Advertisement
E-Paper

হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন শিক্ষিকা

শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের অফিস ঘরে আটকে রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আলো, পাখা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০০:২৮
আতঙ্ক: অন্ধকার, গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক শিক্ষক। ভয়ে কেঁদে ফেলেছেন এক শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্ক: অন্ধকার, গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক শিক্ষক। ভয়ে কেঁদে ফেলেছেন এক শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র

ক্লোজড্‌ সার্কিট ক্যামেরার উপরে চাপানো রুমাল। দুপুর থেকে শুরু হওয়া ‘ছাত্র আন্দোলন’-এর জেরে ততক্ষণে ভেঙে গিয়েছে কলেজের বেশ কয়েকটি জানলার কাচ, শৌচাগারের দরজা। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের অফিস ঘরে আটকে রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আলো, পাখা।

গরমে দমবন্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক শিক্ষক। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। কলেজের ভিতরের ঘুটঘুটে অন্ধকার থেকে অসুস্থ সহকর্মীকে পাঁজাকোলা করে বার করে নিতে চেয়েছিলেন তিন শিক্ষক। কিন্তু দরজা আগলে ছাত্রছাত্রীরা— বেরোতে পারবেন না স্যর। পরিস্থিতি এমনই যে, হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন দুই শিক্ষিকা। আতঙ্কে তাঁদের কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

বাইরে তখনও স্লোগান দিয়ে চলেছেন জনা চল্লিশ টিএমসিপি সমর্থক। শিক্ষকরা ক্লাস নেন না, পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্রনেতাদের নামের জয়ধ্বনি— সবই চলল।

দু’শো বছরে পা দেওয়া হুগলির ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রীরামপুর কলেজ সাক্ষী থাকল এমনই নজির বিহীন ‘আন্দোলন’-এর। সোমবার সকাল থেকেই টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্যরা ঘেরাও শুরু করেন। দাবি, উপস্থিতির হার যাই হোক প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সিমেস্টারে বসতে দিতে হবে সব পড়ুয়াকে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘সিবিসিএস পদ্ধতিতে হাজিরা অত্যন্ত গুরুর্বপূর্ণ। এ জন্য ১০ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ আছে।’’ তিনি জানান, পড়ুয়াদের এ হেন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না।

প্রশাসন সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হস্তক্ষেপে ঘেরাওমুক্ত হন শিক্ষকরা। ওই সন্ধ্যায় পার্থবাবু জে‌লা তৃণমূল এবং টিএমসিপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর সক্রিয় হয় পুলিশ। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ছাড়া পান শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

জেলা টিএমসিপি সভাপতি গোপাল রায় অবশ্য দায় ঝে়ড়ে বলেন, ‘‘ওটা সাধারণ পড়ুয়াদের আন্দোলন। টিএমসিপি-র যোগ নেই। আমাদের কেউ যুক্ত থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যদিও তিনি ফের যোগ করেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেই পরীক্ষা হবে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ আলোচনা করতে পারেন।’’

আর সেই সূত্রেই ফের মঙ্গলবার শুরু হয় আন্দোলন। দুপুর ১টা থেকে আবারও ঘেরাও হন উপাচার্য-সহ জনা সাতেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁদের আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ।

এমনকি এ দিনও দুপুর ৩টে পর্যন্ত বন্ধ ছিল উপাচার্যের ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ। এ দিন অবশ্য টিএমসিপি সমর্থকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন আরও কিছু পড়ুয়া। ঘেরাও করা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাটা এ দিন ছিল প্রায় শ’খানেক।

এ দিন অবশ্য শিক্ষিকাদের বাড়ি চলে যেতে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ঘেরাওকারী পড়ুয়ারা। বাইরের কলেজ থেকে পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রছাত্রীদেরও এ দিন আটকানো হয়নি। তবে আন্দোলনের ধার যে কমেনি তা বুঝিয়ে দিতেও ছাড়েননি কেউ। এ দিন ফের কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নেন না বলেই তাঁরা ক্লাস করতে পারেন না। গাফিলতির অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন শিক্ষকরা। ছাত্রনেতা অজিত যাদব, সঞ্জিৎ রামরা বলেন, ‘‘আমরা চাইছি কর্তৃপক্ষ ফের একবার আমাদের উপস্থিতির বিষয়টি খতিয়ে দেখুন।’’

সোমবার সন্ধ্যায় অন্ধকারের মধ্যেই একদল ছাত্রছাত্রী মারমুখী হয়ে অফিসে ঢোকেন বলে অভিযোগ। সে সময় শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কিও হয়। ভয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে দেন। প্রাক্তনী সংসদের বর্তমান সভাপতি অনুপকুমার সেনগুপ্ত এই কলেজেই পড়িয়েছেন ৩৮ বছর, ছিলেন উপাধ্যক্ষও। ছাত্র জীবন বা অধ্যাপনা— কোনও সময়ের স্মৃতিতেই এমন আন্দোলন নেই বলে জানালেন তিনি। অনুপবাবু বলেন, ‘‘আন্দোলন অনেক দেখেছি, ঘেরাও হয়েছি। কিন্তু এ যা শুনছি, তেমন ঘটনা আগে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছি না। ছাত্রদের দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু তা বলে এমন অত্যাচার, এ কি সম্ভব!’’

কলেজের আর এক প্রাক্তনী ও তৃণমূলের জেলা নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এমন আন্দোলন কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। এ ভাবে কোনও কিছু চলতে পারে না।’’

Serampore College শ্রীরামপুর কলেজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy