পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ২৫০ জন। অথচ পরীক্ষায় বসার জন্য ফর্ম দেওয়া হচ্ছে ১০০জনের। ফলে ফর্ম-বিভ্রাটে পরীক্ষায় বসতে পারছেন না বাকি ১৫০ জন। এই সংখ্যাটা প্রতীকী মাত্র। সমস্যাটা অপ্রতুল ফর্ম বিলি ঘিরে। এর জেরে সমস্যায় পড়েছেন রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন আর প্রাইভেটে মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আর নেই। ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ —এই মুক্ত শিক্ষার নীতি নিয়েই রাজ্যে বিদ্যালয় সংসদ গঠিত হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয় এই সংসদের অধীনে। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া ‘ড্রপ আউটদের’ পরবর্তী শিক্ষার একমাত্র পথ এই মুক্ত বিদ্যালয়। এইসব কেন্দ্রের মাধ্যমে লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী ফি-বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকে বসেন। রাজ্যে এখন শতাধিক রবীন্দ্র মুক্ত পাঠকেন্দ্র রয়েছে।
সংসদের নিয়ম অনুসারে, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগে পরীক্ষার্থীদের জন্য পাঠকেন্দ্রের কর্মীরা বিকাশ ভবন থেকে ভর্তির ফর্ম কিনে আনেন। প্রতি পাঠকেন্দ্র থেকে মিলতে পারে সর্বাধিক ২৫০টি ভর্তির ফর্ম। যে সংখ্যাক পরীক্ষার্থীকে প্রস্তুত করানো যায়, সেই সংখ্যক ফর্ম নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, যে সংখ্যাক ফর্ম চাওয়া হচ্ছে, মিলছে তার থেকে কম। ফলে প্রস্তুতি সত্ত্বেও অনেক পড়ুয়াই পরীক্ষায় বসতে পারছেন না বলে অভিযোগ।
কিন্তু হঠাৎ কেন এমন অবস্থা?
বর্ধমানের একটি শাখার কো-অর্ডিনেটর বলেন,‘‘অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সেন্টার চালাচ্ছি। সংসদে এক দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলার অভিযোগ, আমরা ১০ হাজার ২০ হাজার টাকায় ফর্ম বিক্রি করি। এমন কখনও হয়নি। বিষয়টি সংসদের সভাপতি ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়-সহ মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিকাশ ভবনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয় থেকে সংসদের ভাল আয় হয়। কিন্তু সংসদেই কর্মী কম। ছাত্রছাত্রী বাড়লে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। সে কারণে যাতে কম পড়ুয়া ভর্তি হয়, তাই এমন ব্যবস্থা।’’
এর জেরে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে পাঠকেন্দ্রগুল। সংসদ বা সরকার পাঠকেন্দ্রগুলিকে অনুদান দেয় না। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার উপর কেন্দ্রের বাৎসরিক আয় নির্ভর করে। যা দিয়ে কেন্দ্রের খরচ চলে, শিক্ষকদের সাম্মানিক দেওয়া হয়। আর কেন্দ্র থেকে যদি কম পড়ুয়া পরীক্ষায় বসে, তাহলে ক্ষতিট কেন্দ্রেরই।
এমন সমস্যার কথা শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয়ে এখনও কয়েকজন মানুষ কার্যত বিনা পয়সায় শুধু পড়ানোর নেশাতেই পড়ান। আর বিকাশ ভবনে বসে কেউ যদি ভাবেন, ওই শিক্ষকরা অসৎ, সেটা তাঁর মতিভ্রম। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’’