Advertisement
E-Paper

ফের চুঁচুড়ায় ছুরি মেরে মহিলা খুন

রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় এ বার প্রাক্তন স্ত্রীকে নিজের পৈতৃক বাড়িতে ডেকে এনে পেটে মাংস কাটার ছুরি ঢুকিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০২:২২
উত্তেজিত জনতার ভিড় ঘটনাস্থলে। ছবি: তাপস ঘোষ

উত্তেজিত জনতার ভিড় ঘটনাস্থলে। ছবি: তাপস ঘোষ

এক সপ্তাহের মধ্যে ফের মহিলা খুন হুগলির জেলাসদর চুঁচুড়ায়।

রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় এ বার প্রাক্তন স্ত্রীকে নিজের পৈতৃক বাড়িতে ডেকে এনে পেটে মাংস কাটার ছুরি ঢুকিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনায় মদত দেওয়ায় অভিযুক্ত যুবকের মা।

বৃহস্পতিবার সকালে চুঁচুড়ার ইমামবাজার এলাকায় এই খুনের ঘটনায় নিহতের নাম রোজিনা খাতুন(৩০)। পুলিশ জানিয়েছে, রোজিনার প্রাক্তন স্বামী, অভিযুক্ত শেখ রাজু এবং তার মা রাবিয়া বিবি পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। খুনে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে।

হুগলিঘাট স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা রেহেনা বিবি বহু বছর আগে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন রোজিনাকে। তিনিই তাঁকে মানুষ করেন। বছর দশেক আগে পালিত মেয়ের সঙ্গে রাজুর বিয়ে দেন। রাজু এলাকার একটি মাংসের দোকানে কাজ করত। এ দিন মেয়ে খুন হওয়ার কথা শুনে রেহেনা বলেন, ‘‘রাজুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর মেয়ে ওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখত না। রাজুই ওকে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করত। আমি রোজিনাকে বলেছিলাম, প্রতিবাদ করার দরকার নেই। ওরা পরিকল্পনা করেই ফোনে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে খুন করল। আমি জানতে পারলে যেতে দিতাম না। ওদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজু-রোজিনার দুই মেয়ে। সাংসারিক অশান্তির জেরে বছর তিনেক আগে দম্পতির বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। রাজু অন্যত্র বিয়ে করে পাঙ্খাটুলি এলাকায় বসবাস শুরু করে। রোজিনা দুই মেয়েকে নিয়ে মায়ের কাছে ফিরে যান। অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে রাজু প্রাক্তন স্ত্রীকে রাস্তায় দেখলেই কটূক্তি ও গালিগালাজ করছিল। কয়েকদিন আগে রোজিনা তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে রাজুর পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে সব জানান। এ নিয়ে রাজুর পরিবারের অশান্তি শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে রোজিনাকে ফোন করে রাজু তার পৈতৃক বাড়িতে আসতে বলে। সেইমতো বেলা ১১টা নাগাদ রোজিনা তাঁর পড়শি নার্গিস বিবিকে সঙ্গে নিয়ে ইমামবাজারে রাজুর পৈতৃক বাড়িতে যায়। বাড়িতে তখন শুধু রাজু এবং তার মা ছিল। রাজু প্রাক্তন স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে যায়। নার্গিস অবশ্য ওই বাড়ির উল্টো দিকে, রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন।

ঘ্ণ্টাদেড়েক অপেক্ষা করার ফাঁকে নার্গিস কয়েক মিনিটের তফাতে ওই ঘর থেকে রাজু এবং তার মাকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন। কিন্তু তখনও তাঁর কোনও সন্দেহ হয়নি। ও দিকে, দীর্ঘক্ষণ মেয়ে না-ফেরায় চিন্তিত হয়ে পড়েন রেহেনা বিবি। তিনি নার্গিসকে ফোন করে ইমামবাজার যাওয়ার কথা জানতে পারেন। তখনই নাতনি মুসাকাকে সেখানে পাঠান। রোজিনা না-বেরোনোয় মুসাকা ও নার্গিস চেঁচামেচি শুরু করেন। আশপাশের লোকজনও চলে আসেন। সকলে মিলে দরজা ঠেলে খুলতেই ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় রোজিনাকে পড়ে থাকতে দেখতে পান।

তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
খুনের কথা এলাকায় জানাজানি হতেই ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালায় জনতা। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। বাড়ির কাছেই রাস্তার ধার থেকে খুনে ব্যবহৃত ছুরিটি মেলে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, রোজিনার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে। যাতে কেউ তাঁর চিৎকার শুনতে না পান।

নার্গিস বলেন, ‘‘রোজিনা অনেকক্ষণ ধরে না বেরোনোয় সন্দেহ হচ্ছিল। কিন্তু ডাকতে সাহস পাচ্ছিলাম না। ভেবেছিলাম, ওদের গোলমাল যদি মিটে যায়, সেটাই ভাল। রাজু বা ওর মা বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও কিছু বুঝতে পারিনি। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সব ঘটনা সামনে এল।’’
গত শুক্রবার চুঁচুড়ায় জেলাশাসকের দফতরের সামনে এক মহিলা তাঁর স্বামীর সামনেই খুন হন। অভিযোগ ওঠে তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে। এ বার প্রকাশ্যে না হলেও ফের জেলাসদরে মহিলা খুন হলেন।

Crime Murder Hooghly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy