আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ডিলারদের নির্দিষ্ট মাপের দোকান দেখাতে হবে,’’ বলেন তিনি।
কোথায় সমস্যা রেশন ডিলারদের? তাঁদের বক্তব্য, লাইসেন্স দেওয়ার সময়ে তাঁদের রেশন দোকানের আয়তন সম্পর্কিত শর্তের কথা বলা হয়নি। অধিকাংশ রেশন দোকান ডিলার বাড়ির বৈঠকখানায়, অথবা ছোট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান চালাচ্ছেন দীর্ঘ দিন। এই অবস্থায় দোকান এবং গুদাম মিলিয়ে ৬০০ বর্গফুট জায়গার সংস্থান করা তাঁদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব।
রাজ্য জুড়ে রয়েছে মোট ১৮,৬০০ রেশন দোকান। ডিলারদের বক্তব্য: বড়জোর শ’খানেক ডিলারের ৬০০ বর্গ ফুট আয়তনের দোকান রয়েছে। ডিলাররা জানান, দোকানের সঙ্গে গুদামের জন্য অতিরিক্ত ৪০০ বর্গফুট জায়গা তাঁদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। টাকা দিতে চাইলেও জায়গা মিলবে না, বলছেন ডিলাররা।
সরকারের সঙ্গে ডিলারদের এই টানাপোড়েনের মধ্যে ডিলারদের লাইসেন্স নবীকরণ করেনি খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। জানুয়ারি মাসে ডিলারদের লাইসেন্স নবীকরণ করা হয়। এ বছর তা আটকে আছে। এখনও পর্যন্ত বিনা লাইসেন্সেই চলছে রেশন দোকানগুলি।
একই সমস্যায় পড়েছেন ডিস্ট্রিবিউটরেরা। তাঁদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বর্তমান গুদাম থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে ১০০০ মেট্রিক টনের নতুন গুদাম তৈরি করতে হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিস্ট্রিবিউটার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘জমির সমস্যা রয়েছে। ফলে বর্তমান গুদামের ৫০০ মিটারের মধ্যে নতুন গুদাম করা সম্ভব নয়।’’ খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ফল না হওয়ায় তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন আব্দুল মালেক।