Advertisement
E-Paper

আত্মঘাতী ট্রেনের হকার

তপনবাবু ট্রেনে বাদামচাক বেচতেন। জিটি রোডের ধারে টালির ছাউনি দেওয়া টিনের ঘরে স্ত্রী মিনতিকে নিয়ে থাকতেন।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১১
তপন দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

তপন দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধ ট্রেন-হকারের ঝুলন্ত দেহ মিলল বৃহস্পতিবার রাতে। রিষড়ার বাঁশতলার বাসিন্দা, তপন দত্ত (৭২) নামে ওই বৃদ্ধের পরিবারের দাবি, লকডাউনের সময় থেকে তাঁর রোজগার কার্যত বন্ধ ছিল। সেই কারণে অবসাদে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। এই ঘটনা লকডাউন পরবর্তী সময়ে হকারদের দৈন্যদশা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

তপনবাবু ট্রেনে বাদামচাক বেচতেন। জিটি রোডের ধারে টালির ছাউনি দেওয়া টিনের ঘরে স্ত্রী মিনতিকে নিয়ে থাকতেন। দুই ছেলে অন্যত্র থাকেন। রোজকার মতো বৃহস্পতিবার রাতে কিছুটা দূরে ছোট ছেলের বাড়ি থেকে খাবার আনতে যান মিনতিদেবী। রাত সওয়া দশটা নাগাদ ফিরে দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ঘরে বাঁশের আড়া থেকে গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে স্বামীর দেহ। রিষড়া থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

তপনবাবুর ডান পা ভাঙা ছিল। প্লেট বসানো ছিল। হৃদরোগের সমস্যাও ছি‌ল। ওই অবস্থাতেই ট্রেনে হকারি করতেন। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ হওয়ায় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। পুত্রবধূ সুপর্ণা জানান, তপনবাবু সম্প্রতি আবার কাজে বেরোতে শুরু করেন। কিন্তু সে ভাবে বিক্রিবাট্টা হচ্ছিল না। তার উপরে, দিন কয়েক আগে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে পড়ে হাত-পায়ে চোট পান। তার পর থেকে বাড়িতেই ছিলেন। সব মিলিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। মিনতির কথায়, ‘‘হাতে টাকা না-থাকাতেই স্বামী এমন করলেন।’’

এ রাজ্যে ট্রেন কার্যত চলন্ত বাজার। বাদাম-চানাচুর, চা-মিষ্টি থেকে ঘরকন্নার অসংখ্য জিনিস ট্রেনেই মেলে। এর সঙ্গে বহু মানুষের রোজগার জড়িয়ে ছিল। কিন্তু লকডাউন তাঁদের কার্যত পথে বসিয়ে দেয় বলে অনেকের আক্ষেপ। হকারদের একাংশের বক্তব্য, ট্রেন চালু হলেও হকারদের ট্রেনে ওঠার অনুমতি মেলেনি। পেটের দাগিদে কেউ কেউ অবশ্য ট্রেনে উঠে এটা-ওটা বিক্রি করছেন। এক হকারের কথায়, ‘‘পেট চালাতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠছি। তবে, আগের মতো ভিড় নেই। বিক্রিবাট্টাও যৎসামান্য। করোনা সর্বনাশ

করে দিল।’’ রিষড়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর তাপস সরখেল বলেন, ‘‘হকারদের বিষয়ে রেলের ভাবা উচিত। রোজগার হারানো হকারদের জীবিকা চালাতে দেওয়া হোক। না হলে তপনবাবুর মতো পরিণতি অনেকের হবে।’’ জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের হুগলি জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ ফেলু জানান, অনটনের কারণেই মাস দুয়েক আগে মানকুণ্ডুর এক হকারও আত্মঘাতী হন। ফেলুর কথায়, ‘‘হকারদের দুর্বিষহ অবস্থা। কেউ উঠলে রেল পুলিশ জরিমানা করছে। অনেক প্ল্যাটফর্মে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। সংসারের কথা ভেবে হকারদের সুষ্ঠু ভাবে ব্যবসা করতে দেওয়া হোক।’’ ফেলু জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আরপিএফের কাছে দরবার করেছেন। রেল কর্তৃপক্ষের কাছেও সওয়াল করা হবে।

সমাজতত্ত্ব নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, পূর্ব বর্ধমানের কালনা গভর্নমেন্ট কলেজের এডুকেশনের শিক্ষিকা রাখি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কলেজে যাতায়াতে কয়েক ঘণ্টা ট্রেনে থাকতে হয়। হকাররা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন। লকডাউনে সেই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন ফের যাতায়াত শুরু করে দেখছি, আগের তুলনায় ১০ শতাংশ হকারও নেই। করোনা পরিস্থিতির খারাপ প্রভাব সরাসরি হকারদের জীবনে পড়েছে।’’

পূর্ব রেলের এক আধিকারিক জানান, হকারদের ট্রেনে উঠতে দেওয়ার কোনও ভাবনা এই মুহূর্তে নেই।

Rishra hawker Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy