প্রহৃত: দীপা বড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র
খাবারের দোকানের খোঁজ করতে গিয়ে শেষে গণপিটুনির শিকার হলেন এক মহিলা। অভিযোগ, ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে তাঁকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করল উত্তেজিত জনতা। কেড়ে নেওয়া হলো তাঁর টাকা-পয়সা। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হল পুলিশও। ঘটনাস্থল সেই হাওড়া।
গত মঙ্গলবার পর পর তিনটি ঘটনা পিটুনির ঘটনা ঘটে হাওড়া সিটি পুলিশের এলাকায়। ফের বুধবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ টিকিয়াপাড়া এলাকার বেলিলিয়াস রোডে একই ঘটনা। পুলিশ জানায়, দীপা বড়ুয়া নামে ওই মহিলা হলেন কোন্নগরের বাসিন্দা। এক সময় বিউটিপার্লারের কর্মী দীপাদেবী বর্তমানে বেকার। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিউটিশিয়ানের কাজ করেন। ঘটনার রাতে টিকিয়াপাড়ায় কাজের সন্ধানে এসেছিলেন তিনি। স্থানীয় একটি বেকারির সামনে রুটি কিনতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁকে ছেলেধরা সন্দেহ করে শুরু হয় মার। এমনকি তাঁকে শারীরিক ভাবেও ‘নিগ্রহ’ করা হয় বলে অভিযোগ।
খবর পেয়ে হাওড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিলাকে মারমুখী জনতার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। তাতে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। ইটবৃষ্টি শুরু হয় পুলিশের উপরে। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। দফায় দফায় লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। সেইসঙ্গে ৪ রাউন্ড কাদানে গ্যাসও ছোঁড়ে পুলিশ। সারা রাত গোলমাল চলার পরে ভোরের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বৃহস্পতিবার অবশ্য মহিলাকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। দীপাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের করে। গ্রেফতার করা হয় দুই ব্যক্তিকেও।
হাওড়া সিটি পুলিশ জানায়, গত দেড় মাসে সাতটি গনপিটুনির ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘প্রত্যেক থানাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় ক্লাব ও বাসিন্দাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে এলাকায় সচেতনতা ক্যাম্প করতে। লিফলেট বিলি, মাইক প্রচার জারি রাখতে।’’ প্রতিটি ঘটনাতেই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
বুধবার রাতে টিকিয়াপাড়ায় আক্রান্ত দীপাদেবীর অভিযোগ, তাঁর কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেওয়া হয়। রুটির বেকারির ভিতরে আটকে রেখে তাঁকে মারধর করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ দিন হাওড়া থানায় বসে ওই মহিলা বলেন, “ ওরা আমাকে শুধু মারধরই করেনি, অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেছে, এমনকি আমার গায়েও হাত দিয়েছে। আমার সঙ্গে থাকা বাড়ি তৈরির ১০হাজার টাকাও ছিনতাই করেছে।’’ মহিলা জানান, অত্যন্ত অভাবের মধ্যে তাঁকে সংসার চালাতে হয়। টাকার অভাবে তাঁর সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হতে বসেছে।
পুলিশ জানায় দীপাদেবীকে উদ্ধার করে আনার সময়ে উন্মত্ত জনতা রাস্তা ছাড়াও ছাদের উপর থেকে পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়তে থাকে। উত্তেজিত জনতা একটি অ্যাপ-ক্যাব ভাঙচুর করে। রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের পদস্থ কর্তারা। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়।
বৃহস্পতিবার দীপাদেবীকে নিয়ে যেতে তাঁর ছেলে আকাশকে সঙ্গে নিয়ে হাওড়া থানায় এসেছিলেন দীপাদেবীর মা গায়ত্রীদেবী। গায়ত্রীদেবীর কথায়, ‘‘হরিপালের আশ্রমে এক টুকরো জমি পেয়েছি। সেখানে ঘর তৈরির জন্য মেয়ের কাছে ১০হাজার টাকা ছিল। সেই টাকা ছিনতাই করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy