Advertisement
১১ মে ২০২৪
TMC leader

১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ অমিল, নেতাকে জুতোপেটা

ওই রাতেই অভিযুক্ত রমা সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জমায়েত: নেতা-নিগ্রহের প্রতিবাদে রবিবার গোঘাটের রয়ান গ্রামে একটি মাঠে জড়ো হয়েছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

জমায়েত: নেতা-নিগ্রহের প্রতিবাদে রবিবার গোঘাটের রয়ান গ্রামে একটি মাঠে জড়ো হয়েছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
গোঘাট শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ ০৬:১২
Share: Save:

লকডাউনের জেরে ধসে পড়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পেই ‘পাখির চোখ’ করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। অথচ, জবকার্ড থাকা সত্ত্বেও গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের একই পরিবারের চার জন-সহ পাঁচ শ্রমিক প্রায় দু’মাস ধরে কোনও কাজ পাচ্ছেন না। কাজের দাবিতে তাঁদের মধ্যে এক মহিলা শনিবার প্রধানের স্বামী তথা এলাকার তৃণমূল নেতাকে রাস্তায় জুতোপেটা করেন বলে অভিযোগ। তার জেরে তেতে ওঠে এলাকা।
ওই রাতেই অভিযুক্ত রমা সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার আগে একদল মহিলা রয়ান গ্রামে রমার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করে এবং লুটপাট চালায়। প্রধান মুনমুন রায়ের নেতৃত্বে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ রমার বাড়ির লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। প্রধানের স্বামী চঞ্চল রায়কে নিগ্রহের প্রতিবাদে রবিবার কুমরাগঞ্জে মিছিল করে তৃণমূল। তাতে শামিল হন প্রধান মুনমুন। তবে, গোটা ঘটনায় তৃণমূলকেই দুষেছে বিরোধীরা।

কেন পাঁচ শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন না ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে?

ভু্ক্তভোগী শ্রমিকদের মধ্যে তপন ঘোষ এবং সক্তাসক্ত ঘোষের দাবি, পঞ্চায়েতের কোনও পদে না-থেকেও চঞ্চল (তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি এবং বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য) ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজে খবরদারি করছেন। তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন। বিডিওকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলেও তাঁদের অভিযোগ।
বিডিও অভিজিৎ হালদার বলেন, ‘‘কেউ কাজ দাবি করলে দিতে হবে। ওই পঞ্চায়েত এলাকার সমস্যা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রধানের স্বামী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘প্রধানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি প্রকল্পটি দেখি। মাসদুয়েক আগে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ কম হচ্ছিল বলে শ্রমিকদের সতর্ক করেছিলাম। তাতে দেবায়ন সরকার (ধৃত রমার ছেলে) নামে এক শ্রমিক আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। অন্য শ্রমিক এবং সুপারভাইজাররাই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। শনিবার দেবায়নের মা আমাকে জুতোপেটা করেন। গ্রামবাসীরা এটা মানতে পারেননি।’’ প্রায় একই দাবি প্রধানেরও।

শনিবার ঠিক কী হয়েছিল?
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন বন্ধ থাকার পরে ফের রয়ান গ্রামের ওই পুকুরটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। সেইমতো গ্রামের দুর্গামন্দিরে শিবির করে কাজের আবেদনপত্র নেওয়া হচ্ছে।
ধৃত রমাও ওই প্রকল্পের শ্রমিক। তিনি শনিবার শিবিরে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘টানা লকডাউনে আমাদের পুরো পরিবার বিধ্বস্ত। ওখানে বলেছিলাম, ছেলে কাজ না পাক, আমি বা স্বামী কাজ পাব না কেন? চঞ্চলের লোকজন কোনও কথা শুনতে চাইলেন না। শিবির থেকে বের করে দিলেন।’’ চঞ্চলকে জুতোপেটা করার কথা স্বীকার করেছেন রমা। তিনি বলেন, ‘‘বিকেলে চঞ্চলকে রাস্তায় পেয়ে কাজ পাব না কেন জানতে চেয়েছিলাম। ও আমাকে চড় মারতে যায়। তখন মাথার ঠিক রাখতে পারিনি।’’
কাজ না-পাওয়া শ্রমিকদের এই ক্ষোভ সঙ্গত বলেই মনে করছে বিরোধীরা। বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে অনেক কাজের ক্ষেত্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সেই কাজ কাউকে করতে দেওয়া না হলে জুতো তো খেতেই হবে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অরুণ পাত্র বলেন, “তৃণমূল দলের চরিত্রের মধ্যে এটা তো আছেই। বিরোধী হলে তো
বটেই, দলেরও কেউ দুর্নীতি বা খবরদারির প্রতিবাদ করলেই কাজ বন্ধের বহু নজির আছে। এ বার সাধারণ মানুষ যতটা পারছেন প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC leader Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE