Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া কর ১০ কোটি, মাথায় হাত পুরসভার

উন্নয়নের কাজে ভাঁড়ারে টান, অথচ কোটি কোটি টাকা পুরকর বকেয়া পড়ে রয়েছে। ১০ কোটিরও বেশি টাকার বকেয়া দেখে মাথায় হাত পড়েছে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া পরিচালন বোডের্র। ঘটনাটি উত্তরপাড়া পুরসভার। যাঁদের কর বাকি রয়েছে তাঁদের তালিকা তৈরি করে ইতিমধ্যেই নোটিস ধরানো হয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উত্তরপাড়ার মাখলা অঞ্চলের ইটভাটাগুলি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

উন্নয়নের কাজে ভাঁড়ারে টান, অথচ কোটি কোটি টাকা পুরকর বকেয়া পড়ে রয়েছে। ১০ কোটিরও বেশি টাকার বকেয়া দেখে মাথায় হাত পড়েছে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া পরিচালন বোডের্র। ঘটনাটি উত্তরপাড়া পুরসভার।

যাঁদের কর বাকি রয়েছে তাঁদের তালিকা তৈরি করে ইতিমধ্যেই নোটিস ধরানো হয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উত্তরপাড়ার মাখলা অঞ্চলের ইটভাটাগুলি। এছাড়াও পুরসভার নিজস্ব ভাড়া দেওয়া দোকানঘর, বাজার, এমনকী খেয়াঘাটে পুরসভার থেকে ভাড়া নেওয়া ঘরের করও মেটানো হয়নি দীর্ঘদিন।

প্রশ্ন উঠেছে, এই বিপুল পরিমাণ কর বাকি পড়ল কেন? কেনই বা এতদিন যাঁরা কর আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করেননি?

এই বিষয়ে পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘এতদিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? তার উত্তর আমার দেওয়ার কথা নয়। আমি এর আগে দায়িত্বেও ছিলামও না। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কর বাকি রেখেছেন তাঁদের চিহ্নিত করে পুর কতৃর্পক্ষের তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যেইে নোটিসের ভিত্তিতে বকেয়া কর জমা দিতেও শুরু করেছেন।’’

উত্তরপাড়া পুর কতৃর্পক্ষের নিজস্ব কিছু সম্পত্তি রয়েছে। যেগুলির ভাড়া থেকে পুর কর্তৃপক্ষের আয় হওয়ার কথা। সেই আয় পুর এলাকার উন্নয়নের কাজে লাগে। পুরসভার ভাড়া দেওয়ার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান ভবন, বাড়ি, বাজার, দোকান ঘর, খেয়াঘাট রয়েছে। যে সব ক্ষেত্র থেকে নিয়মিত ভাড়া আদায় করার কথা পুর কতৃর্পক্ষের। কিন্তু পুর কতৃর্পক্ষের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই মাসের পর মাস ভাড়া বাকি রেখে দিয়েছেন। ফলে পুর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আয়ে টান পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে পুর এলাকার উন্নয়নের কাজ।

পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় দু’দশক ধরে বকেয়া করদাতাদের নিয়মমাফিক পুর কতৃর্পক্ষের তরফে কোনও নোটিসই দেওয়া হয়নি। তার ফলে বছরের পর বছর ধরে কর বকেয়া থেকে গিয়েছে। পাশাপাশি, কর বকেয়ার ক্ষেত্রে পুর কতৃর্পক্ষের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও উঠেছে।

উত্তরপাড়ায় গত এক দশক ধরে একদিকে প্রমোটার এবং অন্যদিকে গৃহ নির্মাণের যথেষ্ট চাপ রয়েছে। পুর কতৃর্পক্ষ তদন্ত করে দেখেছেন, বকেয়া করের মধ্যে মূল্যায়ন হয়েছে এমন করের টাকার পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি। তেমনই আবার নির্মাণের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত পুর কতৃর্পক্ষের তরফে মূল্যায়ন করাই হয়নি এমন বকেয়া করের টাকাও বেশ কয়েক কোটি।

পুরসভা সূত্রের খবর, উত্তরপাড়ার মাখলা অঞ্চলে ২৪টি ইটভাটার বকেয়া করের পরিমাণ অন্তত এক কোটি টাকা। একই ভাবে হিন্দমোটরের সুপার মার্কেটের বকেয়া কর পুর কতৃর্পক্ষ যেমন দীর্ঘদিন পাননি তেমনই ভদ্রকালী সখের বাজারের ভাড়াও একইভাবে বাকি রয়েছে। খোদ উত্তরপাড়া পুরভবনের নীচের বেশ কিছু দোকান ঘরের ভাড়া বাকি রয়েছে দীর্ঘদিন। খেয়াঘাটের উপরে পুরসভার নিজস্ব ঘর ভাড়া দেওয়া রয়েছে বেশ কয়েক বছর। সেইসব ঘরেরও ভাড়া পান না পুর কতৃর্পক্ষ।

পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, পুর আইন অনুয়ায়ী পুরকর বাকি পড়লে প্রথমে সাদা, পরে হলুদ এবং একেবারে শেষ লাল নোটিস দেওয়ার কথা। কিন্তু এই নোটিস দেওয়া তো দূরের কথা, বকেয়া করের টাকা আদায়ে পুর কর্তৃপক্ষের কোনও উদ্যোগই চোখে পড়েনি এতদিন।

যদিও বর্তমান পুর বোর্ডের এক মেয়র-ইন-কাউন্সিল-এর বক্তব্য, অতীত দেখে কেউ যদি মনে করে থাকেন এর আগে যা চলতো এখনও সেই পরিস্থিতি থাকবে, তবে তিনি ভুল করবেন। বকেয়া কর আদায়ে প্রয়োজনে পুরসভা আইনের পথে যাবে।

বকেয়া কর আদায়ে উত্তরপাড়া পুর কতৃর্পক্ষ এখন কতটা সফল হন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE