Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Blood

রক্তসঙ্কট, সাহায্যে শিবিরে সদ্য মাতৃহারা দুই ভাই

শিবিরের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অরূপ মাঝি বলেন, ‘‘এ বার কালীপুজোর আড়ম্বর কমিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করি। প্রায় ১৫ জন মহিলা-সহ ৬০ জন রক্তদান করেছে। সদ্য মাতৃহারা দুই ভাই যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে গ্রামবাসী উজ্জীবিত।’’ 

মানবিক: রক্তদান করছেন দু’ভাই। —নিজস্ব চিত্র।

মানবিক: রক্তদান করছেন দু’ভাই। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৮:২০
Share: Save:

করোনা আবহে রক্তসঙ্কট বাড়ছে হাওড়া জেলা জুড়ে। ব্লাডব্যাঙ্কেও ত্রাহি রব। সমস্যার কথা জেনে রবিবার শ্যামপুরের মরশাল গ্রামের সদ্য মাতৃহারা দুই ভাই এলাকার একটি শিবিরে গিয়ে রক্ত দিয়ে এলেন।

কালীপুজো উপলক্ষে গ্রামের একটি ক্লাবের উদ্যোগে শ্যামপুর মরশাল প্রাথমিক স্কুলে ওই শিবির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সাদা কাপড়, উত্তরীয় পরা গ্রামের বছর ছাপান্নর কানুচরণ জাসু এবং তাঁর ভাই অমিয়কে আসতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। দিন সাতেক আগে তাঁদের মা মারা গিয়েছেন। প্রথমে শিবিরের কেউই বুঝতে পারছিলেন না তাঁদের আগমনের হেতু। দুই ভাই নিজেদের ইচ্ছার কথা জানাতে সকলে প্রথমে চমকে গিয়েছেন। শেষে গ্রামবাসীরা অনেকেই উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন।

কানুচরণ কলকাতার একটি রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে কাজ করেন। অমিয় রাজমিস্ত্রি। কানুচরণ বলেন, ‘‘সময় পেলেই রক্তদান করি। শুনলাম রক্তসঙ্কট চলছে। গ্রামে শিবির হচ্ছে। মা মারা যাওয়ায় যেতে প্রথমটা ইতস্তত বোধ হচ্ছিল। পরে ভাবলাম যাওয়া উচিত। ভাইকেও রাজি করালাম। এতে মায়ের আত্মার শান্তি হবে।’’

শিবিরের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অরূপ মাঝি বলেন, ‘‘এ বার কালীপুজোর আড়ম্বর কমিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করি। প্রায় ১৫ জন মহিলা-সহ ৬০ জন রক্তদান করেছে। সদ্য মাতৃহারা দুই ভাই যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে গ্রামবাসী উজ্জীবিত।’’

হাওড়ায় দু’টি সরকারি এবং দু’টি বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক আছে। সব ক’টিতেই রক্তের আকাল দেখা দিয়েছে। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখান থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৪৫০ থ্যালাসেমিয়া রোগীকে রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সেই রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগীদের আত্মীয়দেরই রক্ত দিতে হচ্ছে বা রক্তদাতা আনতে হচ্ছে। লকডাউনের সময়ে রক্তের অভাবে অন্তত তিন জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।

উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৩০০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। সেখানে সপ্তাহে মাত্র ১৫০ ইউনিটের মতো রক্ত মিলছে। আমরা বারে বারে ক্লাব-সংগঠনগুলিকে শিবিরের কথা বলছি। করোনা পরিস্থিতিতে কিছু সংগঠন শিবির করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এই সঙ্কট। অনেকে আবার সংক্রমণের ভয়ে রক্তদান করছেন না। বিধি মেনে রক্তদান শিবির হলে ভয়ের কিছু নেই। তাতে রক্তের সঙ্কটও কমবে।’’

জেলায় কয়েকজন যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গ্রুপ’ তৈরি করে রক্তদান আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছেন।

তাঁদের মধ্যে রেজাউল করিম নামে এক যুবক বলেন, ‘‘লকডাউনের শুরু থেকেই আমরা রক্তের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি। রক্তদাতাকে সঙ্গে করে ব্লাডব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়েও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blood Shyampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE