দলের ‘দুর্নীতিপরায়ণ’, ‘ধান্দাবাজ’দের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে পদত্যাগ করলেন হুগলির জাঙ্গিপাড়া ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দেবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত জাঙ্গিপাড়ার বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারেও ওই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। বুধবার দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের কার্যালয়ে গিয়ে তিনি পদত্যাগের চিঠি জমা দেন।
দেবদাসবাবু জাঙ্গিপাড়া থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য দীপাণ্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী। স্বভাবতই দেবদাসবাবুর পদত্যাগের খবরে দলের অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। স্নেহাশিসবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে টিকিট দিয়েছেন। অন্য কেউ নন। আর আমি গত পাঁচ বছরে কী কাজ করেছি, তা মানুষ জানেন।’’ শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুরের বাসিন্দা স্নেহাশিসবাবু আরও সংযোজন, ‘‘আসলে দীপাণ্বিতাকে প্রার্থী করতে প্রবল চেষ্টা করেছিলেন দেবদাস। তা না হওয়াতেই আমার বিরুদ্ধে নানা কথা বলছেন।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, দেবদাসবাবু দলের পুরনো কর্মী। এ বার যাতে জাঙ্গিপাড়ায় স্নেহাশিসবাবুকে প্রার্থী না করা হয়, সে জন্য দলের নেতাদের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন অনেকেই। দেবদাসবাবুও তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রায় সব স্তরে আবেদন জানান। কিন্তু সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি। এতেই দলের স্থানীয় নেতাদের একাংশ মনক্ষুণ্ণ হন। পান্ডুয়া বা সিঙ্গুরের মতো সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে না এলেও ধিকিধিকি আগুন জ্বলছিলই। এ বার প্রকাশ্যে চলে এল।
চিঠিতে স্নেহাশিসবাবুকে ‘বহিরাগত, পরিযায়ী পাখি, ‘লবিবাজ’ এবং ব্লকের সমস্ত ‘নোংরামি’র মাথা বলে অভিহিত করেন বিক্ষুব্ধ ওই নেতা। চিঠিতে তিনি লেখেন, যে দলে জার্সিবদলকারীরা কিংবা দলের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের আখের গোছানো ধান্দাবাজদের অগ্রাধিকার, সেখানে তাঁদের মতো কর্মীর মতামতের কোনও গুরুত্ব নেই। এ ব্যাপারে দেবদাসবাবু বলেন, ‘‘দিদিই যে প্রার্থী করেছেন জানি। কিন্তু দিদির ছবিকে সামনে রেখে যাঁরা পকেট ভরাচ্ছেন, তার প্রতিবাদ না করে পারছি না। ব্লকের যে কোনও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাকে প্রার্থী করলেই মানুষ তাঁকে গ্রহণ করতেন। এ ক্ষেত্রে তা হল না।’’ স্ত্রীকে প্রার্থী করা হোক— এই যুক্তি ঠিক নয় বলে দাবি ওই বিক্ষুব্ধ নেতার।
এক দিকে নারদ-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব বিব্রত। এই পরিস্থিতিতে জাঙ্গিপাড়ায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের নেতাই নানা অভিযোগ তোলায় শাসক দলের অস্বস্তি বাড়ল বই কমল না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত অবশ্য সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘দেবদাসের কাছ থেকে কোনও চিঠি পাইনি। তবে, প্রার্থী ঠিক করে দল। প্রার্থীকে কারও পছন্দ নাও হতে পারে। উনি পদত্যাগ করলে দলের ক্ষতি হবে না। নির্বাচনে প্রভাবও পড়বে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy