Advertisement
E-Paper

‘উপেক্ষিত’ দুই নায়কের মূর্তিও শ্রীরামপুর কলেজে

ওয়ার্ডের প্রধান কাজ ছিল মিশন প্রেসের ছাপাখানার তত্ত্বাবধান। ওল্ড টেস্টামেন্টের বিভিন্ন অনুবাদ বাংলা, মরাঠি, তামিল, তেলুগু-সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছিল, যার মধ্যে কুড়মালির মতো উপভাষাও রয়েছে।

প্রকাশ পাল 

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০০
শ্রীরামপুর কলেজ। ফাইল চিত্র

শ্রীরামপুর কলেজ। ফাইল চিত্র

তাঁদের ছাড়া উইলিয়াম কেরি কতটা সফল হতেন, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেরির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং জ্যোশুয়া মার্শম্যান শ্রীরামপুর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তঁারাও। ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শ্রীরামপুর কলেজ। অবশেষে, কলেজের ঐতিহাসিক মূল ভবনের পাশে কেরি মিউজিয়াম ও রিসার্চ সেন্টারের (সিএলআরসি) সামনেই কেরি-মার্শম্যান-ওয়ার্ডের আবক্ষ মূর্তি বসছে। আজ, সোমবার ওই ত্রয়ীর মূর্তি উন্মোচন করার কথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

আঞ্চলিক ইতিহাস-গবেষকদের বক্তব্য, ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিন ত্রয়ীর নামই রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। অথচ, যুগ যুগ ধরে কেরির নামই এ ক্ষেত্রে অধিক আলোচিত হয়েছে। ওয়ার্ড এবং মার্শম্যান থেকে গিয়েছেন ‘উপেক্ষিত নায়ক’ হিসেবে। সেই আক্ষেপ তাঁদের ঘুচতে চলেছে। এতদিন কলেজে কেরির দু’টি মূর্তি থাকলেও অপর দু’জনের ছিল না।

অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাংগ্লুরা বলেন, ‘‘শিক্ষক সমিতি, প্রাক্তনী সংসদ এবং স্থানীয় নাগরিকদের দাবি পূরণ হচ্ছে। আমরা আনন্দিত।’’ কলেজের প্রাক্তনী সংসদের সভাপতি তথা প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অনুপকুমার সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মার্শম্যান এবং ওয়ার্ডের মূর্তি কেন ছিল না, সেটা বিস্ময়ের। কেরির মূর্তিতে মাল্যদানের সময় ওঁদের কথা স্মরণে বেশি করে আসত। উপেক্ষিত নায়করা এ বার প্রকৃত মর্যাদা পাচ্ছেন, এটা আনন্দের।’’ আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক, কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা সিএলআরসি-র প্রাক্তন কিউরেটর তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজ তৈরি বা শিক্ষার প্রসার ও প্রচারের গোটা বিষয়ে কেরি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে মার্শম্যান এবং ওয়ার্ডও উপযুক্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন। ওঁরা যথাযোগ্য সম্মান পাচ্ছেন।’’

কেরির মতোই মার্শম্যান এবং ওয়ার্ডের জন্মও ইংল্যান্ডে। ‘ক্রাইটেরিয়ন’ নামে একটি জাহাজে চেপে মার্শম্যান এবং ওয়ার্ড ভারতে আসেন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে। তার অনেক আগেই কেরি ভারতে চলে এসেছিলেন। ১৮০০ সাল থেকে ওই ত্রয়ীর উদ্যোগে ব্যাপটিস্ট মিশনের কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। শহরের জলকল লাগোয়া অল্ডিন হাউসে প্রথম কলেজ চালু হয় ৩৭ জন পড়ুয়াকে নিয়ে। তিন বছর পরে বর্তমান জায়গায় কলেজ উঠে আসে। গোড়া থেকেই তিন জনে ছাত্রদের পড়ানোর কাজে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি, দেশীয় ভাষা শিক্ষার জন্য দেশীয় পণ্ডিতদেরও নিয়োগ করেছিলেন। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন কেরি। পরে তিনি ‘মাস্টার’ হন। তখন অধ্যক্ষ হন মার্শম্যান। প্রাচ্য সাহিত্য ও পাশ্চাত্য বিজ্ঞান শিক্ষা চর্চার পীঠস্থান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তাঁদের হাতে গড়া মহাবিদ্যালয়।

ধর্মপ্রচারক হিসেবে শুধু বাইবেলের প্রচার ও প্রসার নয়, বই প্রকাশনা এবং আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিন জনের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। মার্শম্যানের স্ত্রী হানা মার্শম্যানও শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই শ্রীরামপুরে প্রথম মেয়েদের বিদ্যালয় মিশন স্কুল স্থাপিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠান এশিয়ায় মেয়েদের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয়। মার্শম্যান দম্পতি শ্রীরামপুরে দু’টি বোর্ডিং স্কুলও চালু করেন।

ওয়ার্ডের প্রধান কাজ ছিল মিশন প্রেসের ছাপাখানার তত্ত্বাবধান। ওল্ড টেস্টামেন্টের বিভিন্ন অনুবাদ বাংলা, মরাঠি, তামিল, তেলুগু-সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছিল, যার মধ্যে কুড়মালির মতো উপভাষাও রয়েছে। ১৮১৮ সালে ওয়ার্ড অসুস্থ হয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে যান। সেখান থেকে শ্রীরামপুর কলেজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে পাঠান। পরে ফের ভারতে এসেছিলেন। ওয়ার্ডের লেখা ডায়েরি সেই সময়ের দলিল হিসেবে গণ্য হতে পারে। ওয়ার্ডের সম্পাদিত বইতে সেই সময়ের হিন্দুদের জীবনযাত্রার অনুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে। মুদ্রণ শিল্পে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের নিত্যনতুন উদ্ভাবনা, হরফ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে পঞ্চানন কর্মকারকে সাহায্য করেছিলেন ওয়ার্ড।

William Ward Joshua Marshman Sreerampore college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy