Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাসের দেখা নাই রে...

কয়েক বছর ধরে দুই জেলার অনেক বাসরুটই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছু চালু থাকলেও কমছে বাসের সংখ্যা। বাড়ছে অটো, টোটো বা যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির দাপট। কেন গণ-পরিবহণের অন্যতম ভরসা বাসের এই হাল? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ, হাওড়া। অটো-টোটোর দাপটে হুগলিতে বাস-শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। লোকসানের জেরে গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়েছে বহু বাসরুট।

ভ্যািনশ: বাগনান স্ট্যান্ডে দেখা নেই একটি বাসেরও। ছবি: সুব্রত জানা

ভ্যািনশ: বাগনান স্ট্যান্ডে দেখা নেই একটি বাসেরও। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫০
Share: Save:

ছবিটা একই। তফাত শুধু বাসরুটের নামে।

অটো-টোটোর দাপটে হুগলিতে বাস-শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। লোকসানের জেরে গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়েছে বহু বাসরুট। চালু রুটেও কমছে বাসের সংখ্যা। পাশের জেলা হাওড়াতেও একই সঙ্কটে ভুগছে বাস-শিল্প। এখানেও পরিস্থিতির জন্য ভাড়া না বাড়নোর সরকারি নীতিকেই দুষছেন বাস-মালিকদের একটা বড় অংশ।

বছর দশেক আগেও হাওড়াতে মোট বাসরুটের সংখ্যা ছিল ৫২। তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ রুটে বাস চলাচল পুরো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির অধিকাংশই ধুঁকছে। নতুন বাস রাস্তায় নামছে না। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক পার্থ মুখোপাধ্যায়ও বাস-শিল্পে সঙ্কটের কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো বাসের পারমিট দেওয়ার জন্য বসে আছি। মালিকেরা নতুন বাস নিয়ে এলেই দিয়ে দেব। কিন্তু প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না।’’ জেলার বাস-মালিকেরা পাল্টা জানিয়েছেন, অটো এবং ছোট গাড়ির রমরমা যে ভাবে বেড়েছে, তাতে নতুন বাস নামিয়ে লাভ হবে না।

অথচ, কলকাতা লাগোয়া জেলা হওয়ায় এক সময়ে হাওড়ার প্রতিটি বাসরুটেই যাত্রীর অভাব হতো না। যাত্রীর অভাব এখনও নেই। বরং বেড়েছে। কিন্তু বাস না-থাকায় সেই যাত্রীরাই বাড়তি ভাড়া গুনে অটো বা ছোট গাড়িতে সওয়ার হচ্ছেন। গত কয়েক বছরে বাকসি-হাওড়া, গাদিয়াড়া-হাওড়া, মাথাপাড়া-হাওড়া ছাড়াও আরও অন্তত ১১টি রুটের বাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মুন্সিরহাট-হাওড়া এবং পেঁড়ো-হাওড়া রুটে বছর দশেক আগেও প্রায় ১০০টি মিনিবাস চলত। বর্তমানে তার সংখ্যা ঠেকেছে মাত্র কুড়িটিতে। ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ প্রকল্পে শ্যামপুর-ধর্মতলা রুটে বেশ কয়েকটি ঝাঁ-চকচকে বাস নামানো হয়েছিল কয়েক বছর আগে। সেই সব বাস এখন পড়ে আছে আস্তাকুঁড়ে। দু’একটি বাসরুট কমিয়ে বাগনান-ধর্মতলা করা হয়েছে।

হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্তারা মনে করছেন, ১৫ বছরের বেশি বয়সী বাস রাস্তায় নামতে না-দেওয়া নিয়ে আদালতের নির্দেশ জারির পর থেকেই এই শিল্পে সঙ্কটের শুরু। কিন্তু বাস-মালিকেরা বেশি ক্ষুব্ধ সরকারি ভাড়ার হার নিয়ে। তাঁদের মতে, সরকার যে ভাড়া নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে, তাতে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। জেলা বাস-মালিক সংগঠনের সভাপতি অসিত পণ্ডিত বলেন, ‘‘লাভ না-হলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বাস নামাবেন কেন মালিকেরা?’’

লোকসান ঠেকাতে বাস চালানো বন্ধ করছেন মালিকেরা। তাতে যাত্রীদের পকেট খালি হচ্ছে। কারণ, গন্তব্যে পৌঁছতে বারবার অটো-টোটো বা ছোট গাড়ি বদল করতে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা কোলাঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার যাত্রীদের। উলুবেড়িয়া-কোলাঘাট রুট এবং কোলাঘাট-বাগনান রুটের মিনিবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনও বাসই আর নেই। ফলে, ভরসা অটো। মুম্বই রোড দিয়ে বাড়তি যাত্রী নিয়ে ছুটছে অটোগুলি। তার জেরে দুর্ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীদের আক্ষেপ, এ ভাবে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। খুব সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে বাগনান-গাদিয়াড়া এবং বাগনান-গড়চুমুক রুটের বাসও। ফলে, শ্যামপুর থেকে যে সব যাত্রী যাতায়াত করেন তাঁরা বাধ্য হয়ে অটো বা ছোট গাড়িতে হোগলাসি মোড় পর্যন্ত আসতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপরে তাঁরা কমলপুর-বাগনান রুটের বাস ধরে বাগনানে আসছেন।

অটো এবং ছোট গাড়ির চালকদের পাল্টা অভিযোগ, এক সময়ে বাস চলাচলের ক্ষেত্রে কোনও সময়সীমা মানা হত না। যাত্রীরা বিরক্ত হয়েই অটো বা ছোট গাড়িতে ওঠা শুরু করেন। এখন অটো-ছোট গাড়ির দাপটের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এক অটো চালকের দাবি, ‘‘যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন বাস কন্ডাক্টর ও চালকেরা। এখন কেঁদে কী হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Jam Transportation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE