Advertisement
E-Paper

গাঁজার ধোঁয়ায় পথ ঢাকছে শৈবতীর্থের

শ্রাবণ মাস। তারকেশ্বরে পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। পুণ্যার্থীদের একাংশ প্রতিবারের মতো এ বারও মজেছেন গাঁজার নেশায়। প্রকাশ্য রাস্তাতেও কলকে জ্বলছে! সাধারণ মানুষ, পথচারী বা রাস্তার ধারের বাসিন্দারা গাঁজার কটূ গন্ধে বিরক্ত হচ্ছেন। সমস্যাতেও পড়ছেন। তাতে কী!    

প্রকাশ পাল ও দীপঙ্কর দে

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৮
‘পুণ্য’-অর্জন: মন্দির সংলগ্ন এলাকায় বসে গাঁজায় টান। নিজস্ব চিত্র

‘পুণ্য’-অর্জন: মন্দির সংলগ্ন এলাকায় বসে গাঁজায় টান। নিজস্ব চিত্র

গল গল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে নাক-মুখ থেকে! ক্ষণিকের বিরতির পরে আবার!

ধোঁয়া ছেড়েই আওয়াজ, ‘হর হর মহাদেব’! কখনও ‘ভোলেবাবা পার করেগা’! এ বছর শোনা যাচ্ছে ‘জয় শ্রীরাম’ও! বৈদ্যবাটী, শেওড়াফুলি থেকে তারকেশ্বর— শৈবতীর্থের গোটা পথ ঢাকছে জলযাত্রীদের একাংশের গাঁজার ধোঁয়ায়।

শ্রাবণ মাস। তারকেশ্বরে পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। পুণ্যার্থীদের একাংশ প্রতিবারের মতো এ বারও মজেছেন গাঁজার নেশায়। প্রকাশ্য রাস্তাতেও কলকে জ্বলছে! সাধারণ মানুষ, পথচারী বা রাস্তার ধারের বাসিন্দারা গাঁজার কটূ গন্ধে বিরক্ত হচ্ছেন। সমস্যাতেও পড়ছেন। তাতে কী!

শিবভক্তদের কাছে সোমবার ‘বাবার বার’ হিসেবে পরিচিত। শনি এবং রবিবার বহু কাতারে কাতারে পুণ্যার্থী বৈদ্যবাটীর নিমাইতীর্থ ঘাট বা লাগোয়া অন্য কয়েকটি ঘাট থেকে বাঁকে গঙ্গাজল তুলে হেঁটে তারকেশ্বর যান। এই তিনটি দিন বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোড কার্যত জলযাত্রীদের দখলে চলে যায়। পুণ্যার্জনের নামে গোটা পথ জুড়ে এক শ্রেণির পুণ্যার্থী গাঁজার টানে হুল্লোড়ে মাতেন। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরাও সামিল হন। ছোটে মদের ফোয়ারাও।

এত গাঁজা আসে কোথা থেকে?

শ্রাবণ মাস জুড়ে ওই তিন জায়গায় বহু অস্থায়ী পুজোর সামগ্রী বিক্রির দোকান গজিয়ে ওঠে। জলযাত্রীদের একাংশ বলছেন, ওই সব দোকানেই গাঁজা মেলে। ঝাঁকা মাথায় বিক্রেতাদের কাছেও পাওয়া যায়। ৫০ টাকায় ছোট এক পাউচ গাঁজা আর একটি কলকে। এটাই সবচেয়ে কম দাম। তার পরে যাঁর যেমন ইচ্ছে এবং পকেটের জোর! দোকানিরাও মানছেন, এই এক মাসে বিক্রি ভালই। কয়েক লক্ষ টাকার তো বটেই!

শনিবার বিকেলে শেওড়াফুলির মুখার্জি ঘাট থেকে জল তুলে যাত্রা শুরুর আগে বনগাঁ থেকে আসা একটি পুণ্যার্থী দল গাঁজায় সুখটান দিচ্ছিল। প্রকাশ্যে নেশা করা নিয়ে প্রশ্নে তাঁদেরই একজনের জবাব, ‘‘অতটা রাস্তা হাঁটব। কিচ্ছু মালুম হবে না। গাঁজার জোরেই পৌঁছে যাব!’’ পাশের ত্রিশক্তি ঘাটের ছবিও বিলকুল এক। ‌পড়ন্ত বিকেলে সেখানে বসেছিলেন কয়েকজন বৃদ্ধ। স্বগতোক্তির সুরে তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘সবাই সব জানে। এ সব রোধ হয় না।’’

শনিবারই হরিপালের বাসুদেবপুর মোড় থেকে খানিক এগিয়ে মাঠের ধারে দেখা গেল জলসত্রের আয়োজন। বড় বক্সে তারস্বরে গান। সঙ্গে উদ্দাম নাচ। উদ্যোক্তারা নাচছেন। জলযাত্রীরাও কোমর দোলাচ্ছেন। নাচের ঠেলায় ধাক্কার ভয়ে মহি‌লারা কোনও রকমে জায়গাটা পেরোচ্ছেন। খানিক দূর অন্তর রাস্তাতেই বসে জলযাত্রীদের ছোট-ছোট দল। হাতে মদ মেশানো ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। সঙ্গে গাঁজাও। বেলঘরিয়ার কার্তিক দেশমুখ স্ত্রী এবং প্রতিবেশীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই নিয়ে তিন বার যাচ্ছি। প্রতি বারেই তো গাঁজা-মদ আর হুল্লোড় চলতে দেখি। খারপ লাগে। কিন্তু কী করব?’’ অন্য এক জলযাত্রীর প্রশ্ন, ‘‘মাঝেমধ্যেই কাগজে পড়ি, পুলিশ গাঁজা উদ্ধার করেছে। গাঁজা উদ্ধার করা হয় না কেন?

এই প্রশ্নে পুলিশ নিরুত্তর। তবে, জেলার (গ্রামীণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করবে। বিভিন্ন থানা এলাকায় রাস্তায় মোটরবাইকে নজরদারি চালানো হয়। বেচাল দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ চন্দননগর কমিশনারেটের এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অম্লান ঘোষ বলেন, ‘‘নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি প্রহরা থাকে। অতিরিক্ত কিছু হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখনও কোনও অভিযোগ পুলিশ পায়নি। বাকি দিনগুলিতেও কড়া নজরদারি চালানো হবে।’’

তারকেশ্বর মন্দিরের মোহন্ত মহারাজ সুরেশ্বর আশ্রম বলেন, ‘‘শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে এখানে বহু মানুষ আসেন। কিছু হোটেলে নেশার চক্র রয়েছে। তবে এটা দেখা মন্দির কর্তৃপক্ষের কাজ নয়। আমি পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করি। মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।’’

Marijuana Smoking Tarakeswar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy