Advertisement
E-Paper

একুশের ভোগান্তি দুই জেলা জুড়েই

তপন রায় নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘বর্ধমান যাব। চারজন মিলে ৮০০ টাকায় একটি গাড়ি ভাড়া করতে হল।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গাড়িগুলো অতিরিক্ত ভাড়া কেন চাইছে, পুলিশ-প্রশাসনের তা দেখা উচিত ছিল।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০২:২৯
আয়োজন: ভিড়ের জন্য সভায় পৌঁছতেই পারলেন না অনেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তাঁদের জম্য ডানকুনি টোলপ্লাজার কাছে খাবারের ব্যবস্থা।

আয়োজন: ভিড়ের জন্য সভায় পৌঁছতেই পারলেন না অনেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তাঁদের জম্য ডানকুনি টোলপ্লাজার কাছে খাবারের ব্যবস্থা।

কলকাতায় একুশে জুলাইয়ের সভা। তার উপরে সকাল থেকে বৃষ্টি একনাগাড়ে। দুইয়ে মিলে শনিবার রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি অনেক অফিসেই ছুটি, তাই নিত্যযাত্রীদের চাপ রাস্তায় ছিল কম। কিন্তু তার বাইরেও বহু মানুষ বেরিয়েছিলেন, গন্তব্যে পৌঁছতে যাঁদের রীতিমতো ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

সমাবেশের জন্য প্রচুর বাস তুলে নেওয়া হয়েছিল। ট্রেনেও ছিল না তিল ধারণের জায়গা। হাওড়া এবং হুগলি— দুই জেলাতে একই ছবি।

সকাল ৬টা

আরামবাগ শহরে বেশ কয়েকটি বাস পরপর দাঁড়িয়ে। তবে কোনওটাই সাধারণ যাত্রীদের জন্য নয়। সবক’টিরই গন্তব্য একুশের সমাবেশ।

সকাল সাড়ে ৭টা

বাগনান, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া স্টেশনে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। সকাল ১০টা পর্যন্ত একই পরিস্থিতি। মুম্বই রোড-সহ আমতা, শ্যামপুর, বাগনান, জগৎবল্লভপুর প্রভৃতি এলাকার রাস্তা চলে গিয়েছে সভামুখী বাস, ছোট গাড়ি, ট্রেকারের দখলে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের
হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের লোকাল ট্রেনে ভিড়ের চোটে সাধারণ যাত্রীদের চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা। বাগনান, উলুবেড়িয়া, রানিহাটি, পাঁচলা, ধুলগড়ি, আলমপুর প্রভৃতি জায়গা দিয়ে একের পর এক বাস সমাবেশের দিকে গিয়েছে। যে বাসগুলি সমাবেশে যাচ্ছে না, সেগুলিকে হাত দেখালেও দাঁড়ায়নি। কারণ সেখানে পা রাখার জায়গাও ছিল না। বাস-ট্রেনে উঠতে না পেরে কেউ কেউ বাড়িতে ফিরে যান।

সকাল সাড়ে ৮টা

শ্রীরামপুর স্টেশনের এসে থামছে বিভিন্ন শাখার হাওড়াগামী ডাউন ট্রেন। কোনটা কাটোয়া লোকাল, কোনটা তারকেশ্বর, কোনটা বর্ধমান। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের বেশির ভাগই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। ট্রেনের কামরায় পা ফেলার জায়গাটুকুও মেলেনি। ভিড়ে উঠতে না পেরে অনেকে দু’-একটা ট্রেন ছেড়েও দিলেন বেশ কয়েকজন।

সকাল সাড়ে ৯টা

কোন্নগরের জিটি রোডে অটোর জন্য লম্বা লাইন। বালিখালের অটো ধরার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন‌ শ্রীরামপুরের সুরজিৎ সরকার। প্রায় আধঘণ্টা পরে অটোতে উঠতে পারলেন। তাঁর গন্তব্য সিঁথির মোড়। জানালেন, অন্য দি‌ন ট্রেন ধরে বালিতে নেমে বাসে চেপে যান। এ দিন সমাবেশের কারণে সড়ক পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানেও বাস মেলেনি। ছ’বার অটো-টোটো বদলে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে তাঁকে। অন‌্য দিন যেখানে ১৬ থেকে ২০ টাকা লাগে, এ দিন খরচ হবে প্রায় ৫৬ টাকা।

সকাল সাড়ে ১০টা

আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড চত্বরে সাধারণ যাত্রীদের ভরসা ভাড়ার গাড়ি, ছোট ট্রাক, ইঞ্জিন-চালিত ভ্যান। সুযোগ বুঝে তারা আবার ভাড়া হাঁকল অনেক বেশি। তপন রায় নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘বর্ধমান যাব। চারজন মিলে ৮০০ টাকায় একটি গাড়ি ভাড়া করতে হল।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গাড়িগুলো অতিরিক্ত ভাড়া কেন চাইছে, পুলিশ-প্রশাসনের তা দেখা উচিত ছিল।’’ গন্তব্যে পৌঁছনো, বেশি খরচ, ভোগান্তির ছবি সর্বত্র একই রকম। সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চুঁচুড়া স্টেশনে নিত্যযাত্রীদের অনেকে ভিড়ের চোটে ট্রেন ধরতে পারেননি। জেলা সদরে আসতে মানুষকে নাকাল হতে হয়েছে। অজিত বাগ নামে ধনেখালির এক বৃদ্ধ চুঁচুড়া আদালতে এসেছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘ধনেখালি থেকে সরাসরি বাসে চুঁচুড়ায় আসি। অপেক্ষা করেও আজ বাস পেলাম না। ট্রেকার, টোটো বদলে পৌঁছতে হল। খরচ অনেক বেশি হল।’’ গুড়াপের সুষমা মাণ্ডির স্বামী ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকেও পৌঁছতে হল গাড়ি বদল করে।

থমকে: সভার জেরে শুক্রবার রাত থেকে বৈঁচির কোচমালিতে নো-এন্ট্রিতে আটকে ট্রাক।

বেলা ১২টা

চুঁচুড়া-মেমারি লোকাল বাস উধাও! পান্ডুয়ার বেলুন গ্রামের তুলসি ক্ষেত্রপাল ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ ভাইকে দেখতে যাওয়ার জন্য বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। জানালেন, দু’ঘণ্টা ধরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। শেষে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

দুপুরে দেড়টা

দু’টো নাগাদ শেষ হয়েছে সভা। ভোগান্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু সেখানেই। ঘরমুখী মানুষের হয়রানি একই রকম থেকেছে সন্ধ্যা থেকে
রাত পর্যন্ত।

বিকেল ৪টে

বাগনান, উলুবেড়িয়াগামী ট্রেন-বাস সমাবেশ ফেরত লোকজনের ভিড়ে ঠাসা। তাতেই গাদাগাদি করে উঠে ফিরতে হয় সাধারণ যাত্রীদেরও।

বিকেল ৫টা

ডানকুনি স্টেশন। কর্ড শাখায় হাওড়া থেকে বর্ধমানগামী ট্রেনের কামরায় ঝুলতে ঝুলতে ফিরছেন মানুষ। ওই সময়ের আগে বা পরের কয়েকটি ট্রেনেও ছিল একই ছবি। বৃষ্টি নাগাড়ে পড়েই চলেছে। আর বৃষ্টি মাথায় করে চলল দিনভরের
এই ভোগান্তি।

TMC Martyr's Day Howrah Hoogly Transport Sufferings
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy