Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩
Marksheet

মার্কশিটের দু’শো মিটার পৌঁছতে আধা বছর পার, নালিশ ডাকঘরের বিরুদ্ধে

মাসখানেক আগে এক সহপাঠীর থেকে সোমনাথ জানতে পারেন, নির্দিষ্ট সময়েই তাঁর নথি ডাকযোগে পৌঁছেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকাশ পাল
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৬:০৪
Share: Save:

ডাকঘর থেকে বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে দু’শো মিটার। সেই দূরত্বে এক যুবকের এমএ পরীক্ষার মার্কশিট পৌঁছতে সাড়ে ৬ মাস পেরিয়ে গেল। তাও রীতিমতো কাঠখড় পুড়িয়ে ছাত্র তা হাতে পেলেন। ডাকঘর কর্তৃপক্ষের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। হুগলির জাঙ্গিপাড়ার এই ঘটনায় ডাকঘরের পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

সোমনাথ দাস নামে ওই যুবক জাঙ্গিপাড়ার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পারেন, তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। সোমনাথ জানান, ফলপ্রকাশের পনেরো-কুড়ি দিনের মধ্যে ডাকযোগে বাড়িতে মার্কশিট এবং শংসাপত্র পৌঁছনোর কথা। তিনি স্থানীয় ডাকঘরের পিওনের কাছে খোঁজ নিতে থাকেন। পিওন জানান, তাঁর নথি আসেনি।

মাসখানেক আগে এক সহপাঠীর থেকে সোমনাথ জানতে পারেন, নির্দিষ্ট সময়েই তাঁর নথি ডাকযোগে পৌঁছেছে। তখন ডাকঘরে গিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন সোমনাথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগেও বিষয়টি জানান। তাঁকে জানানো হয়, গত ৩ মার্চ তাঁর ঠিকানায় রেজিস্ট্রি ডাক মারফত মার্কশিট-শংসাপত্র পাঠানো হয়েছে। এক দিন পরে অর্থাৎ ৫ মার্চ জাঙ্গিপাড়া ডাকঘরে সেই নথি পৌঁছেছে। ডাকের সংশ্লিষ্ট নম্বরও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়।

ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘প্রথম দিকে বারবার গেলেও ডাকঘরের লোকেরা আমাকে পাত্তা দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া চিঠির নম্বর জানানোর পরে বলা হয়, প্রাপকের ঠিকানা ভুল থাকায় ওই খাম প্রেরকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে আর একটা মার্কশিট পাঠাতে বলার পরামর্শও দেওয়া হয় আমাকে।’’ সোমনাথ ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে তাঁকে বলা হয়, মার্কশিট ফেরত আসেনি। তখন সোমনাথ জাঙ্গিপাড়া ডাকঘরের পোস্টমাস্টারকে দরখাস্ত দেন।

Advertisement

গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সোমনাথ ফের ডাকঘরে যান। প্রণববাবুর কথায়, ‘‘ওঁরা বলেন, চিঠির সন্ধান করবেন, কিন্তু চিঠিটি ভুল করে অন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে কিনা, অথবা প্রেরকের কাছে পাঠানো হয়েছে কিনা, তা বলা হবে না। কেননা, এটি অফিসের গোপন তথ্য।’’

সোমনাথ বলেন, ‘‘ওই দিন ডাকঘর থেকে বাড়ি ফেরার আঘণ্টার মধ্যে পোস্টম্যান এসে মার্কশিট এবং শংসাপত্র দিয়ে যান। খামটি নোংরা, ছেঁড়া এবং মোচড়ানো ছিল। এতদিন সেটা কোথায় ছিল, তার উত্তর মেলেনি। খামে ঠিকানা ঠিকই ছিল।’’ তবে, শেষ পর্যন্ত নথি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রবল দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি না পেলে মনের অবস্থা কী হয়, ডাকঘরের লোকেরা কি তা বোঝেন?’’

প্রণববাবু জানান, সোমনাথের বাবা আনাজ বিক্রেতা। অভাবের কারণে মাধ্যমিকের পরে সোমনাথ ভিন্‌ রাজ্যে হিরে সেটিংয়ের কাজ করতেন। চার বছর পরে গ্রামে ফিরে ফের পড়াশোনা শুরু করেন। এখন ডব্লিবিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘যাঁদের গাফিলতিতে ছেলেটা এত কষ্ট পেল, দফতর তাঁদের সতর্ক করবে তো?’’ বিষয়টি সোমনাথ লিখিত ভাবে ডাকঘরের দক্ষিণ হুগলি ডিভিশনের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্টকে জানিয়েছেন। প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের মুখ্য পোস্টমাস্টার জেনারেলকেও।

কেন বিলম্ব?

জাঙ্গিপাড়া ডাকঘরের পোস্টমাস্টার সুদীপ চক্রবর্তীর জবাব, ‘‘সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নেই। সুপারিন্টেন্ডেন্টকে জানিয়েছি। যা বলার, উনিই বলবেন।’’ মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ডাকঘরের দক্ষিণ হুগলি ডিভিশনের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট সত্যগোবিন্দ গিরির প্রতিক্রিয়া, ‘‘ফোনে এই বিষয়ে কিছু বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.