Advertisement
E-Paper

ভোগান্তির সাতকাহন

তারকেশ্বর থেকে ছত্রশাল পর্যন্ত ২৩টি ট্রেকার চলে। রাস্তায় এ দিনই কিছুই ছিল না। তারকেশ্বরের বাস সংগঠনের এক কর্তা মানছেন, ‘‘তারকেশ্বর থেকে আরামবাগের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন কমবেশি ২১৫টা বাস ছাড়ে। তার মধ্যে আবার ১০১টি এক্সপ্রেস বাস। এ দিন সব মিলিয়ে মেরেকেটে ৩৫টি চলেছে।’’

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৭
সমস্যা: বাস নেই। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে ভরসা এই ছোট গাড়িই। ছবি: মোহন দাস ও দীপঙ্কর দে

সমস্যা: বাস নেই। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে ভরসা এই ছোট গাড়িই। ছবি: মোহন দাস ও দীপঙ্কর দে

ছবিটা বদলাল না এ বারও। আজ ২১ জুলাই। কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ। এ জন্য প্রতিবার আগে থেকে জেলার বিভিন্ন রুটের বাস তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবারও একই কারণে পথে বেরিয়ে ভুগতে হল সাধারণ মানুষকে। হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় সকাল থেকে বাসের সে ভাবে দেখা মিলল না। দুপুরের পর উধাও হল ট্রেকারও। তীব্র গরমে গন্তব্যে পৌঁছতে জেরবার হলেন আমজনতা।হুগলির চিত্র

তারকেশ্বর

আরামবাগের কাবলেতে বিশেষ কাজ ছিল চন্দননগরের প্রদীপ গোস্বামীর। শুক্রবার সকালে ট্রেনে শেওড়াফুলি আসেন। সেখান থেকে তারকেশ্বর লোকালে তারকেশ্বর বাসস্ট্যান্ড। কিন্তু বাস কই? দুর্ভোগের সেই শুরু। গরমে ঘামতে ঘামতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন প্রায় দেড় ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ‘কাটা সার্ভিস’-এর (অল্প দূরত্বের অটো বা ট্রেকার) উদ্দেশে পা বাড়ালেন। প্রদীপবাবুর ক্ষোভ, ‘‘সভা তো কাল। আজ থেকে রাস্তাঘাটের এই হাল!’’

ওই বাসস্ট্যান্ডে এসে একই হাল হয় ধনেখালির তারক দেবনাথেরও। তিনি আরামবাগ যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। তারকেশ্বর থেকে ছত্রশাল পর্যন্ত ২৩টি ট্রেকার চলে। রাস্তায় এ দিনই কিছুই ছিল না। তারকেশ্বরের বাস সংগঠনের এক কর্তা মানছেন, ‘‘তারকেশ্বর থেকে আরামবাগের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন কমবেশি ২১৫টা বাস ছাড়ে। তার মধ্যে আবার ১০১টি এক্সপ্রেস বাস। এ দিন সব মিলিয়ে মেরেকেটে ৩৫টি চলেছে।’’

শ্রীরামপুর

হুগলির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড রয়েছে শ্রীরামপুরে। এখান থেকে ৩১ নম্বর রুটের মোট ১৬টি বাস ছাড়ে। এ দিন সব বাসই অমিল। মেলেনি ৪০, ২৬ নম্বর রুটের বাসও। বৈদ্যবাটি থেকে নিউটাউনে যাওয়ার নতুন রুট চালু হয়েছে অল্প কিছুদিন। ওই রুটের বাসে বহু মানুষ নিয়মিত কলকাতা যান। মোট ১৫টি বাসের মধ্যে ৯টিই এ দিন সকালে তুলে নেওয়া হয়। মেলেনি ট্রেকারও। যাত্রীদের ক্ষোভ, শনিবারের সভার জন্য শুক্রবারই সকালেই কেন বাস নেওয়া হবে? রাতেও তো নেওয়া যেত! এই প্রশ্নে ফোঁস করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা, ‘‘আরে মশাই, দায়িত্ব আছে লোকগুলোকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার। বাস অন্য এলাকায় গেলে সেখানকার নেতারা যদি তুলে নেন!’’

তারকেশ্বরে বাস ধরার ভিড়। ছবি: মোহন দাস ও দীপঙ্কর দে

চুঁচুড়া

জেলাসদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন রুটে বহু বাস ছাড়ে। এখানকার কর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আজ, শনিবার অধিকাংশ বাস তুলে নেওয়া হবে। ফলে, মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা থাকছেই।

আরামবাগ

জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বাসস্ট্যান্ডের ৫০ শতাংশ বাস বুধবারই তুলে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল থেকে হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলেছে। তাতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। দূরপাল্লার বাস মেলেনি। মানুষের দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির যাত্রিবাহী গাড়ি ইচ্ছেমতো ভাড়া চড়াল। অন্যদিন যে দূরত্ব যেতে ২০ টাকা দিতে হত, এ দিন সেই দূরত্বের জন্য যাত্রীকে গুনতে হল ১৫০ টাকা। সমর পাল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের জন্য আগে থেকে বাস তুলে নিয়ে আমাদের এ ভাবে হয়রান করা হল কেন? এর কি কোনও দরকার ছিল?’’ অবিলম্বে আরামবাগে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল করার দাবিতে বিকেলে মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম।

হাওড়ার চিত্র

উলুবেড়িয়া

শুক্রবার তেমন সমস্যা না-হলেও আজ, শনিবার জয়পুর, উদয়নারায়ণপুর এবং শ্যামপুরের মানুষের দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা আছে। এই তিন এলাকা থেকে শহরে যাওয়ার মূল মাধ্যম বাস। উদয়নারায়ণপুর থেকে হাওড়া, জয়পুরের ঝিকিরা এবং মুচিঘাটা থেকে হাওড়া ও কলকাতা এবং শ্যামপুর থেকে বাগনানের বিভিন্ন রুটে বাস চলে। তৃণমূলের সমাবেশের জন্য বেশিরভাগ বাসই তুলে নেওয়া হবে বলে বাস-মালিকেরা জানিয়েছেন। শ্যামপুরের বাসিন্দা, উলুবেড়িয়া আদালতের আইনজীবী খায়রুল বাশার বলেন, ‘‘বাস ছাড়া উলু‌বেড়িয়ায় আসার অন্য কোনও মাধ্যম নেই। কী ভাবে আদালতে যাব তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’

উদয়নারায়ণপুরের বাস মালিক সংগঠনের নেতা লক্ষ্মীকান্ত দাস বলেন, ‘‘কলকাতার সমাবেশে যেতে মানুষের এতটাই আগ্রহ যে তাঁদের চাপেই অধিকাংশ বাস দিতে হয়েছে।’’ শ্যামপুরের বাস মালিকদের সংগঠনের অন্যতম নেতা স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ বিভিন্ন রুটে প্রায় ৪০টি বাস চলে। সবই ভাড়া করেছে তৃণমূল।’’

Bus Small Car Hope TMC Martyr's Da
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy