Advertisement
E-Paper

‘রূপশ্রী’র অর্থে বিয়ের ভোজে থার্মোকলে না

পিকনিকের মরসুম শুরুর আগে এই ব্লকের গড়চুমুকে প্লাস্টিক-থার্মোকলের থালা-বাটিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। এ বার গোটা ব্লকেই প্লাস্টিক ও থার্মোকলের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছে তারা। শুরু হয়েছে প্রচার।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪০
প্রতিশ্রুতি: এই সেই অঙ্গীকারপত্র। নিজস্ব চিত্র

প্রতিশ্রুতি: এই সেই অঙ্গীকারপত্র। নিজস্ব চিত্র

‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের টাকায় মেয়ের বিয়ে দিতে চান শ্যামপুর-১ ব্লকের ভাগীরথী দাস। নিয়মমাফিক ব্লক অফিসে আবেদন করেছেন। কিন্তু সঙ্গে অঙ্গীকারপত্রেও সই করতে হয়েছে। তবেই মিলবে টাকা।

কীসের অঙ্গীকার? মেয়ের বিয়েতে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের থালা-বাটি-গ্লাস-কাপ ব্যবহার করা যাবে না।

আপত্তি জানাননি ভাগীরথীদেবী। সই করে দিয়েছেন। তাঁর আবেদনপত্রও অনুমোদিত হয়েছে। মেয়ের বিয়ে নিয়ে এখন তিনি বেজায় ব্যস্ত। তাঁর কথায়, ‘‘বিডিও সাহেব যখন বলছেন, তখন প্লাস্টিক বা থার্মোকলের থালা-বাটি নিশ্চয় ক্ষতিকর। আমি শালপাতায় নিমন্ত্রিতদের খাওয়াব।’’

ওই প্রকল্পে মেয়ের বিয়ের জন্য একই ভাবে অঙ্গীকারপত্রে সই করেছেন গুজারপুরের মধুসূদন মণ্ডলও। আগামী ২৮ জানুয়ারি বিয়ে। তিনিও বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব।’’

এ বার পিকনিকের মরসুম শুরুর আগে এই ব্লকের গড়চুমুকে প্লাস্টিক-থার্মোকলের থালা-বাটিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। এ বার গোটা ব্লকেই প্লাস্টিক ও থার্মোকলের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছে তারা। শুরু হয়েছে প্রচার। অন্য বিয়েবাড়ি এবং অনুষ্ঠানবাড়িতেও যাতে প্লাস্টিক-থার্মোকল বর্জন করা হয়, সেই প্রচারও চলছে। গ্রামসম্পদ কর্মী এবং বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যদের নিয়ে ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতি একাধিক দল তৈরি করেছে। দলের সদস্যেরা প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নামছেন। বিডিও সঞ্চয়ন পান বলেন, ‘‘আপাতত পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে থার্মোকল ও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এ বারে বাকি এলাকাগুলিতেও করা হবে। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে।’’

অবশ্য ইতিমধ্যে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের বিয়েবাড়িতে থার্মোকল-প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরো বন্ধ করা গিয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের দাবি। কারণ, শুধু অঙ্গীকারপত্রে সই করিয়ে নেওয়াই নয়, কনের অভিভাবকেরা সেই অঙ্গীকার যথাযথ মানছেন কিনা, তা বিয়েবাড়িতে গিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ওই কর্তারা জানিয়েছেন। এ জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নাসরিন শেখ, সহ-সভাপতি প্রশান্ত মণ্ডল এবং কর্মাধ্যক্ষদের নিয়ে ‘টিম’ তৈরি করেছেন বিডিও।

নাসরিন বলেন, ‘‘অঙ্গীকারপত্র তৈরির বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠকে স্থির হয়। সে ভাবেই কাজ চলছে। কাউকে জোর করতে হয়নি। স্বেচ্ছায় সকলে অঙ্গীকারপত্রে সই করছেন। ইতিমধ্যেই রূপশ্রী প্রকল্পের অনুদানে কয়েকটি মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সব জায়গায় হয় শালপাতা নয়তো কাগজের থালাবাটি ব্যবহার করা হয়েছে।’’

এই সাফল্য অন্য ক্ষেত্রে এখনও অধরা কেন? নাসরিনের দাবি, ‘‘যেহেতু রূপশ্রী প্রকল্পটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেই কারণে মেয়ের পরিবার আমাদের কাছে আসতে বাধ্য। সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারছি। আশা করি এই উদাহরণ দেখে অন্যেরাও প্লাস্টিক ব্যবহার না-করার দিকে ঝুঁকবেন।’’

শ্যামপুর-১ ব্লকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্য ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘আমরাও প্লাস্টিক-থার্মোকলের থালাবাটি ব্যবহার না করার জন্য রূপশ্রী-র প্রাপকদের অনুরোধ করি। আগামী দিনে সুসংহত ভাবে কিছু করার ইচ্ছা আছে।’’ ডোমজুড়ের বিডিও রাজা মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘শ্যামপুর-১ ব্লকের বিষয়টি তারিফ করার মতো। আমরাও নতুন কিছু করার কথা ভাবছি।’’

Thermocol Rupashree Marriage party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy