অভিজ্ঞতা: কী ভাবে দুষ্কৃতীরা বেঁধেছিল, দেখাচ্ছেন বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র
কেউ ঠেলা দিতেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বৃদ্ধার। ঘুম চোখেই তিনি দেখেন, বছর ষোলো-সতেরোর একটি ছেলের সঙ্গে রোগা চেহারার দুই যুবক হাতে রড জাতীয় কিছু নিয়ে বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিছু ক্ষণের জন্য তাঁর মনে হয়েছিল, স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু একটু পরেই ভুল ভাঙে। তাঁরই ব্যবহার করা তোয়ালে দিয়ে মুখ ও পা বেঁধে রান্নাঘর থেকে ফল কাটার ছুরি এনে গলায় চেপে ধরে এক জন যখন আলমারির চাবি চাইছে, তখন বৃদ্ধা বুঝতে পারেন বাড়িতে ডাকাত পড়েছে।
রবিবার গভীর রাতে এমনই ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হলেন শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর, ৮০ বছরের দেবিকা মিত্র। পুলিশ সূত্রে খবর, দেবিকাদেবী থাকতেন আন্দুল বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। কিন্তু পুরনো বাড়ি প্রোমোটিংয়ের জন্য ভেঙে দেওয়ায় জানুয়ারি মাস থেকে তিনি নাজিরগঞ্জের দুইল্যায় জ্যোতিষ চক্রবর্তী লেনে একটি ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন। ওই বৃদ্ধার স্বামী অনেক বছর হল মারা গিয়েছেন। দুই ছেলের এক জন থাকেন দুবাইয়ে, অন্য জন বেঙ্গালুরু। দেবিকাদেবী একাই থাকেন ওই বাড়িতে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত তিনটে নাগাদ তিন দুষ্কৃতী বাড়ির পিছনের কোল্যাপসিব্ল গেট বাঁকিয়ে একতলার ঘরে ঢুকে ওই বৃদ্ধাকে ঘুম থেকে তোলে। এর পরে তাঁর মুখ ও পা তোয়ালে দিয়ে বেঁধে আলমারি খুলে নগদ টাকা-পয়সা হাতায়। খুলে নেয় বৃদ্ধার হাতের সোনার বালা, হিরের আংটি ও কানে থাকা হিরের দুল। এর পরে বিনা বাধায় চম্পট দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় দেবিকাদেবী এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে প্রায় মিনিট কুড়ি পরে দোতলায় গিয়ে বাড়ির মালিককে ডেকে তুলে ঘটনাটি জানান। তখন ভোরের আলো ফুটছে।
সকাল হতেই ঘটনা জানাজানি হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়ায় ঘনবসতির্পূণ দুইল্যা এলাকায়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দেবিকাদেবীর বাড়ির সামনে পাড়ার লোকজনের ভিড়। তদন্তে এসেছেন হাওড়া জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ঘটনার চার ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি উদ্ভিদবিদ্যায় ডক্টরেট করা ওই বৃদ্ধার। বিড়বিড় করে বলে চলেছেন, ‘‘ওরা আমাকে মেরেই ফেলত। কী ভয়ঙ্কর!’’
কী ঘটেছিল প্রশ্ন করায় কোনও রকমে দেবিকাদেবী বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু ওরা যখন গলায় ফল কাটার ছুরি চেপে ধরে বলল, ‘বাড়ি ভাঙার জন্য যে ২ লক্ষ টাকা পেয়েছিস দিয়ে দে’, বুঝলাম ওরা ডাকাত।’’ সাঁকরাইল থানার সার্কেল ইনস্পেক্টর রাকেশ মিশ্র বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীরা শীঘ্রই ধরা পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy