Advertisement
E-Paper

দু’টি চুল্লিই অকেজো, শবদাহ নিয়ে সমস্যা ত্রিবেণী শ্মশানে

দু’টি বৈদ্যুতিন চুল্লি। যথাযথ সংস্কারের অভাবে দু’টিই অকেজো হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ত্রিবেণী শ্মশানে শব দাহ করতে এসে প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে শবযাত্রীদের। স্থান মাহাত্ম্যের কারণে বরাবরই হুগলির বাঁশবেড়িয়ার এই শ্মশানে শবদাহের বাড়তি চাপ থাকে। আশপাশের জেলা তো বটেই, এমন কী ভিন রাজ্য থেকে এনে এখানে শব দাহ করা হয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০০:২২
ত্রিবেণী শ্মশানের সেই বৈদ্যুতিন চুল্লি।—নিজস্ব চিত্র।

ত্রিবেণী শ্মশানের সেই বৈদ্যুতিন চুল্লি।—নিজস্ব চিত্র।

দু’টি বৈদ্যুতিন চুল্লি। যথাযথ সংস্কারের অভাবে দু’টিই অকেজো হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ত্রিবেণী শ্মশানে শব দাহ করতে এসে প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে শবযাত্রীদের।

স্থান মাহাত্ম্যের কারণে বরাবরই হুগলির বাঁশবেড়িয়ার এই শ্মশানে শবদাহের বাড়তি চাপ থাকে। আশপাশের জেলা তো বটেই, এমন কী ভিন রাজ্য থেকে এনে এখানে শব দাহ করা হয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে।

গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমে ত্রিবেণী শ্মশান ঘাট। আনুমানিক ৩০০ বছরের পুরনো এই শ্মশানে শুধু শবদাহ নয়, পূণ্যার্জনে তীর্থ করতে আসেন বহু পূণ্যার্থী। বাঁশবেড়িয়া পুরসভার অধীন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এই শ্মশানঘাটে আগে চিরাচরিত পদ্ধতিতে কাঠের চিতায় মৃতদেহ সৎকার হতো। ১৯৭৬ সালে পুরসভার পক্ষ থেকে প্রথম একটি বৈদ্যুতিন চুল্লি বসানো হয়। তার ফলে দূর দূর থেকে আসা শবযাত্রীরা তুলনায় অল্প সময়ে মৃতদেহ সৎকার করে ফিরে যেতে পারতেন। কিন্তু তাতেও চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করে অনেকেই কাঠের চিতায় শবদাহের কাজ সেরে ফিরে যেতেন। এই অবস্থায় একটি মাত্র বৈদ্যুতিন চুল্লির উপর চাপ কমাতে এবং শবযাত্রীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে ২০০৩ সালে দ্বিতীয় চুল্লি তৈরি করে পুরসভা। সেই থেকে দু’টি বৈদ্যুতিন চুল্লি এবং সাধারণ কাঠের চিতায় শবদাহ চলছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়ছে, সারা দিনে ২৫ থেকে ৩০টি মৃতদেহ সৎকার হয় এখানে। বৈদ্যুতিন চুল্লিতে শবদাহের খরচ কম হলেও অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী তিন নদীর সঙ্গমস্থলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বৈদ্যুতিন চুল্লিতে সৎকারের জন্য খরচ পড়ে ৬৫০ টাকা। কিন্তু কাঠের চিতায় খরচ প্রায় দ্বিগুণ, এগারোশো থেকে পনেরোশো টাকা। হুগলি ছাড়াও হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান, মেদিনীপুর, আসানসোল, ধানবাদ, ঝাড়খন্ড, বিহার এমনকী অসম থেকেও মৃতদেহ সৎকারের জন্য এই শ্মশানে আনা হয়।

কিন্তু যথাযথ সংস্কারের অভাবে মাস ছয়েক আগে একটি বৈদ্যুতিন চুল্লি খারাপ হয়ে যায়। চাপ বাড়তে থাকায় দিন কুড়ি আগে দ্বিতীয় চুল্লিটিও খারাপ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে মৃতদেহ সৎকার করতে এসে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শবযাত্রীদের। বিশেষ করে যাঁরা দূর থেকে আসছেন। কখনও কখনও মৃতদেহ দাহ করে ফিরতে দিন দুয়েক লেগে যাচ্ছে।

পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি শুভময় বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম চুল্লিটি যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে বিকল হয়ে গিয়েছিল। পুরসভার পক্ষ থেকে এক ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি কাজও করছিলেন। এরপর পুরভোটের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ওদিকে নজর দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় চুল্লিটিও খারাপ হয়ে যায় দিন কয়েক আগে। তবে পুরবোর্ড গঠন হলেই সবার আগে ওই চুল্লি দু’টি সারানোর ব্যবস্থা হবে।’’

ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা অসীম প্রামাণিক ঠাকুমার ইচ্ছানুসারে তাঁর মৃতদেহ ত্রিবেণী শ্মশানে এনেছিলেন। বললেন, ‘‘ঠাকুমা চেয়েছিলেন তিন নদীর সঙ্গমস্থলে যেন তাঁর দেহের সৎকার হয়। সেইমতো এখানে এনেছিলাম। এসে দেখি দু’টি চুল্লিই খারাপ। আগে জানা না থাকায় খুবই সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। বাধ্য হয়ে কাঠের চিতায় সৎকার করতে হল। খরচ তো বেশি হলোই। সময়ও এত বেশি লাগল যে একদিন এখানেই থেকে যেতে হল।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের বাসিন্দা তপন গুছাইতও মায়ের ইচ্ছানুযায়ী ত্রিবেণীর সঙ্গমে তাঁর মৃতদেহ সৎকারের জন্য এনেছিলেন। একই সমস্যায় পড়েন তিনিও।

tapas ghosh tribeni crematorium tribeni crematorium crisis crematorium furnace tribeni furnace
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy