Advertisement
E-Paper

অবরোধে রেহাই নেই রোগীরও

শুধু রেল নয়। উলুবেড়িয়া-নিমদিঘি ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে একই কারণে দফায় দফায় অবরোধ হয়। এক হাঁসফাঁস গরম, তার উপর অবরোধের ধাক্কায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৬
মাথায়-হাত: অবরোধে নাকাল মুম্বই-হাওড়া এক্সপ্রেসের এক অসুস্থ যাত্রী। চেঙ্গাইলে। নিজস্ব চিত্র

মাথায়-হাত: অবরোধে নাকাল মুম্বই-হাওড়া এক্সপ্রেসের এক অসুস্থ যাত্রী। চেঙ্গাইলে। নিজস্ব চিত্র

স্টেশনে দাঁড়িয়ে ট্রেন— মুম্বই মেল। যাওয়ার কথা ছিল হাওড়া। দাঁড়িয়ে পড়েছে উলুবেড়িয়া স্টেশনেই। ভিতরে যাত্রীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। এসি কামরাতেও স্বস্তি নেই। দু’দিনের পথ পেরিয়ে আসা ট্রেনে শৌচাগারের অবস্থাও শোচনীয়। যাত্রীরা অনেকেই অসুস্থ— অক্সিজেনের নল নাকে নিয়ে অনেককে ট্রেনে শুয়ে থাকতে হয়েছে। কারণ, অবরোধ চলছে।

কাশ্মীরে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে রেল অবরোধ হল হাওড়ায়। আর তারই জেরে ভুগলেন হাজার কয়েক যাত্রী। কেউ চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ কলকাতা যাচ্ছিলেন চিকিৎসা করাতে। সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছতেই পারলেন না তাঁরা। নিত্যযাত্রীরাও পৌঁছতে পারলেন না গন্তব্যে। সময় মতো জগন্নাথ ঘাটে পৌঁছতে মাথায় ফুলের গাঁটরি নিয়ে ফুলচাষিরা দৌড়লেন পড়িমড়ি।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে অবরোধ শুরু হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখার চেঙ্গাইল পূর্ব লেভেল ক্রসিং এর কাছে। কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছাড়াই এলাকার মানুষ অবরোধ শুরু করেন। রেল লাইনের উপর স্লিপার তুলে, বড় বড় পাথর ফেলে অবরোধ করেন তাঁরা। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে একাধিক লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন।

উলুবেড়িয়ায় দাঁড়িয়ে পড়া মুম্বই মেলে ছিলেন বেহালার বাসিন্দা মোতালেব সর্দার। তিনি জানান, মামাকে চিকিৎসার জন্য মুম্বই গিয়েছিলেন। কিন্তু সুস্থ হননি তাঁর মামা। চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তাই সকাল ১০টায় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানোর কথা। কিন্তু বেলা ১২টা পর্যন্ত তাঁরা আটকে থেকেছেন ট্রেনের ভিতর।

হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও ক্যান্সারে আক্রান্ত। মুম্বই থেকে চিকিৎসা করিয়ে মেয়ের সঙ্গে তিনিও বাড়ি ফিরছিলেন। দু’দিন ট্রেন যাত্রার ধকলে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। তার উপর এই ভোগান্তি। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘এখানে নেমে যে গাড়ি ভাড়া করে নেব তারও উপায় নেই। অতো টাকা নেই আমার কাছে।’’ প্লাটফর্মে খাবারও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ দূরপাল্লার যাত্রীদের।

শুধু রেল নয়। উলুবেড়িয়া-নিমদিঘি ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে একই কারণে দফায় দফায় অবরোধ হয়। এক হাঁসফাঁস গরম, তার উপর অবরোধের ধাক্কায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। আটকে পড়ে বহু অ্যাম্বুল্যান্স ও স্কুল বাস। রেল লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয় উলুবেড়িয়া পশ্চিম লেভেল ক্রসিং-ও। ফলে উলুবেড়িয়া শহরেও ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।

বহু অফিস যাত্রীই কাজে যোগ দিতে পারেনি। মেদিনীপুর ও বাগনানের বহু ফুল চাষি ভোগান্তির মুখে পড়েন। অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে ফুলের বোঝা মাথায় নিয়ে দু’কিলোমিটার হেঁটে মুম্বই রোডের দিকে দৌড় লাগান। মিলন দলুই নামে এক ফুলচাষি বলেন, ‘‘বহু টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে। ঠিক সময়ে বাজারে না পৌঁছলে ফুল বিক্রি হবে না। যা গরম তাতে সব ফুল নষ্ট হয়ে যাবে।’’

এ দিন প্রথম দফার অবরোধ শুরু হয়েছিল চেঙ্গাইল স্টেশনে। তা চলে প্রায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত। তার জেরে ওই স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় ডাউন পাঁশকুড়া লোকাল। পরের দফায় বিকেল ৩টে নাগাদ অবরোধ শুরু হয় উলুবেড়িয়া স্টেশনে। চলে এক ঘণ্টা। উলুবেড়িয়া নিমদিঘিতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে প্রথম দফায় অবরোধ শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ চলে প্রায় দু’ঘণ্টা। দ্বিতীয় দফায় দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ হয়। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশ ছিল নীরব দর্শক।

দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান অবরোধের ফলে ২৮ জোড়া লোকাল ট্রেন বাতিল হয়েছে। ২০টি এক্সপ্রেস বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থেকেছে। তিনজোড়া লোকাল ট্রেনের যাত্রা পথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

Blockade Patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy