শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
হাতেনাতে জোকার একটি বেসরকারি স্কুলের ১৪টি স্কুলগাড়িকে ধরেছিল মোটর ভেহিক্লস দফতর। গাড়িগুলির কোনওটিরই তিন বছর ধরে ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং বিমা ছিল না। পোলবায় স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনার পরে এমনই তথ্য সামনে এসেছে। এমনটা হামেশাই ঘটে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে বেপরোয়া স্কুলগাড়ির চালক কিংবা অসতর্ক স্কুলগাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা কেন সরকারের তরফে হচ্ছে না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
‘স্কুলগাড়ি’। এই শব্দের মধ্যে আক্ষরিক ভাবে শিক্ষা ও পরিবহণ— এই দু’টি দফতরের নাম জড়িয়ে রয়েছে। তাই অভিভাবকদের অনেকেই মনে করেন এই দুই দফতরের এই সমস্যায় নৈতিক দায় রয়েছে। কোনও ঘটনা ঘটলেই তার পরে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে কিছু নির্দেশিকা জারি করে। তার পরে বছরভর সেই সব নির্দেশিকা আদৌ মানা হচ্ছে কি না, তা দেখা হয় না বলেই অভিযোগ। জোকার ওই স্কুলগাড়িগুলির প্রতি প্রথম সন্দেহ কিন্তু হয়েছিল সাধারণ মানুষেরই। তাঁরাই পরিবহণ দফতরকে খবর দেন।
কয়েক মাস আগেই উত্তর কলকাতায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি স্কুলবাস। ওই ঘটনায় পড়ুয়ারা জখম হয়েছিল। সপ্তাহ খানেক আগে হওড়ায় বেপরোয়া ভাবে ভুল রাস্তায় ঢুকে পড়ায় একটি স্কুলবাসকে মুখোমুখি ধাক্কা মারে একটি বেসরকারি বাস। শুক্রবার পোলবায় স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, স্পিড গভর্নর খোলা থাকায় গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি স্কুলগাড়িটি।
জোকার ওই ১৪টি স্কুলগাড়িকে ধরার কথা শনিবার পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নিজেই জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, স্কুলগাড়ি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কড়া হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে স্কুলগাড়ি নিয়ে সচেতন হতে হবে অভিভাবকদেরও। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘স্কুলে পড়তে যাওয়ার জন্যই বাচ্চারা পুলকার ব্যবহার করছে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। প্রয়োজনে আমরা সব রকম সহযোগিতা করব। শহরের ১৩০০টি স্কুলকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।’’ এ ক্ষেত্রে জোকার মতোই সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করে পরিবহণ দফতর।
উত্তর কলকাতার ওই স্কুলবাস দুর্ঘটনার পরে স্কুলগাড়ি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা যথাযথ ভাবে লাগু করতে চেয়েছিল পরিবহণ দফতর। তার জন্য ট্র্যাফিক পুলিশ, পরিবহণ ও শিক্ষা দফতরের মধ্যে সমন্বয় রাখা উচিত বলে মনে করেন শুভেন্দু। এ নিয়ে মুখ্য সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পরিবহণ সচিবকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান। সেই প্রস্তাব কতদূর বাস্তবায়িত হচ্ছে তা নিয়ে অবশ্য তিনি কিছু জানাননি।
পরিবহণ দফতরের দাবি, স্পিড গভর্নর-সহ অন্য প্রযুক্তিগত দিক পরীক্ষা করেই ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও গাড়িতে অতিরিক্ত গতি তুলতে স্পিড গভর্নর খুলে রাখেন এক শ্রেণির চালক। যন্ত্রাংশ পুরনো হলেও তা জোড়াতাপ্পি দিয়ে চালিয়ে নেন। নির্দেশিকা মেনে গাড়িতে হলুদ রং করানো হয় না। কারণ ওই সব গাড়ি স্কুল ছাড়াও অন্যত্র ভাড়া খাটে। যেখানে চালককে সময় বজায় রাখতে গাড়ির গতি বাড়াতে হয়। এক স্কুলগাড়ি চালকের কথায়, ‘‘বিয়ের মরসুমে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকেই ভাড়া খাটতে হয়। শুধু স্কুলের পড়ুয়া বহন করলে পেট চলবে না।’’
প্রশাসনের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এখানেই।
অভিভাবকেরা মনে করেন, যে ভাবে মত্ত অবস্থায় কিংবা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো, হেলমেটহীন বাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেয়, স্কুলগাড়ি কিংবা স্কুলবাস নিয়েও প্রশাসনকে ততটাই শক্ত হতে হবে। এর সঙ্গে বাচ্চাদের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে।
পরিবহণ ও পুলিশকর্তাদের দাবি, পড়ুয়া বোঝাই স্কুলগাড়ি আটকাতে গিয়ে স্কুলে দেরি হলে তাতে অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হবেন। আর তা ছাড়া বাচ্চাদের পৌঁছেই সব গাড়ি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে না বলেও দাবি ওই কর্তাদের। শুভেন্দু বলেন, ‘‘বাচ্চা থাকা অবস্থায় কী ভাবে স্কুলগাড়ি পরীক্ষা করা যায় তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy