Advertisement
১৬ মে ২০২৪
মাকে পুড়তে দেখল ছেলে

শ্বশুর চেপে ধরে, স্বামী কেরোসিন ঢালল, ছেলের চোখের সামনে পুড়ল মা

মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল চার বছরের ছেলের। বাইরে বেরিয়ে রান্নাঘরের সামনে এসেই থমকে দাঁড়িয়েছিল সে। দরজার আড়াল দিয়ে দেখল, দাদু মা’কে চেপে ধরে রেখেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০০:৩০
Share: Save:

মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল চার বছরের ছেলের। বাইরে বেরিয়ে রান্নাঘরের সামনে এসেই থমকে দাঁড়িয়েছিল সে। দরজার আড়াল দিয়ে দেখল, দাদু মা’কে চেপে ধরে রেখেছে। আর বাবা কেরোসিনের জার উপুড় করে ঢেলে দিচ্ছে মায়ের উপরে। তার পরেই দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে চিৎকার আরও বেড়ে গেল মায়ের।

শুক্রবার গভীর রাতে হাওড়ার মালিপাঁচঘড়া থানা এলাকার ঘুসুড়িতে এ ভাবেই দাদু আর বাবার হাতে তার মাকে খুনের চেষ্টার দৃশ্য দেখল বছর চারের আরভ জায়সবাল। পরে পুলিশ এসে ওই বধূকে হাওড়ার জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন মীনা জায়সবাল নামে ওই গৃহবধূ। এ দিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই পলাতক মীনার স্বামী নীতীশ জায়সবাল। তবে তাঁর শ্বশুর জয়প্রকাশ জায়সবালকে আটক করেছে পুলিশ। হাও়ড়া সিটি পুলিশ সূত্রের খবর, আগেই বধূ নির্যাতনের মামলা করেছিলেন মীনার বাপের বাড়ির লোকজন। শুরু হয়েছিল তদন্তও। তার মধ্যেই এই ঘটনা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে লোহার পাইপ বিক্রেতা ঘুসুড়ির জে এন মুখার্জি রোডের বাসিন্দা নীতীশ‌ের সঙ্গে দেখাশোনা করেই বিয়ে হয়েছিল পোস্তার বাসিন্দা মীনার। অভিযোগ, বিয়ের সময়ে মোটা টাকা পণ নিলেও ছ’মাস পর থেকেই আরও টাকার দাবি করতে শুরু করে নীতীশ। সে জন্য শারীরিক নির্যাতনও চালানো হত মীনার উপরে। ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজনের আরও অভিযোগ, বিয়ের পরেই তার দোকান বন্ধ করে দেয় নীতীশ। তবে জুয়া খেলা, নশা সবই চলতে থাকে। এক সময়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা না পেয়ে স্ত্রীর বিয়ের গয়নাও সে বেচে দিয়েছিল বলে অভিযোগ মীনার পরিবারের।

শনিবার মীনার ছোট বোন রূপা বলেন, ‘‘দিদির উপরে খুব অত্যাচার হত। এক সময়ে ব্যবসার নামে মিথ্যে কথা বলে আমার বাবা, মা, আর এক জামাইবাবুর থেকে টাকা নিতে শুরু করেছিল নীতীশ। সব জানতে পেরে টাকা বন্ধ করে দিতেই ফের মারধর শুরু হয়ে যায়।’’ মীনার পরিবারের আরও অভিযোগ, ছেলে আরভকে স্কুলে ভর্তি করা হলেও ফি জমা দিত না নীতীশ। ফলে এক সময়ে স্কুল থেকে নামও কেটে দেওয়া হয়েছিল শিশুটির। অত্যাচার চরমে পৌঁছলে সপ্তাহ দুয়েক আগে মালিপাঁচঘড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে বাপের বাড়ি চলে যান মীনা। কিন্তু তার পর থেকে রোজ ফোন করে ক্ষমা চেয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করতে থাকে নীতীশ।

এ দিন থানায় দাঁড়িয়ে রূপা জানান, মীনা ফিরতে রাজি না হওয়ায় শেষ তিন-চার দিন ধরে ফোন করে বিবাহ বিচ্ছেদের হুমকি দিতে শুরু করে নীতীশ। শেষে শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ ছেলেকে নিয়ে ঘুসুড়িতে ফিরে আসেন মীনা। অভিযোগ, ফেরার পর থেকেই তাঁর উপরে অত্যাচার শুরু করেন নীতীশ ও জয়প্রকাশ। তাঁকে খেতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ।

এ দিকে হাসপাতালে দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন মীনা জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত দু’টো নাগাদ শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে স্বামী ও শ্বশুর আচমকা তাঁকে চেপে ধরে টেনে রান্না ঘরে নিয়ে যায়। চিৎকার শুরু করলে মুখ চেপে ধরা হয় এবং তাঁর গায়ে কেরোসিন তেল গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেই পালিয়ে যায় নিতীশ।

শনিবার হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘটনার পরে রাত তিনটে নাগাদ নীতীশই রূপাকে ফোন করে জানায় যে মীনা গায়ে আগুন দিয়েছে। খবর পেয়েই রূপা সোজা ফোন করেন মালিপাঁচঘড়া থানায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ নীতীশের বা়ড়িতে পৌঁছয় এবং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মীনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মীনাকে উদ্ধারের সময়েই তাঁর শ্বশুর জয়প্রকাশকে আটক করা হয় বলে জানায় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wife accused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE