Advertisement
E-Paper

এমন জটে মুমূর্ষুর দায় নেবে কে!

চাকরি সূত্রে রাতে বাড়ি ফেরাই অভ্যেস। পথে যানজট বা অন্য রকমের হয়রানিও কম হয় না। তা বলে রাত সাড়ে ১২টায় কলকাতা থেকে বেরিয়ে আন্দুল পৌঁছতে সাড়ে তিনটে বাজবে, ভাবিনি। শুক্রবার সেটাই হল।

মোনালিসা ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৩

চাকরি সূত্রে রাতে বাড়ি ফেরাই অভ্যেস। পথে যানজট বা অন্য রকমের হয়রানিও কম হয় না। তা বলে রাত সাড়ে ১২টায় কলকাতা থেকে বেরিয়ে আন্দুল পৌঁছতে সাড়ে তিনটে বাজবে, ভাবিনি। শুক্রবার সেটাই হল।

অফিসের গাড়ি নিয়ে বাড়ির পথে যখন রওনা হলাম তখন ১২টা ৪০। দেখি, আন্দুল রোডে ঢোকার মুখে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি। রাস্তার মুখে দুই পুলিশকর্মী গাড়িগুলিকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন।

আন্দুল রোডের সরু রাস্তায় ভারী গাড়ির জট নিত্য সমস্যা। ভেবেছিলাম, জট কাটাতেই হয়তো ভারী গাড়ি অন্য পথে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু আটকানো হল আমার গাড়িও। পুলিশকর্মীরা জানালেন, রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। আন্দুল যেতে হবে অন্য পথে।

আমার বাড়ি যেতে আন্দুল রোডই সুবিধাজনক। না হলে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে উনসানি বা আলমপুর হয়ে যাওয়া যায়। তাতে সময় লাগে বেশি। বাধ্য হয়ে সেই রাস্তাই ধরলাম।

আমার গাড়ির পিছনেই ছিল অ্যাম্বুল্যান্স। বছর চল্লিশের এক মহিলা ভাঙা হাতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। তাঁর স্বামী পুলিশকর্মীদের অনুরোধ করেন যদি আন্দুল রোডের একটি নার্সিংহোমে যেতে দেওয়া যায়। অনুমতি মেলেনি।

কপালে যে আরও দুর্গতি ছিল, বুঝিিন আমরা।

কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ট্রেলার, দশ চাকার বড় ট্রাক, পণ্যবাহী গাড়ি, দূরপাল্লার বাস। দাঁড়িয়ে পড়লাম। ঘড়িতে তখন ১টা ১৫। চাকা গড়ানোর জায়গা নেই। অন্য কয়েকটি গাড়ির আরোহীদের থেকে জানা গেল, তাঁরা আধঘণ্টা এ ভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যাওয়া ও আসার দু’টি ভিন্ন লেন রয়েছে। ফলে, ওই রাস্তায় একবার ঢুকে গেলে বেরনো সহজ নয়। অ্যাম্বুল্যান্স ঘোরাতে গিয়ে আহতের আত্মীয়েরা দেখলেন, পিছনে এসে গিয়েছে দুটো ট্রেলার। অত রাতে, অমন জটে একজন পুলিশকেও কিন্তু রাস্তায় দেখতে পাইনি। একটি অ্যাম্বুল্যান্সকে বের করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। ১৫ মিনিট চেষ্টা করে একটি ‘কাট-আউট’ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পেরেছিল অ্যাম্বুল্যান্সটি। আন্দুলের নার্সিংহোমের আশা ছেড়ে কলকাতার হাসপাতালই তখন লক্ষ্য।

প্রশ্ন হল, ওই অ্যাম্বুল্যান্সে যদি হাতভাঙা এক মহিলার বদলে থাকতেন মুমূর্ষু কোনও ব্যক্তি! ওই জটযন্ত্রণা তাঁর সহ্য হত তো? কে নিতেন জীবনের দায়! উত্তর মেলেনি।

সাঁতরাগাছি সেতুর কাছে গাড়ি যখন পৌঁছল, তখন ঘড়িতে ২টো ২০। তার মধ্যে মেদিনীপুরগামী দূরপাল্লার বাস থেকে গোটা ২০ যাত্রীর গলা শোনা গেল। রাস্তায় নেমে তাঁরা বলছেন, ‘‘ভোরের প্রথম লোকাল ধরে এর আগে বাড়ি পৌঁছে যাব।’’

বাড়িতে তখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বাবা, মা। আমার মনে হচ্ছে, এই জটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বুঝি ভোরের আলো দেখতে পাব।

গাড়ি গতি পেল সাঁতরাগাছি স্টেশন পেরনোর পর। বাড়ি যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়িতে ৩টে ২০।

পরে জেনেছি, ১৩ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে দেড় কিলোমিটার অংশে জলের পাইপ বসানোর কাজ চলছিল। হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য পুরো রাস্তা বন্ধ রাখা হল কেন? বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারল না প্রশাসন?

Bus Traffic Patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy