Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নদীতে চোর ধরছে ‘অমানুষ’-এর লঞ্চ

ছবির তিনটি লঞ্চই ছিল রাজকুমারবাবুদের। সেইসময়ে মাছ ধরার কাজেই ব্যবহার হত লঞ্চগুলি।

স্মৃতিবিজড়িত: গাদিয়াড়ায় ‘বিশ্বপ্রেম’। —নিজস্ব চিত্র

স্মৃতিবিজড়িত: গাদিয়াড়ায় ‘বিশ্বপ্রেম’। —নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০৩:৩৩
Share: Save:

দু’বছরেও বাস্তবায়িত হল না পরিকল্পনা। পর্যটকদের নিয়ে নদীবক্ষে প্রমোদ ভ্রমণের পরিবর্তে আপাতত চোলাই মদের কারবারি ও গরুপাচারকারী ধরতেই ব্যবহৃত হচ্ছে উত্তমকুমারের স্মৃতিবিজড়িত লঞ্চ ‘বিশ্বপ্রেম’। অমানুষ ছবির শ্যুটিং হওয়া সেই লঞ্চের ঠিকানা আপাতত শ্যামপুর থানা।

আমানুষ ছবির বিখ্যাত ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল লঞ্চটিতে। বছর দু’য়েক আগে পর্যটন দফতরের তরফে লঞ্চটিকে পর্যটনে ব্যবহার করার পরিকল্পনা হয়। ঠিক হয়, গড়চুমুকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা এই লঞ্চে করে নদীতে ঘোরার সুযোগ পাবেন। উত্তমকুমারের ছবি দিয়ে সাজানো হবে লঞ্চটি। লাউডস্পিকারে মৃদু আওয়াজে বাজানো হবে ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর’। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। বুধবার ২৪ জুলাই মহানায়কের মৃত্যুদিনের আগের রাতেও লঞ্চটি পুলিশি নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।

‘অমানুষ’ ছবির জন্য মোট তিনটি লঞ্চ ব্যবহার করা হয়েছিল। তার মধ্যে ‘বিশ্বপ্রেম’ নামের এই লঞ্চটি স্মরণীয় হয়ে আছে ওই গানের শ্যুটিংয়ের জন্যই। লঞ্চটির বর্তমান মালিক বছর পঁয়তাল্লিশের রাজকুমার মান্না। ছবির শ্যুটিংয়ের সময় অবশ্য জন্ম হয়নি রাজকুমারবাবুর। তবে বাবার কাছে শুনেছেন সেই গল্প। তিনি বলেন, ‘‘গানের আগে উত্তম কুমার যে থালাটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, সেটিও ছিল লঞ্চের সম্পত্তি। মাঝিরা ওই থালাতেই খেতেন। ছবিতেও আসল চালক হামিদভাই লঞ্চ চালিয়েছিলেন। লঞ্চ চালানো তো অভিনেতার কাজ নয়। তাই উত্তমকুমার ও শর্মিলা ঠাকুরকে নিয়ে লঞ্চ যখন‌ নদী পারাপার করছে তখন স্টিয়ারিং ছিল হামিদ ভাইয়ের হাতেই। মোট ২১ দিনের জন্য এই লঞ্চ ভাড়া করা হয়েছিল। শ্যুটিং হয়েছিল সন্দেশখালিতে।’’ নস্ট্যালজিক রাজকুমারবাবু চান লঞ্চটি পর্যটনে ব্যবহার হোক। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তমকুমারের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এর সঙ্গে। পর্যটকদের কাছে এর আকর্ষণ কম নয়। দফতর চাইলেই এটি ভাড়া নিয়ে পর্যটনে ব্যবহার করতে পারেন। তবে মহানায়কের স্মৃতিবিজড়িত এই লঞ্চ বিক্রি করা হবে না।’’

ছবির তিনটি লঞ্চই ছিল রাজকুমারবাবুদের। সেইসময়ে মাছ ধরার কাজেই ব্যবহার হত লঞ্চগুলি। পরে ট্রলার এসে যাওয়ায় মাছ ধরার কাজ কমে যায়। এখন বিভিন্ন এলাকায় লঞ্চগুলি ভাড়া খাটে। ‘বিশ্বপ্রেম’ শ্যামপুর থানায় আছে গত সাত বছর ধরে।

পুলিশের হাতে পড়ে লঞ্চটির ভোল পাল্টেছে। ডেকে বসানে হয়েছে বাহারি রেলিং। চালকের ঘরের পিছনের কেবিনটিতে দামি সোফা, টেবিল বসেছে। ভেলভেটের রঙিন পর্দা দিয়ে ঘেরা হয়েছে জানালা। তবে অনেক কিছু পাল্টালেও, পরিবর্তন হয়নি লঞ্চের নাম। ‘বিশ্বপ্রেম’ লেখাটি এখনও জ্বলজ্বল করছে লঞ্চের গায়ে। রাজকুমারবাবু বলেন, ‘‘ছবিতে লঞ্চের গায়ে নামটা দেখা যায়। মানুষ যাতে চিনতে পারেন সেইজন্যই নাম পরিবর্তন করিনি।’’ এখন লঞ্চটি চালান বছর চব্বিশের রাজু দলুই। তিনি বলেন, ‘‘মালিকের কাছে সব শুনেছি। এই লঞ্চেই উত্তমকুমার শ্যুটিং করেছেন, ভাবলেই একটা শিহরণ জাগে।’’

বছর দুই আগে গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা। সেইসময়েই বিশ্বপ্রেমকে পর্যটনের কাজে ব্যবহার করার কথা হয়। সেই প্রকল্পের কী অবস্থা? প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘পর্যটন দফতর বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করছে। তাতে মহানায়কের ব্যবহার করা লঞ্চটির কথাও আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttam Kumar Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE