দলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা সন্ত্রাসের অভিযোগকে ঘিরে ত্রাহি-ত্রাহি রব শাসকদলের অন্দরেই।
দলের পরামর্শ মেনে হুগলির বাঁশবেড়িয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান সে অভিযোগ জানান থানায়। অভিযোগ হতেই ব্যবস্থা নেয় দল। পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ব্লক সভাপতিকে। নড়ে বসে পুলিশও। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী সতর্ক করে দেন তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে (রাজাবাবু)। পুরভোটের মুখে তৃণমূলের এই কোন্দলে বিরোধীদের হাসি চওড়া হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘বাঁশবেড়িয়া পুরসভায় কী হচ্ছে, শাসক দলই তা স্পষ্ট করে দিল।’’
পুরভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই বাঁশবেড়িয়া সরগরম হয়ে ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে সিপিএম ও বিজেপির সন্ত্রাসের অভিযোগে। প্রার্থীর বাড়িতে ভাঙচুর, বিরোধী নেতা-কর্মীদের এলাকাছাড়া করা, মারধর, বিরোধীদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারে বাধ্য করা—অভিযোগ ছিল নানা রকমের। পথে নামে সিপিএম, বিজেপি। থামেনি সন্ত্রাস।
২৮ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন, শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পুরসভার ২২টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে বিজেপি এবং সাতটিতে বামেরা প্রার্থী প্রত্যাহার করেন। বিরোধীরা কার্যত ময়দানছাড়া হতেই অভিযোগকারী বদলে যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটের ঘোষণা হতেই রাজাবাবুর গোষ্ঠী এলাকায় দলের নিচুতলার একাংশের মধ্যে রটিয়ে দিয়েছিল, তাঁর স্ত্রী শিল্পী চট্টোপাধ্যায় বাঁশবেড়িয়ার পরবর্তী পুরপ্রধান হবেন। রটনা কানে যেতে ক্ষুব্ধ হন বিদায়ী পুরপ্রধান রথীন্দ্রনাথ দাস মোদকের অনুগামীরা। তবে দল শিল্পীদেবীকে টিকিট দেয়নি।
রথীন্দ্রনাথ-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, এর পর থেকে দলেরই প্রার্থীদের হারাতে উঠে পড়ে লাগে রাজাবাবুর দলবল। নির্দল হিসেবে পাল্টা ‘প্যানেল’ দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। বাঁশবেড়িয়া জুড়ে চলতে থাকে সন্ত্রাসের বাতাবরণ।
রথীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, ‘‘এলাকায় যে ভাবে সন্ত্রাস চলছিল তা এই বয়সে মেনে নিতে পারছিলাম না। ৩৪ বছরের বাম-জমানা দেখেছি। কিন্তু এখানে দলের কিছু লোক যা করছিল, মানুষ তা বাম আমলেও দেখেননি।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘বাধ্য হয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাই। নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার ব্লক তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে দলেরই প্রচারে বাধা ও হুমকির অভিযোগ করেছি।’’ অভিযোগের সূত্রে এ দিন রাজাবাবুকে পদ থেকে সরিয়ে দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত।
অভিযোগ মানেননি রাজাবাবু। বলেছেন, ‘‘রথীনবাবু গুরুজন। প্রবীণ নেতা। আমি ওঁর প্রচারে বাধা দিলে আমার দলেরই ক্ষতি হবে। উনি কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তা জানি না।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি জানান, আপাতত বাঁশবেড়িয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। পুরভোট পর্যন্ত এলাকার বিধায়ক হিসেবে তিনিই দায়িত্ব সামলাবেন। এই ঘটনায় কি বিরোধীদের হাতে অস্ত্র চলে গেল না? জবাব দেননি তপনবাবু।
তবে বিরোধীরা বিঁধতে ছাড়ছেন না। জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি স্বপন পালের টিপ্পনী, ‘‘সময়মতো আমাদের করা সন্ত্রাসের অভিযোগগুলো মানলে এ ভাবে মুখ পুড়ত না শাসক দলের।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীরও মন্তব্য, ‘‘আগে ওঁদের (তৃণমূলের) বোধোদয় হলে, আমাদের অন্তত প্রার্থী প্রত্যাহার করতে হতো না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy