Advertisement
E-Paper

রাস্তায় চরে শুয়োর-মোষ, স্বাস্থ্য পরিষেবা

সামনেই পুরভোট। নাগরিক সমস্যা প্রায় সর্বত্রই। কোথাও নল দিয়ে জল পড়ে না। কোথাও ফুটপাত বেহাল। কোথাও নিকাশি সমস্যায় মানুষ জেরবার। রয়েছে দূষণও। পুর এলাকাগুলিতে এমন সমস্যার দিকে নজর আনন্দবাজারের। আজ বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা।জনসংখ্যার ভিত্তিতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ভেঙে নতুন করে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডটি হয়েছে বছর তিনেক আগে।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০২:৩৫
অবহেলা: এলাকায় আবর্জনা সাফাই হয় না বললেই চলে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

অবহেলা: এলাকায় আবর্জনা সাফাই হয় না বললেই চলে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

দ্বারকেশ্বর নদ বয়ে গিয়েছে আরামবাগ শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে। নদের বাঁধ সংলগ্ন ক্ষেত্রপাল পাড়া, হরিজন পাড়ার রাস্তাই যেন খোলা খামার। রাস্তায় চরছে শুয়োর-মোষ। রাস্তা জুড়ে পড়ে পশু ও মানুষের মল। ওই একই ওয়ার্ডের পুলিশ ফাঁড়ি পাড়া, ইন্দিরাপল্লি, ফাঁসিবাগান, প্রফেসরপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাড়ার ডোবা-পুকুরে প্রায়ই মরা বেড়াল, কুকুর ছানা, মুরগির ছাল ফেলা হয়। পুরসভাকে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েও ফল হয়নি।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ভেঙে নতুন করে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডটি হয়েছে বছর তিনেক আগে। এখানের রবীন্দ্রপল্লি, ফাঁসিবাগান, তালারপার্ক এলাকায় শহরের বিশিষ্ট মানুষদের বসবাস। বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা বিমল ঘোষের অভিযোগ, “সারা বছর অস্বাস্থ্যকর থাকে গোটা পল্লি। রাস্তা সাফাই নিয়মিত হয় না। পরিবার পরিকল্পনা আর টিকাকরণ ছাড়া পুরসভার কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলে না।’’
পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ডেই অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর ছড়িয়ে রয়েছে। প্রয়োজন মতো রাস্তা নেই। নিকাশি নালাও নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে সারা বছর জ্বর লেগেই রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ৫ নম্বর ওয়ার্ড তালতলা বাজার পাড়ার শেখ রসিদ আলির অভিযোগ, “জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীন পুরসভা। ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়লে রবীন্দ্রভবনে ‘নাগরিক বৈঠক’ করা হয়। কাজ কিছুই হচ্ছে না।’’
স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং স্বাস্থ্যবিধান সংক্রান্ত কাজ নিয়ে আরামবাগ পুরসভার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। পুরসভা ভোটের আগে তা নিয়ে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বসন্তপুরের রামকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডের পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা তৈরি এবং বিপদের ঝুঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলিকে বিপদমুক্ত করার কথা। কিন্তু কিছুই হয়নি।” ৯ নম্বর ওয়ার্ড নওপাড়ার শেখ সওকত বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দের খবর কারও জানা নেই। বাম আমলে প্রতি বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ হত। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে সেই পাট তুলে দিয়েছে।’’
জনস্বাস্থ্য মোকাবিলায় পুরসভার দুর্বল পরিকাঠামো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদেরও অনেক ক্ষোভ আছে। পুরসভা সূত্রে খবর, জা শহরের জনসংখ্যা অনুযায়ী চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীর অভাব আছে। এমনিতেই বিভিন্ন পাড়ায় নিয়মিত নজরদারি এবং পরিদর্শন হয় না। তারউপর শাসক দলের মিমিছিলে স্বাস্থ্যকর্মীদের যেতে বাধ্য করা হয়। এই অবস্থায় বাম আমলে যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেই স্টুডেন্ট হেলথ হোম থেকে পরিষেবা দানও বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা বোর্ডের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে পুরসভার নিজস্ব ব্যবস্থা বলতে আছে চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এবং চাঁদুরে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। যদিও ঠিকাকরণ ও পরিবার কল্যাণ পরিষেবা নেওয়া বাদে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যেও ভিড় হচ্ছে মহকুমা হাসপাতালে।
কেন এত অবহেলিত জনস্বাস্থ্য? পুরপ্রধান স্বপন নন্দী বলেন, “সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ঢেলে সাজা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধান মেনে চলতে আমরা মানুষকে সচেতন করছি। বাঁশি বাজিয়ে প্রতিটি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছি। তারপরেও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। তবে টিকাকরণে আমরা রাজ্যের এক নম্বরে আছি।”

Municipal Election 2020 Arambag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy