Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল নেত্রীকে মারধর, ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত দলীয় কর্মীরাই

দিন কয়েক আগে তৃণমূ‌লের এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে মারধর এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল দলেরই কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। দু’ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে রবিবার হাসপাতাল‌ থেকে ছাড়া পান ওই নেত্রী। ওই রাতেই বাড়িতে চড়াও হয়ে ফের তাঁকে বেধড়ক মারধর এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

দিন কয়েক আগে তৃণমূ‌লের এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে মারধর এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল দলেরই কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। দু’ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে রবিবার হাসপাতাল‌ থেকে ছাড়া পান ওই নেত্রী। ওই রাতেই বাড়িতে চড়াও হয়ে ফের তাঁকে বেধড়ক মারধর এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল। বলাবাহুল্য, এ বারও অভিযোগের তির দলেরই কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।

শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিরাম নেই তারকেশ্বরে। দলের নীচু স্তরের কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও পদক্ষেপ করছেন না দলীয় নেতৃত্ব। ফলে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমেই বাড়ছে, যা গড়াচ্ছে থানা-পুলিশ পর্যন্তও।

জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দলের গোষ্ঠীকোন্দ‌ল কড়া হাতে মোকাবিলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও এর আগে নানা ঘটনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি কার্যত অস্বীকার করেছিলেন তাঁরা। সোমবার অবশ্য জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আগামী ৩০ জুলাই দলের জেলা কমিটির বর্ধিত সভা। সেখানে তারকেশ্বর, সিঙ্গুর এবং গোঘাটে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হবে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বার বার। তাঁর নির্দেশ যাঁরা অমান্য করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তারকেশ্বর ব্লকের আস্তারা-দত্তপুর, রামনগর, নাইটা-মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েতের নানা জায়গায় শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের একাধিক ঘটনা ঘটেছে বিধানসভা ভোটের পর থেকে। সম্প্রতি নাইটা-মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েতের তাজপুর গ্রামে পারিবারিক বিবাদের জেরে দু’পক্ষের মারামারি হয়। তৃণমূলের বুথ সভাপতিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গত ২২ জুলাই চাঁপাডাঙায় মাছের বাজার উদ্বোধনে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যাকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তুলকালাম বাধে। প্রতিবাদ করায় ওই সদস্যাকে মারধর এবং শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। পাল্টা মারধরের অভিযোগ আনে অপর গোষ্ঠী। ওই পঞ্চায়েত সদস্যাকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার তিনি ছাড়া পান। তাঁর অভিযোগ, রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দলের কিছু লোক তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। তিনি মেয়েকে নিয়ে শুয়েছিলেন। হামলাকারীরা তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বের করে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয়। গোটা ঘটনায় দলের পাঁচ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তারকেশ্বর থানায় এফআইআর করেছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে চাঁপাডাঙা অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েতের কর্মাধ্যক্ষ প্রভাত ওরফে লাল্টু চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই সদস্যা সাজানো অভিযোগ করছেন। রবিবার সন্ধ্যায় আমি দিঘা চলে যাই। আজ, সোমবার ফিরেছি। আসলে দলের ওই সদস্যা তোলাবাজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তার প্রতিবাদ করায় ফাঁসাতে চাইছেন।’’ নির্যাতিতা সদস্যা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তৃণমূল শিবিরের খবর, নির্যাতিতা মহিলা তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্তের অনুগামী বলে পরিচিত। হামলাকারীরা উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর ঘনিষ্ঠ। এ বিষয়ে উত্তমবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোথায় কী মারামারি হচ্ছে, আমার জানা নেই। আর আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠী নেই। কোথাও গোলমাল হলে তা দেখার জন্য পুলিশ আছে। তারাই ব্যবস্থা নেবে।’’ স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘যা বলার দলকে বলব। সংবাদমাধ্যমকে নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tarakeswar TMC beaten assaulted
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE