Advertisement
E-Paper

সঞ্জয়ের দাপট কি কমবে, চর্চা পান্ডুয়ায়

জল্পনা ছিল বিস্তর। শেষ পর্যন্ত পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা শাসক দ‌লের দাপুটে নেতা সঞ্জয় ঘোষের দলীয় কার্যালয় গুঁড়িয়ে গেল। আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ-প্রশাসন পান্ডুয়া হাসপাতালের পাশেই তেলিপাড়া মোড়ে জিটি রোডের ধারে দু’বছর আগে গড়ে ওঠা ওই ‘বেআইনি’ নির্মাণ ভেঙে দেয়

সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৭
অভিযুক্ত: সঞ্জয় ঘোষ।

অভিযুক্ত: সঞ্জয় ঘোষ।

জল্পনা ছিল বিস্তর। শেষ পর্যন্ত পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা শাসক দ‌লের দাপুটে নেতা সঞ্জয় ঘোষের দলীয় কার্যালয় গুঁড়িয়ে গেল। আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ-প্রশাসন পান্ডুয়া হাসপাতালের পাশেই তেলিপাড়া মোড়ে জিটি রোডের ধারে দু’বছর আগে গড়ে ওঠা ওই ‘বেআইনি’ নির্মাণ ভেঙে দেয়। বুধবার এলাকা জুড়ে এ নিয়েই জোর আলোচনা চলল। চায়ের দোকানে, রকের আড্ডা— সর্বত্রই প্রশ্ন এ বার কি সঞ্জয়ের ‘দাপট’ কিছুটা হলেও কমবে? একই বিতর্কে শোরগোল তৃণমূ‌লের অন্দরেও।

তেলিপাড়ার এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘ওই নেতা যা খুশি তাই করছিলেন। তার ফল পেলেন। সাধারণ মানুষের থেকে টাকা নিয়েই ঝাঁ-চকচকে কার্যালয়টি তৈরি হয়েছিল।’’ কার্যালয়টি ভেঙে যাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও! তাঁদের বক্তব্য, ওই কার্যালয়টি ছিল বিজেপি কার্যালয়ের গায়েই। দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় রোজই ঝামেলা লেগে থাকত। থানা-পুলিশ হত। গোলমালের জেরে বেচাকেনা লাটে উঠত। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘মনে হত, এখানে পুলিশ ক্যাম্প রাখা উচিত। এ বার আর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হবে না।’’

বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকার সুবিধা নিয়ে সঞ্জয়ের দলবল ঝামেলা করেন। আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করান।’’ বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবীর নাগ বলেন, ‘‘তৃণমূ‌ল সব জায়গাতেই জোর-জবরদস্তি করে। আদালত সঠিক বিচার করেছে।’’ এলাকার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের কথায়, ‘‘ওরা গণতন্ত্রকে হত্যা করে এক জন গরিব মানুষের জায়গা কেড়ে নিয়েছিল। হুগলিতে ওদের দলের এমন নেতা নেই, যাঁর কাছে উনি যাননি। কেউ কিছু করেননি। শেষে উনি আদালতে যান। আদালত সঠিক নির্দেশই দিয়েছে।’’ তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশও সঞ্জয়ের আচরণে অখুশি। দলের এক পুরনো কর্মীর কথায়, ‘‘ওই কার্যালয়ের জন্য অনুদান তুলে দিয়েছি। কিন্তু এখন আর ও-মুখো হই না।’’

কলেজে পড়ার সময় ছাত্র পরিষদের মাধ্যমে সঞ্জয়ের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৯৯ সালে কিছু দিনের জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি হন। পরে দলের যুব সংগঠনের পদেও ছিলেন। বর্তমানে তিনি পান্ডুয়া ব্লকে দলের জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি। পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতিও। গত কয়েক বছরে বারবারেই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। কখনও ব্লক অফিস চত্বরে গোলমাল, কখনও বিরোধীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে ছাপ্পার অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। আবার ভোটের দিন পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সঞ্জয় পথ অবরোধ করেন। পান্ডুয়ায় দলের গোষ্ঠী-রাজনীতিতেও বারে বারে তাঁর নাম উঠেছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলের জেলা নেতৃত্বের তরফে পান্ডুয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত, মন্ত্রী অসীমা পাত্রের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সঞ্জয় অন্যদের পিছনে ফেলে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ব‌নে যান।

দলীয় কার্যালয় ভাঙা নিয়ে কথার ফাঁকে সঞ্জয়ের স্বগতোক্তি, ‘‘দলের মধ্যেই আমার শত্রু আছে। তারাই হয়তো এ ভাবে আমার ক্ষতি করল।’’

TMC Politics Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy