Advertisement
E-Paper

স্কুলছুট রুখতে ভর্তি-ফি মেটাতে উদ্যোগ স্কুলেই

ওই স্কুলের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০০। প্রতিটি শ্রেণিতেই প্রতি বছর নতুন করে পড়ুয়াদের ভর্তি হতে হয়।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৪৫
ভর্তি ফি নেওয়া হবে না, এ কথা জানিয়ে পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র

ভর্তি ফি নেওয়া হবে না, এ কথা জানিয়ে পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র

এলাকার বেশিরভাগ মানুষ গরিব। করোনা আবহে অনেকেরই কাজ নেই। সন্তানদের স্কুলের ফি মেটাবেন কী করে! মুশকিল আসান হল স্কুলই।

ডোমজুড়ের প্রশস্থ দূর্লভচন্দ্র সাহা বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী এবং পরিচালন সমিতির সদস্যেরাই সব শ্রেণির ছাত্রদের ধরে রাখতে ভর্তির ফি মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টাকার অঙ্কে যা আড়াই লক্ষেরও বেশি।

ওই স্কুলের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০০। প্রতিটি শ্রেণিতেই প্রতি বছর নতুন করে পড়ুয়াদের ভর্তি হতে হয়। এর জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ২৪০ টাকা। তার সঙ্গে আছে আনুষঙ্গিক কিছু চাঁদা। যা এক সঙ্গেই নেওয়া হয়। কাল, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ভর্তি। তার আগে বুধবার থেকেই গ্রামে মাইক-পোস্টার-হ্যান্ডবিলে প্রচার শুরু করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কাউকে ভর্তির ফি দিতে হবে না।

স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ২০ জন। শিক্ষাকর্মী আছেন তিন জন। আছেন সভাপতি-সহ পরিচালন সমিতির সদস্যেরা। সবাই চাঁদা তুলে ওই টাকা স্কুলের তহবিলে দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক অঞ্জন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের ফি তো আমরা মকুব করতে পারি না। কারণ, এই টাকায় স্কুলের উন্নয়ন হয়। এই হারে টাকা নেওয়ার নির্দেশ স্কুল শিক্ষা দফতরই দিয়েছে। স্কুলের উন্নয়ন যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য ফি বাবদ যে টাকা ওঠার কথা, তা আমরা স্কুলের তহবিলে জমা করে দেব।’’

এলাকাটি বেশ অনুন্নত। বেশিরভাগ মানুষের পেশা দরজির কাজ। লকডাউনের পরে সেই কাজে মন্দা চলছে। কেউ কেউ ডোমজুড় এবং সাঁকরাইলে মুম্বই রোডের ধারের কারখানাগুলিতে চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। লকডাউনের সময় থেকে তাঁদের অনেকে কাজ হারিয়েছেন। পেশা বদলে কেউ ভ্যানরিকশা টানছেন। কেউ আনাজ বেচছেন। এই অবস্থায় সংসার সামলে ছেলেদের স্কুলে পাঠাবেন কী করে, তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছিলেন তাঁরা। স্কুলে গিয়ে তাঁরা সমস্যার কথা জানান। অনেকে ছেলেদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

প্রমাদ গোনেন প্রধান শিক্ষক। অন্য শিক্ষক এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সমাধানসূত্রের খোঁজে আলোচনা করেন। সকলেই প্রস্তাব দেন, তাঁরা চাঁদা তুলে পড়ুয়াদের ভর্তি ফি মিটিয়ে দেবেন। গত শনিবার পরিচালন সমিতির বৈঠকে এবং মঙ্গলবার স্টাফ কাউন্সিলের বৈঠকেও প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুল থেকে ছাত্রদের ছাড়িয়ে নেওয়া হলে বহু ছাত্র স্কুলছুট হয়ে যেত। সেটা এই এলাকার পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াত। সেই প্রবণতা আমরা রোখার চেষ্টা করছি।’’ স্কুলের আর এক শিক্ষক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘‘সন্তানসম পড়ুয়ারা টাকার অভাবে ভর্তি হতে না পারলে শিক্ষার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। পড়ুয়া না থাকলে স্কুলই বা থেকে কী হবে? তাই আমরা ওই সিদ্ধান্ত নিই।’’ স্কুল সভাপতি শেখ মহম্মদ আনিস বলেন, ‘‘চাঁদা আমরাও দিচ্ছি। তবুও শিক্ষকেরা যে ভাবে এগিয়ে এলেন তাতে অভিভাবকদের হয়ে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’’

School Authority Drop-outs Admission fee Prasastha Durlav Chandra Saha Vidyapith
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy