Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
গ্রেফতার ছেলে, ঝোপ থেকে উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র

মদ খাওয়ার প্রতিবাদে মাকে খুন

ছেলে মদ খেয়ে বাড়িতে অশান্তি করায় আপত্তি জানিয়েছিলেন মা। এই ‘অপরাধে’ মাকে পর পর দু’টি গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে।

শোকার্ত: জ্যোৎস্না তিওয়ারি ( বাঁ দিকে) রাজু তিওয়ারি (ডান দিকে)

শোকার্ত: জ্যোৎস্না তিওয়ারি ( বাঁ দিকে) রাজু তিওয়ারি (ডান দিকে)

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৫:৪১
Share: Save:

ছেলে মদ খেয়ে বাড়িতে অশান্তি করায় আপত্তি জানিয়েছিলেন মা। এই ‘অপরাধে’ মাকে পর পর দু’টি গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার রাতে হুগলির কানাগড়ের বাসিন্দা, জ্যোৎস্না তিওয়ারি (৫৮) নামে ওই প্রৌঢ়াকে খুন করা হয়। রাতে প্রৌঢ়ার ছোট ছেলে, অভিযুক্ত রাজু তিওয়ারির নাগাল পায়নি পুলিশ। সে পালিয়েছিল। শুক্রবার সকালে পাড়ায় ফিরে সে রাস্তা থেকে বাড়ির লোকজনকে হুমকি দিতে থাকে বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে রাজুকে গ্রেফতার করে। বাড়ির পিছনের ঝোপ থেকে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করেছে। এর আগেও চুরি, ছিনতাই-সহ কিছু অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজুকে কয়েকবার হাজতবাস করতে হয়েছে।

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ওই প্রৌঢ়ার বড় ছেলে রাজুর নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। আগ্নেয়াস্ত্রটি সে কোথা থেকে জোগাড় করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, জ্যোৎস্নাদেবীর সেজো ছেলে মুন্না বলেন, ‘‘প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে মদ খেয়ে এসে ভাই অশান্তি করছিল। আমি ঘর থেকেই শুনতে পাচ্ছিলাম। মা বারণ করতেই গুলির শব্দ। বেরিয়ে দেখি মা সদর দরজার সামনে পড়ে রয়েছে। ভাই আমাকেও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে খুনের হুমকি দেয়। আমাকে মারধর করে ঘরে আটকে রাখে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্যোৎস্নাদেবীর চার ছেলে। সকলে একই বাড়িতে থাকেন। রাজু লরির খালাসির কাজ করত। প্রতিদিন রাতে মদ খেয়ে বাড়িতে ঢুকে সে স্ত্রী-ছেলেকে মারধর করত বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারও অশান্তি শুরু হওয়ায় জ্যোৎস্নাদেবী ছেলেকে বারণ করেন। বাধাও দিতে যান। তখনই কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে রাজু মাকে লক্ষ করে দু’টি গুলি চালায় বলে অভিযোগ। একটি গুলি জ্যোৎস্নাদেবীর থুতনির একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর একটি গুলি তাঁর গলা ভেদ করে শ্বাসনালিতে আটকে যায়। জ্যোৎস্নাদেবী সদর দরজার কাছে লুটিয়ে পড়েন।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনরা। ছবি: তাপস ঘোষ

গুলির আওয়াজে রাজুর স্ত্রী চাঁদনি এবং জ্যোৎস্নাদেবীর সেজো ছেলে বেরিয়ে এলেও তাঁদের খুনের হুমকি দিয়ে, মারধর করে রাজু ঘরে আটকে রাখে বলে অভিযোগ। এর পরে মাকে টানতে টানতে রাজু বাড়ির কাছে পুকুর পাড়ে ফেলে রেখে আসে। সকলের চেঁচামেচিতে পড়শিরা চলে আসেন। জ্যোৎস্নাদেবীকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু রাতেই তিনি মারা যান।

শুক্রবার সকালে পাড়ায় ফিরলেও বাড়ি ঢুকতে পারেনি রাজু। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাজু এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করতে থাকে। পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। রাজুর বড়দা বীরেন্দ্র বলেন, ‘‘রাজু রোজগারের সব টাকা মদে ওড়াত। বাড়িতে অশান্তি করত। আমরা সবাই বারণ করলেও শুনত না। কিন্তু ও যে এই কাণ্ড করবে বুঝতে পারিনি।’’ রাজুর স্ত্রী বলেন, ‘‘ওর অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। আগও একবার আগ্নেয়াস্ত্র এনে আমাকে শাসিয়েছিল। ওর কঠিন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’’

কিন্তু কথায় কথায় হুগলিতে যে ভাবে বিভিন্ন অশান্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যাচ্ছে, তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। কানাগড়ের বাসিন্দাদের অনেকেও সামান্য পারিবারিক অশান্তিতেও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার মেনে নিতে পারছেন না। অবিলম্বে হুগলিতে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের জোর বাড়ানো উচিত বলেও মনে করছেন বহু বাসিন্দা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Drunk Mother Son
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE