Advertisement
E-Paper

হাওড়ায় জলে ডুবে মৃত ৩

বন্ধুদের দাবি, খেলার শেষে সকাল ন’টা নাগাদ মাঠের পাশে নির্মীয়মাণ খালের জলে হাত-পা ধুতে গিয়ে পা হড়কে গভীর জলে তলিয়ে যায় রোহন। সাঁতার না জানায় আর পাড়ে উঠতে পারেনি সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫৫
সৌমেন পোদ্দার ও রোহন আচার্য।

সৌমেন পোদ্দার ও রোহন আচার্য।

হাওড়ার বিভিন্ন প্রান্তে তিনটি ঘটনায় জলে ডুবে মৃত্যু হল তিন জনের। যার মধ্যে দু’জন দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া এবং এক জন প্রৌঢ়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া। শনিবার এই ঘটনাগুলি ঘটেছে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিন-তিনটি মৃত্যু ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর গড়ে তুলতে প্রশাসনিক ব্যর্থতার পাশাপাশি সেখানে প্রশিক্ষিত ডুবুরিরও অভাব রয়েছে। কারণ, একটি ঘটনাতেও পুলিশ, পুরসভা বা দমকল— উদ্ধারকাজে কেউই ডুবুরি নামাতে পারেনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার ডুমুরজলায়, সৌন্দর্যায়নের জন্য গভীর করে কাটা একটি খালে। দ্বিতীয়টি ঘটে দানেশ শেখ লেনের একটি পুকুরে এবং পরেরটি লিলুয়ার চকপাড়ার একটি পুকুরে। এ দিন সকালে ডুমুরজলায় হেলিপ্যাডের পাশের মাঠে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল রামরাজাতলার চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা, বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রোহন আচার্য (১৮)। বন্ধুদের দাবি, খেলার শেষে সকাল ন’টা নাগাদ মাঠের পাশে নির্মীয়মাণ খালের জলে হাত-পা ধুতে গিয়ে পা হড়কে গভীর জলে তলিয়ে যায় রোহন। সাঁতার না জানায় আর পাড়ে উঠতে পারেনি সে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ। আসে দমকলের একটি ইঞ্জিনও। রোহনের বন্ধুরা তার বাবা-মাকে খবর দিলে তাঁরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ঘণ্টাখানেক পরে ডুবে যাওয়া ছাত্রটিকে এলাকার যুবকেরাই উদ্ধার করেন। তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এই ঘটনার খবর চৌধুরীপাড়ায় পৌঁছতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা কবিতা আচার্য কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। মৃত ছাত্রের বাবা বলেন, ‘‘প্রতি শনি ও রবিবার বন্ধুদের সঙ্গে ও মাঠে খেলতে যেত। সাঁতার জানত না বলে পুকুরে নামত না। আজ যে কী হল, বুঝতে পারছি না।’’

উদ্ধার: ডুমুরজলার খাল থেকে তুলে আনা হচ্ছে রোহনকে। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

অন্য দিকে, প্রায় একই সময়ে দানেশ শেখ লেনের সরকারি আবাসনের ভিতরে মাঠে ফুটবল খেলার পরে স্থানীয় পুকুরে স্নান করতে গিয়ে জলে তলিয়ে যায় দুই ছাত্র। দু’জনকেই উদ্ধার করা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও সঙ্গী খেলোয়াড়দের তৎপরতায়। এক জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দক্ষিণ হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য জনকে নেওয়া হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। দক্ষিণ হাওড়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সৌমেন পোদ্দার (১৭) নামে ওই ছাত্রকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, সৌমেন হাওড়ার একটি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাড়ি দানেশ শেখ লেনের সরকারি আবাসনে। ওই ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রটির নাম সুমিত দত্ত (১৭)। সে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। দানেশ শেখ লেনের বাসিন্দা ওই ছাত্রটি সৌমেনের মতোই বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, এ ক্ষেত্রেও খেলার শেষে হাত-পা ধোয়ার সময়ে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে জলে পড়ে যায় সৌমেন। সে-ও সাঁতার জানত না। তাকে বাঁচাতে গিয়েই জলে পড়ে যায় সুমিত। খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এই দু’টি ঘটনার পরে লিলুয়ায় একটি পুকুরে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যান এক প্রৌঢ়। তাঁর নাম অসিত পাল (৫৫)।

এ দিকে, জলে ডুবে পরপর তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় হাওড়া জেলায় আধুনিক মানের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কেন নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। হাওড়ায় দমকলের বিভাগীয় প্রধান প্রশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘‘দমকলের তো ডুবুরি নেই। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হয়।’’ এ বিষয়ে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থাভাবে তা এখনও বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।’’

Death Drowning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy