শীতকালেই বর্ষার ছবি হাওড়ায়!
ফি বর্ষায় নর্দমা উপচে পাঁক-জল জমে থাকে রাস্তায়। কোথাও কোথাও তা ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যেও। এ বার শীতের শেষেই সেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাওড়া পুরসভার তিন নম্বর বরোর ১৯ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
এই পুরসভার পঞ্চাননতলা লেনের পাশেই বেলিলিয়াস লেন-সহ রামেন্দ্রপ্রসাদ মজুমদার লেন এবং হরিজন বস্তি এলাকা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ ধরে নর্দমার জল উপচে রাস্তা ভাসছে। কোনও কোনও বাড়িতেও ঢুকেছে জল। পূতিগন্ধময় সেই জলের মধ্যে দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। এক বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতি বছরই বর্ষায় জমা জলে ভোগান্তি হয়। কিন্তু শীতেও যে এই সমস্যা হবে, সেটা ভাবিনি।’’ আর এক বাসিন্দা সুবীর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। নর্দমা ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে আর রাস্তা ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। ফলে দুই কাউন্সিলর একে অপরকে দুষছেন।’’
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পুর কর্তারাও। যদিও তাঁরা মনে করছেন, এই সমস্যার পিছনে কারণ মূলত দু’টি। একটি সূত্রের মতে, ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা থেকে দীর্ঘ দিন পাঁক না তোলায় জল বেরোনোর রাস্তা বন্ধ হয়ে এই বিপত্তি। আর একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিন নম্বর বরোর নিকাশি-জল বেরোনোর জন্য কদমতলা থেকে একটি পাইপলাইন ইছাপুরের কাছে ড্রেনেজ ক্যানালে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু বাম আমলে শুরু হওয়া সেই কাজ আজও শেষ হয়নি। কারণ, কদমতলার কাছে ওই পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে বারবার রাস্তায় ধস নামছে এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। ফলে কাজ তো শেষ হচ্ছেই না, উল্টে মাঝেমধ্যেই নোংরা জল জমার সমস্যায় ভুগছে বেলিলিয়াস লেন এবং সংলগ্ন এলাকা।
তবে কারণ যা-ই হোক, জমা জলের কারণে এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে আর তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছেন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ব্রতেন দাস। তিনি বলেন, ‘‘পাঁক নিয়মিত না তোলার জন্যই এই দুরবস্থা। এলাকার লোককে আর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মেয়রকে সব জানিয়েছি।’’ অন্য দিকে, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ নর্দমার পাঁক না তোলার ফলে তা জমে মাটি হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে তাই আলাদা পাইপলাইন করে পাশের আশু বসু লেনে নালা বার করার চেষ্টা করছি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদের পাশাপাশি বরো চেয়ারম্যানদেরও তাঁদের এলাকার নিকাশি ব্যবস্থায় নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তার পরেও এই বিভ্রাট কেন? রথীনবাবু বলেন, ‘‘নিকাশি নালা তৈরি করতে গিয়ে বারবার ধস নামার কারণেই স্থায়ী সমাধান করা যাচ্ছে না। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই কাজ শেষ করতে।’’