আতঙ্ক: হাসপাতালে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন শীতল দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র
দলেরই একাংশের বেআইনি কাজের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই ‘অপরাধে’ তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের কয়েক জন কর্মীর বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই বাড়ির দুই সদস্য হাসপাতালে ভর্তি। অভিযোগের তির স্থানীয় কাউন্সিলরের ভাগ্নের দিকে।
বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে লিলুয়ার পঞ্চাননতলা রোডে। মূল অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের ভাগ্নেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম রাকেশ দাস। খোঁজ চলছে আরও ৬-৭ জনের। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা সকলেই ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক।
কিন্তু দলেরই এক জন কর্মী ও তাঁর পরিবারের উপরে এই ধরনের আক্রমণের কারণ কী? ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নারায়ণ মজুমদার বলেন, ‘‘যাঁরা এই ঘটনায় যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি। আমি ভাগ্নেকেও জানিয়ে দিয়েছি, দল এ সবের দায় নেবে না।’’
রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায় বলেন, ‘‘শীতল দেবনাথ দলের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজনকে খেপিয়ে তুলছিলেন বলে শুনেছি। তবে কাউকে মারধর করা বা আক্রমণ করা ঠিক নয়। আমি পুলিশকে বলেছি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনমাফিক ব্যবস্থা নিতে।’’
কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?
পুলিশ জানিয়েছে, তখন সবেমাত্র বাড়ি লাগোয়া দোকান বন্ধ করে ঘরে এসেছেন পঞ্চানতলার বাসিন্দা শীতল। তিনি এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। অভিযোগ, শীতল বাড়িতে ঢোকার পরেই রাকেশের নেতৃত্বে ৭-৮ জনের একটি দল তাঁকে আক্রমণ করে। প্রথমে ঘরে ও পরে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারা হয় ওই যুবককে। রেহাই পাননি শীতলের স্ত্রী হ্যাপি, বোন সঙ্গীতা ও বৃদ্ধা মা পুতুলদেবীও। আক্রমণকারীরা পুতুলদেবীর বুকে-পিঠে ঘুষি,
লাথি মারায় তিনি গুরুতর অসুস্থ
হয়ে পড়েন।
এখানেই শেষ নয়। ওই যুবকেরা শীতলের দোকানে ও ঘরেও ভাঙচুর চালায়। রিভলভারের বাট দিয়ে মেরে ভেঙে দেওয়া হয় টিভি। অভিযোগ, প্রায় এক ঘণ্টা তাণ্ডব চললেও প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে আক্রান্তরাই লিলুয়া থানায় ফোন করেন। শীতল ও তাঁর মাকে জায়সবাল হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, পুতুলদেবীর কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকা থমথমে। দেবনাথ পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। শীতলের স্ত্রী হ্যাপি বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকেরাই আমার স্বামীকে খুন
করতে এসেছিল। মেয়েরাও ওদের মারধর ও শ্লীলতাহানির থেকে
রেহাই পায়নি।’’
এ দিন হাসপাতালে শুয়ে শীতল জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই কাউন্সিলরের সঙ্গে ছিলেন। তিনিই তাঁকে পুরসভায় চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শীতলের অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডে ১০০ দিনের কাজ, কাজ না করেই টেন্ডার ডেকে পুরসভার টাকা আত্মসাৎ-সহ বেআইনি ভাবে পুকুর বোজানোর প্রতিবাদ করায় তিনি কাউন্সিলরের চোখে খারাপ হয়ে যান। এর পরেই তাঁকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে বুধবার রাতে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের লোকজনকে পরিকল্পনামাফিক ওই ভাবে মারা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy