Advertisement
E-Paper

বালিতে বাইক দুর্ঘটনা, মৃত্যু জামাই-শাশুড়ির

পুলিশ সূত্রের খবর, দু’নম্বর জাতীয় সড়কের ৭৯ নম্বর পয়েন্টের কাছে ডানলপমুখী রাস্তায় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৮ ০২:২৬
নিশ্চিন্দা থানা চত্বরে রয়েছে দুমড়ে যাওয়া মোটরবাইকটি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিশ্চিন্দা থানা চত্বরে রয়েছে দুমড়ে যাওয়া মোটরবাইকটি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

অফিস থেকে স্বামীর ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে চিন্তায় পড়েছিলেন স্ত্রী। আচমকাই স্বামীর নম্বর থেকে ফোন দেখে তাড়াহুড়ো করে তা ধরেছিলেন দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণী। উল্টো দিক থেকে অপরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে জানালেন, জাতীয় সড়কে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁর স্বামী ও মা!

বুধবার রাতে এমন ভাবেই বালির নিশ্চিন্দা থানা এলাকার দুই নম্বর জাতীয় সড়কে লরির সঙ্গে মোটরবাইকের সংঘর্ষে মৃত্যু হল জামাই ও শাশুড়ির। পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম সুরজিৎ দলুই (৩২) এবং তাঁর শাশুড়ির নাম অনিতা পাঁজা (৫৫)। দুর্ঘটনার পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের।

পুলিশ সূত্রের খবর, দু’নম্বর জাতীয় সড়কের ৭৯ নম্বর পয়েন্টের কাছে ডানলপমুখী রাস্তায় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিশ্চিন্দা থানা ও বালি ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, লরিটির মুখ রয়েছে ডানলপের দিকে। তার নীচে ঢুকে গিয়েছে মোটরবাইকটি। সেটির মুখ ডানকুনির দিকে। তদন্তকারীদের ধারণা, সুরজিৎ ওই একমুখী রাস্তায় নিয়ম ভেঙে উল্টো দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই দশ চাকার লরির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়েন সুরজিৎ। অনিতাদেবী লরির চাকায় জড়িয়ে আরও দূরে গিয়ে পড়েন। তদন্তকারীদের দাবি, লরিটি পিছন দিক থেকে ধাক্কা মারলে মোটরবাইকটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যেত না।

ওই যুবকের পরিবারের যদিও দাবি, হাওড়ার রামরাজাতলা থেকে অনিতাদেবীকে নিয়ে বালিতে আসছিলেন সুরজিৎ। তা হলে তিনি ডানলপমুখী রাস্তায় উল্টো দিকে যেতে গেলেন কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। প্রতিদিন যেহেতু জাতীয় সড়ক দিয়েই অফিসে যাতায়াত করতেন ওই যুবক, তাই রাস্তা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনাও কম। লরিটি আটক করেছে পুলিশ। চালক পলাতক।

রাতে জাতীয় সড়কের ওই সব এলাকা অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। সেখানে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। ফলে দু’-তিনটি রাস্তার মোড়ে গাড়ির আলোই একমাত্র ভরসা। আবার পথ নির্দেশিকা বোর্ডও পর্যাপ্ত নেই বলে অভিযোগ। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আলোর ব্যবস্থা করার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

সুরজিতের বাড়ি বালির মোহনলাল বাহাওয়ালা রোডে। তবে এক বছর আগে তিনি নিশ্চিন্দা থানা এলাকার ঘোষপাড়া পূর্বপাড়া এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সেখানেই তিনি স্ত্রী রুম্পাকে নিয়ে থাকতেন। বালির বাড়িতে তাঁর বাবা অশোকবাবু, মা পূরবীদেবী এবং বোন সুস্মিতা থাকেন। ঘটনার পরে মোহনলাল বাহাওয়ালা রোডের ওই বাড়িতে চলে আসেন রুম্পা। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন রুম্পা ও পূরবীদেবী। ওই যুবকের জ্যাঠা দিলীপবাবু জানান, ২০১৪-তে সুরজিতের বিয়ে হয়। তিনি ধূলাগড়ের একটি সংস্থায় চাকরি করতেন। রুম্পা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় অনিতাদেবী মেয়ের কাছেই থাকছিলেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘ছেলে ও বৌমা দু’জনে কষ্ট করে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাটটি কিনেছিল। বৌমা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।’’

সুরজিতের বোন সুস্মিতা জানান, ওই দিন সকালে অনিতাদেবীকে রামরাজাতলার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে অফিস গিয়েছিলেন ওই যুবক। রাতে শাশুড়িকে নিয়ে ফিরছিলেন। ওই তরুণী জানান, প্রতি মাসেই মাকে টাকা দিতে আসতেন সুরজিৎ। ওই রাতেও তাঁর বালির বাড়িতে আসার কথা ছিল। সুস্মিতা বলেন, ‘‘দাদা কোনও দিন জোরে বাইক চালাত না।’’

Bike accident Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy