Advertisement
E-Paper

পুকুর বাঁচাতে নেমে হুমকির মুখোমুখি জটু

বালির পরে শিবপুর। বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুন হয়েছেন এবং জলাভূমি রক্ষার আন্দোলনে নেমেই তাঁকে প্রাণ দিতে হয় বলে অভিযোগ। এ বার হাওড়ারই শিবপুরে পুকুর বোজানো ঠেকাতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়লেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ী। জটুবাবুর অফিসে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখানো, হুমকির দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁরই দল তৃণমূলের অন্য একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তপন-হত্যাতেও শাসক দলেরই অন্য একটি অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
রামতলা হাটপুকুরে এই পুকুরটিই বোজানো হচ্ছিল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

রামতলা হাটপুকুরে এই পুকুরটিই বোজানো হচ্ছিল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

বালির পরে শিবপুর। বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুন হয়েছেন এবং জলাভূমি রক্ষার আন্দোলনে নেমেই তাঁকে প্রাণ দিতে হয় বলে অভিযোগ। এ বার হাওড়ারই শিবপুরে পুকুর বোজানো ঠেকাতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়লেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ী।

জটুবাবুর অফিসে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখানো, হুমকির দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁরই দল তৃণমূলের অন্য একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তপন-হত্যাতেও শাসক দলেরই অন্য একটি অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার।

অনেকে বলছেন, শুধু দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর উৎপীড়নেই নেতা-নিগ্রহ থেমে থাকছে না। বরং প্রতিবাদ করলে ইদানীং দলের শীর্ষ স্তর থেকেও কোপ পড়ছে তৃণমূল নেতাদের ঘাড়ে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের কথা বলছেন তাঁরা। দলের একাংশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন স্বপনবাবু। তার জন্য দল থেকে সাসপেন্ড হতে হয়েছে তাঁকে। দলের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় এ বার জটুবাবুর কপালে কী নাচছে, সেই প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে।

কী হয়েছে শিবপুরে?

হাওড়া পুরসভা ও পুলিশ সূত্রের খবর, ওই শহরের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাটপুকুরে একটি পুকুর বোজানো হচ্ছিল। জটুবাবু তার প্রতিবাদ করেন। ঘটনাচক্রে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জটুবাবুর মেয়ে মুনমুন মুখোপাধ্যায়। গত শনিবার রামরাজাতলা এলাকার চৌধুরীপাড়ায় অম্বিকা কুণ্ডু লেনে বিধায়কের অফিসে ঢুকে কয়েক জন দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখায় এবং হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জটুবাবু। তাঁর অভিযোগ, হাওড়া পুরসভার এক মেয়র-পারিষদ এবং এক কাউন্সিলর ওই পুকুর ভরাটে মদত দিচ্ছেন। তাঁকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাতেও তৃণমূলের একাংশ জড়িত। বিধায়ককে হুমকি দেওয়া ও পুকুর বোজানোর প্রতিবাদে তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা রবিবার মিছিল বার করেন। ঘটনাস্থলে একটি অস্থায়ী অফিস ভাঙচুরও করা হয়।

জটুবাবুর বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন হাওড়ার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মেয়র-পারিষদ বিনোদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিধায়কের ক্ষমতা থাকলে অভিযুক্তদের নাম বলুন। এ ভাবে মেয়র-পারিষদদের অপমান করা যায় না। আমি অনেক আগেই ওই পুকুর বোজানোর প্রতিবাদ করেছি।”

বিধায়কের অভিযোগের প্রতিবাদ করেই থেমে যাননি বিনোদানন্দবাবু। জটুবাবুর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগও করেছেন ওই মেয়র-পারিষদ। তিনি বলেন, “বিধায়ক নিজেই প্রোমোটার। একাধিক পুকুর বোজানোয় ওই বিধায়কের মদত রয়েছে। স্বার্থে ঘা লাগায় এখন পুকুর বোজানো নিয়ে অভিযোগ করছেন উনি।” হাওড়া তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, নিজের লোক দিয়ে ওই পুকুর বোজাতে না-পেরেই বিষয়টি নিয়ে গোলমাল পাকাতে চাইছেন জটুবাবু। বিধায়ক অবশ্য এ-সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

জটুবাবু হাওড়ার রাজনীতিতে মন্ত্রী এবং দলের জেলা সভাপতি অরূপ রায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। আর মেয়র-পারিষদ বিনোদানন্দবাবু আছেন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে। দলের একাংশ তাই এই গোলমালকে জেলা রাজনীতিতে মন্ত্রী অরূপবাবু এবং তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লড়াই হিসেবেই দেখছে। ওই ঘটনার পরে অরূপবাবু স্বাভাবিক ভাবেই জটুবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অরূপবাবু বলেন, “পুকুর বোজানো দলের নীতিবিরুদ্ধ কাজ। তার প্রতিবাদ করেছেন বর্ষীয়ান নেতা জটুবাবু। তাঁকে আবার ভয় দেখানো হয়েছে।” বর্ষীয়ান নেতাকে শাসানির প্রতিবাদে দলীয় কর্মীদের মিছিলের কথা জানিয়ে অরূপবাবুর মন্তব্য, “পুলিশকে বলা হয়েছে। আশা করছি, দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।”

কিন্তু এই গোলমালের সঙ্গে জেলায় দলীয় কোন্দলের বিষয়টি যুক্ত বলে যে-অভিযোগ উঠছে, তা মানতে রাজি নন অরূপবাবু। তাঁর কথায়, “এটা ওঁদের (জটুবাবু আর বিনোদানন্দবাবু) ব্যক্তিগত ঝগড়া। তার সঙ্গে দল কোনও ভাবেই জড়িত নয়। তবে জটুবাবুকে ভয় দেখানোর ঘটনায় দলের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।”

howrah shibpur jatu lahiri tmc inter party clash over pond hatpukur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy