প্রিয় স্যারকে ঘিরে পড়ুয়ারা।
তাদের প্রিয় স্যার চলে যাবেন। শুনেই মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল পড়ুয়াদের। স্যর যাতে চলে না যান, সে জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখল না ওরা। একজোট হয়ে স্যারকে জড়িয়ে ধরে আবদার জানাল। কান্নাকাটিও চলল। দিনভর একটাও ক্লাস করল না কেউ। বুধবার এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল হুগলির ধনেখালির মান্দড়া বাদলচন্দ্র ঘোষাল বিদ্যামন্দির।
ছাত্রদের ভালবাসায় আপ্লুত বিষ্ণুপদ মণ্ডল নামে জীবন বিজ্ঞানের ওই শিক্ষক। সম্প্রতি বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ, দেগঙ্গার স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের আবদার মেনে বদলির সিদ্ধান্ত বদল করেছেন শিক্ষক। তবে বিষ্ণুবাবু তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করেননি। তিনি বলেন, ‘‘অনেকটা দূর থেকে আসতে হয় আমাকে। স্ত্রী অসুস্থ। তাই আমি বাড়ির কাছের স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। নেহাতই অপারগ বলেই বদলির আবেদন করেছি। আমার পরিবর্তে যিনি আসুন না কেন, তিনি ছাত্রদের প্রতি আমার থেকে বেশি যত্নবান হবেন।’’
হুগলির প্রত্যন্ত ব্লক ধনেখালির মান্দড়া পঞ্চায়েতের এই স্কুল অনুমোদন পায় আজ থেকে ৫০ বছর আগে। তার আগে নিজস্ব ভবন ছিল না। বর্তমানে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। সাড়ে ছ’শোরও বেশি ছাত্রছাত্রী আছে। স্কুল সূত্রের খবর, বর্ধমানের বাসিন্দা বিষ্ণুপদবাবু এখানে শারীরশিক্ষার শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। তিনি প্রাণিবিদ্যায় এমএসসি। স্বভাবতই জীবন বিজ্ঞান পড়ানোর ভারও তাঁর উপর পড়ে। খুব অল্প দিনেই পড়ানোর দক্ষতা এবং ভাল ব্যবহারের জন্য পড়ুয়াদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন আগে বাড়ি থেকে অপেক্ষাকৃত কাছের একটি স্কুলে বদলির জন্য আবেদন করেন তিনি।
এ দিকে, বিষ্ণুপদবাবু অন্য স্কুলে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন শুনে তাঁকে আটকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে পড়ুয়ারা। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ছেলেমেয়েরা একজোট হয়। এ দিন শিক্ষকদের তারা জানিয়ে দেয়, বিষ্ণুবাবুর সিদ্ধান্ত বদল করাতে এ দিন তারা ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষ্ণুবাবু স্কুলে ঢুকতেই তাঁকে ঘিরে ধরে ছেলেমেয়েরা। আবদার ওঠে, ‘স্যার, আমাদের ছেড়ে আপনাকে যেতে দেব না।’ কয়েক জন অভিভাবকও আসেন। তাঁরা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গলা মেলান। প্রধান শিক্ষক বিজয়কুমার ঘোষ বিষ্ণুপবাবুর কাছে আর্জি জানান, তিনি যেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেন। কেন না, স্কুলে এমনিতেই শিক্ষক কম। তিনি চলে গেলে সমস্যা বাড়বে। স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক পার্থ ঘোষাল বলেন, ‘‘স্কুলে ৩ জন শিক্ষকের পদ শূণ্য। উনি চলে গেলে সংখ্যাটা ৪ হয়ে যাবে। তা ছাড়া জীবন বিজ্ঞানের আর শিক্ষক নেই। তাই আমরাও চাই উনি থেকে যান।’’ পড়ুয়া দেবজ্যোতি ঘোষাল, রুবিনা খাতুন, প্রিতম ঘোষাল, জয়ন্ত মালিক, জেসমিন মণ্ডলের কথায়, ‘‘স্যার খুব ভাল পড়ান। বুঝতে না পারলে আরও ভালভাবে বুঝিয়ে দেন। আমরা চাই, উনি যেন এই স্কুলেই থেকে যান।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy