রাস্তায় নামেনি বাস।— নিজস্ব চিত্র।
‘অপরাধ’ তাঁরা বিরোধী প্রার্থীর এজেন্ট হয়েছিলেন। সে জন্য ওই দুই মালিকের বাস রাস্তায় নামতে দিল না তৃণমূল। এমনই অভিযোগ উঠেছে তারকেশ্বর ও পুরশুড়ায়।
পুরশুড়ার খুশিগঞ্জ-তারকেশ্বর রুটে চলা নিশীথ বাগুই নামে এক মালিকের বাস পুরশুড়ার কেলেপাড়ায় ‘আটকানো’ হয়। সেটি সেখানেই পড়ে আছে। আর এক মালিক স্বপন ঘোষের ৬টি বাস ‘আটকানো’ হয়েছে তারকেশ্বর নতুন বাসস্ট্যান্ডে। তারকেশ্বর থেকে দূরপাল্লার ৬টা বাস তাঁকে তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরে চালাতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্বপনবাবুর। পথে বাস না নামায় কাজ হারিয়ে স্রেফ বসে রয়েছেন অন্তত ৫০ জন মানুষ।
ওই দুই বাস মালিকের অভিযোগ, ‘‘শুধুমাত্র বিরোধী দলের নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ায় কেলেপাড়ারই বাসিন্দা ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি যশবন্ত ধোলে এবং কেলেপাড়া অঞ্চল সভাপতি অশোক বাগুইয়ের নেতৃত্বে বাসগুলো চালাতে দেওয়া হয়নি। ভোটের দিন বুথে দেখে বাস বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন। গণনার পরের দিন সকাল থেকে বাস বের করতে দেওয়া হল না।’’ শাসকদলের সমস্ত স্তরে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি জানিয়ে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে বসে আছেন। আমার তো ক্ষতি হচ্ছেই। সমস্যায় পড়ছেন পরিষেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। বিষয়টা নতুন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।’’ নতুন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী হিসেবে এখনও দায়িত্ব নিইনি। বাস বন্ধের বিষয়টা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
প্রায় ৩০ বছর হবে। বংশানুক্রমিক ভাবে পরিবহণ ব্যবসা করছে ঘোষ পরিবার। সঙ্গে আলুর ব্যবস্যাও করে এই পরিবার। তারকেশ্বর থেকে মোট ৬টি বাস চলে তাঁদের। তার মধ্যে পাঁচটি দূরপাল্লার। দু’টি খড়্গপুর, দু’টি বাঁকুড়ার খাতড়া, একটা বেলপাহাড়ির শিলদা এবং একটা খুশিগঞ্জ। স্বপনবাবুর প্রতিক্রিয়া,‘‘এমন অত্যাচারের মুখে কোনওদিন পড়িনি। আমিও তৃণমূল করতাম। কিন্তু অশোক বাগুই নামে এক তৃণমূল নেতা আমার ব্যবসার অনেক টাকা মেরে দিল। সেই টাকা চাইলে হুমকি দিচ্ছে। অনেকেরই আমার মতো এই হাল এখানে। তাই ক্ষোভে কংগ্রেসের এজেন্ট হলাম। এবার ওরা আমাকে বাসই চালাতে দিল না। দলের নেতাদের বলেছি।’’ অভিযুক্ত দুই নেতা যশবন্ত ধোলে এবং অশোক বাগুই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘পারিবারিক অশান্তির কারণে তাঁরা নিজেরাই গাড়ি বন্ধ করেছেন।’’ যদিও বাস বন্ধের ‘ফতোয়া’ নিয়ে পুরশুড়া এবং তারকেশ্বরে তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে। তারকেশ্বরের তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুণ্ডু বলেন, ‘‘বাস বন্ধ রাখা যাবে না। বিষয়টা পুরশুড়ার নেতাদের দ্রুত মিটিয়ে নিতে বলেছি।’’ পুরশুড়া তৃণমূল ব্লক সভাপতি জয়দেব জানা বলেন, ‘‘দল এ সব মেনে নেবে না। কেউ ব্যক্তিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিলে বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশন চুপ করে বসে থাকছে কেন!”
সংশ্লিষ্ট এক্সপ্রেস বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক সৌমেন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাস মালিক লিখিত ভাবে এখনও সংগঠনকে জানায়নি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সুষ্টু পরিবেশ বজায় রেখে যাতে বাস চলাচল ফের চালু করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।’’ পুরশুড়ার তৃণমূল বিধায়ক মহম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘‘ বাস মালিকেরা বিষয়টি রবিবার জানিয়েছেন। সম্ভবত ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার বসে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy