Advertisement
E-Paper

ধসেছে উঠোন, ঝড়ে ঠাঁইহারা তিন পরিবার

আচমকাই ধস নামল সোমনাথদের উঠোনে।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০৪:৫৯
বিমর্ষ: ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে সোমনাথ। নিজস্ব চিত্র

বিমর্ষ: ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে সোমনাথ। নিজস্ব চিত্র

যত বিকেল গড়াচ্ছিল, শোঁ শোঁ আওয়াজটা ক্রমে বাড়ছিল। হাওয়ার সেই গর্জন শুনে সোমনাথ ভাবছিলেন, গঙ্গা নয়, বুঝি সমুদ্রের পাড়ে তাঁদের বসত!

বুধবার রাত তখন প্রায় সওয়া ৮টা। আচমকাই ধস নামল সোমনাথদের উঠোনে। সামনের গার্ড-ওয়াল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। শৌচাগার চলে গেল পাশের খালের জলে। যেন তাসের ঘর!

সে দিনের কথা বলতে গিয়ে সোমবারও সোমনাথের গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। বাবা- মা, কাকা-কাকিমা, ঠাকুমাকে নিয়ে শ্রীরামপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশুতোষ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা ওই কলেজছাত্রকে এখন মাথা গুঁজতে হয়েছে পাশের নেহরুনগর জিএসএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একই দশা তাঁর দুই পড়শি পরিবারেরও। তিনটি বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সোমনাথের কথায়, ‘‘সে দিন মনে হচ্ছিল, এ বার বুঝি টালির চালের আস্ত বাড়িটাই মাথায় ভেঙে পড়বে। টিউবলাইটের আলো নিভুনিভু। রাস্তার আলো নিভে গিয়েছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানে প্রবল গতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে বৃষ্টি। ঝড়ে আছাড়ি-পিছাড়ি করছে সব গাছ। পাশে তরুণকাকাদের পাকা বাড়িটাও ঝড়ের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছিল। সেখানেও এক উঠোন ধস।’’ সোমনাথের মা এবং কাকিমা দু’জনেই অসুস্থ। স্নায়ুরোগী। প্রকৃতির তাণ্ডব দেখে মা সংজ্ঞা হারান। চোখেমুখে জলের ঝাপটা দেওয়ায় জ্ঞান ফিরতেই তাঁকে প্রায় পাঁজাকোলা করে ঝঞ্ঝার মধ্যেই সকলে বেরিয়ে পড়ন। মাথা গোঁজেন পাশে আত্মীয়ের ভাড়াবাড়িতে। সোমনাথের বাবা রাজেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওখানে আমার মামা-মামিমা আর দিদিমা একটা ঘরে থাকেন। সেই ছোট ঘরেই আমি, বউ ছেলে, ভাই আর ভাইয়ের বউ বসে থেকে রাতটা কাটিয়ে দিই। অমন দুঃস্বপ্নের রাত দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। প্রকৃতি যেন গিলে খেতে চাইছিল। মৃত্যুভয় টের পাচ্ছিলাম। কোনও দিন ভুলব না।’’বিপদে পড়ে ওই রাতেই সোমনাথরা যোগাযোগ করেন বিদায়ী কাউন্সিলর অসীম পণ্ডিতের সঙ্গে। পরের সকালে অসীম পরিস্থিতি দেখে যান। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যান পাশের ইটভাটায়। খালটা নাকি ইটভাটার! গঙ্গার জোয়ার-ভাঁটায় পলি পড়ে সেখানে। তা দিয়ে ইট তৈরি হয়। খালের জন্যই মাটি নরম হয়ে তাঁদের বাড়ির এই বিপত্তি। ভাটা-মালিককে তাঁরা অনুরোধ করেন, তিনি যেন কিছু একটা ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি।

সে দিনই ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরিবার আশ্রয় নেয় পাশের স্কুলে। ধসের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ঘর থেকে কোনও রকমে বের করে আনেন গেরস্থালির জিনিস। শ্রীরামপুর কলেজের বায়ো সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সোমনাথ বুকে জড়িয়ে বের করে আনেন বইখাতা। এখন স্কুলের ঘরেই চলছে তাঁদের ঘরকন্না। পুর-কর্তৃপক্ষ, মহকুমাশাসক— সকলের কাছেই লিখিত ভাবে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

রাজেশ বিদ্যুৎ মিস্ত্রি। লকডাউনে এমনিতেই কাজ বন্ধ। রোজগার শূন্য। দু’বেলার ডাল-ভাত, স্ত্রীর ওষুধ-সহ সংসার খরচ সামলাতে এমনিতেই ধারদেনা হয়ে গিয়েছে। লকডাউনের সঙ্গে এ বার আমপানের সাঁড়াশি চাপে আরও চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থা। দু’-একটি সংস্থা বা ব্যক্তিগত ভাবেও কেউ অবশ্য খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। পড়শিরাও দাঁড়াচ্ছেন পাশে। কিন্তু তাতেও কী চিন্তা দূর হয়!রাজেশের কথায়, ‘‘স্কুল বলেছে, পয়লা জুনের মধ্যে ওদের ঘর ছেড়ে দিতে। তার পরে ছ’জন মিলে কোথায় গিয়ে উঠব!’’

আমপান চলে গিয়েছে। তার বিধ্বংসী দাপটের চিহ্ন রেখে গিয়েছে খালপাড়ের তিন বাড়িতে। আরও বেশি ক্ষতচিহ্ন তৈরি করেছে বাসিন্দাদের মনে। ক্ষতিপূরণ হবে কী ভাবে, সেই উত্তরই খুঁজে ফিরছেন সোমনাথ এবং বাকিরা।

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy