বছর খানেক আগের কথা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছিলেন বছর পঞ্চাশের সিদাম সাহা। হঠাৎ মোটরবাইকে করে এসে দু’টো ছেলে মোবাইলটা ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে চলে গেল। থানা-পুলিশ করেও সেই মোবাইল আর খুঁজে পাননি শ্রীরামপুরের আইসক্রিম ব্যবসায়ী সিদামবাবু।
শ্রীরামপুর, কোন্নগর, উত্তরপাড়ায় বেশ কিছু দিন ধরেই কখনও কান থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া, কখনও মহিলাদের কাঁধ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ জেরবার হচ্ছিল। তদন্তে নেমে শুক্রবার রাতে দুই তরুণকে গ্রেফতার করেছে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের এক জন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপর জন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। একই অভিযোগে পুলিশ তাঁদের আরও দুই সঙ্গীকে ধরেছে। তবে বয়সে নাবালক হওয়ায় তাদের সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে কোন্নগরে এক মহিলার হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দু’টি ছেলে। মহিলা ওই মোটরবাইকের নম্বর দেখে নিতে পেরেছিলেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে বাইকটি ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন ছেলে দু’টিকে বমাল ধরে ফেলেন। উত্তরপাড়া থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, জেরায় তারা শ্রীরামপুরের কয়েকটি ছেলের কথা জানায়। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন শ্রীরামপুর থানার আইসি নন্দদুলাল ঘোষ। শুক্রবার রাতে চারটি ছেলেকে থানায় ধরে আনা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় দু’টি মোটরবাইক। উদ্ধার করা হয় একটি মোবাইল। পুলিশ জানায়, একটি ছেলে মাহেশের একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। অন্য জন নওগাঁ এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। বয়সের কথা বিবেচনা করে পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। আঠেরো বছর পেরনো অপর দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এঁদের মধ্যে এক জন থাকে শহরের আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় লেনে। সে বেসরকারি ইঞ্জিয়ারিং কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। অপর জনের বাড়ি জীতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী রোডে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার তোড়জোড় করছেন। ধৃতদের শনিবার শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে ২ দিন পুলিশ হেফাজত হয়।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ওই ছাত্রেরা অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া তরুণ এবং নবম শ্রেণির পড়ুয়া কিশোর মোটরবাইক নিয়ে আসতেন। তাতে চেপে তারা ‘কাজে’ বেরত। হাত খরচের টাকা জোগাড়ের জন্য এই ‘সহজ রাস্তা’ নিয়েছিলেন। ধৃতদের জেরা করে এক দোকানদারের কাছ থেকে পুলিশ একটি মোবাইল উদ্ধার করে। ধৃতেরা জানায়, কোন্নগরের রাস্তায় এক ব্যক্তির থেকে মোবাইলটি তাঁরা হাতিয়েছিল। তাঁরা পুলিশকে আরও জানিয়েছে, শ্রীরামপুরের আরও একটি ছেলে তাঁদের সঙ্গে ছিল। সে সম্প্রতি দিল্লিতে চলে গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নাবালক ছেলে দু’টির বাড়ির লোকজনকে ডেকে বলা হয়েছে, তাদের উপরে নজরে রাখতে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাতে।’’ কী বলছেন মনোবিদেরা। মনোবিদ মোহিত রণদীপ মনে করেন, ‘‘শিশুরা কিছু চাইলেই বাড়ির লোকের কাছে প্রথমে হয়তো না শুনতে হয়। পরে বেশি বায়না করলে বাড়ির কেউ না কেউ তা দিয়ে দেয়। এই ভাবে চাহিদা বাড়ে। চাহিদা মতো না পেলে তাদের মন খারাপ হয়। ভুল কিছু একটা করেও ফেলে অনেক সময়। তাদের বোঝানো উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy